'স্মার্ট বাংলাদেশ'-এর নামে ক্ষমতাসীনেরা এবার স্মার্ট লুটপাটের বাজেট দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি অভিযোগ করেন, এ সরকার ভোট চুরি, ব্যাংক চুরি, অর্থ চুরিতে স্মার্ট। তাই স্মার্টলি লাখো কোটি টাকা দুর্নীতির, জনগণের সম্পদ লুটের এবং সিন্ডিকেট পরিচালনার বন্দোবস্ত করা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে।
প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে বিএনপি আজ বুধবার দুপুরে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়। সেখানে মির্জা ফখরুল ইসলাম এ মন্তব্য করেন। ১ জুন জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ বাজেট উপস্থাপন করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই বাজেটে দেশের চরম অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণের এবং সর্বগ্রাসী দুর্নীতি ও অর্থ পাচার প্রতিরোধে কোনো দিকনির্দেশনা নেই। ফলে এই বাজেট ক্ষমতাসীনদের বলয়ের বাইরে সাধারণ মানুষের অনুকূলে কোনো ভূমিকা রাখবে না। তিনি এই বাজেটকে 'বাস্তবতাবিবর্জিত, প্রতারণামূলক, লোকদেখানো' বাজেট বলে আখ্যা দেন।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, সরকার শিক্ষার কথা বলে, অথচ দাম বাড়ায় কলমের। ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলে দাম বাড়ায় ল্যাপটপ-মোবাইল ফোনের। গরিবের কথা বলে অথচ পরোক্ষ কর আরোপ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ওপর। এটি স্পষ্টতই জনগণের সঙ্গে প্রতারণা। বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি, বিনিয়োগসহ সামষ্টিক অর্থনীতির যেসব প্রক্ষেপণ করা হয়েছে, তা অর্জনযোগ্য নয়।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, দেশের চরম অর্থনৈতিক সংকটের সময়ে প্রয়োজন ছিল দল-মত ও ব্যক্তির স্বার্থের ঊর্ধ্বে গিয়ে সাহসী ও বাস্তবসম্মত বাজেট প্রণয়ন। কিন্তু মোটাদাগে এই বাজেট আইএমএফের (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) শর্ত বাস্তবায়ন এবং বিগত অর্থবছরের বাজেটের ১৪-১৫ শতাংশ বর্ধিত অবস্থা ছাড়া কিছুই নয়। তিনি বাজেটে মুদ্রাস্ফীতি, বাজেট ঘাটতি, রাজস্বপ্রাপ্তি, আয়বৈষম্য, করারোপে বৈষম্য, অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের বোঝা, বাজেট বাস্তবায়নের অসম্ভাব্যতা, সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কৃষি খাতে বরাদ্দের সঙ্গে বাস্তবতার বিশ্লেষণ তুলে ধরেন। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কৃষি খাতে বাজেটে বরাদ্দ কমানোর কঠোর সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল।
সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়েনি উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, বাজেট ও জিডিপির অনুপাতে এই খাতে বরাদ্দ কমেছে। বরাদ্দ বেশি দেখানোর কৌশল হিসেবে এই খাতে এমন কিছু কর্মসূচি দেখানো হয়েছে, যা বাস্তবে সামাজিক নিরাপত্তা সুরক্ষা কর্মসূচি নয়। এ ছাড়া কৃষি খাতে ভর্তুকি, সঞ্চয়পত্রের সুদ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের দেওয়া প্রণোদনার টাকাকেও সামাজিক নিরাপত্তা বরাদ্দ হিসেবে দেখানো হয়েছে বয়স্ক নারী-পুরুষ, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ও প্রতিবন্ধীদের মাসিক ভাতা মাত্র ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে ঢাকায় প্রতিবন্ধীরা বিক্ষোভ করেছেন, পুলিশের পিটুনি খেয়েছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, গণতান্ত্রিক সরকার না থাকলে সরকারের জবাবদিহি থাকে না। দেশের অর্থনীতির জন্য কল্যাণকর বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, জাতীয় সংকট থেকে মুক্তি পেতে অবশ্যই জবাবদিহি ও দায়বদ্ধতামূলক নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটার একমাত্র পথ নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীন অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান।
বিএনপির মহাসচিব বর্তমান বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, বিদ্যুতের সংকটের মূল কারণটাই হচ্ছে দুর্নীতি-লুটপাট। কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে শুরু করে আদানি পর্যন্ত পুরোটাই হচ্ছে লুটপাট। এই খাতকে তারা (সরকার) বেছে নিয়েছে যে সর্বোচ্চ দুর্নীতি করা হবে বিদ্যুৎ খাত থেকে।
এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, সারা দেশে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে ত্রাহি অবস্থা। অথচ উদ্বৃত্ত বিদ্যুতের ফেরি করে বিক্রি করতে হবে বলে সংসদে অহমিকা করেছিল সরকার। বিদ্যুতের এই সংকটের মূল কারণটাই হচ্ছে দুর্নীতি–লুটপাট। এই খাতকে পুরোপুরি প্রাইভেট সেক্টরে প্রায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে এবং তাঁরা সবাই সরকারের সঙ্গে জড়িত।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, 'সাধারণ মানুষ তো তাদের বিদ্যুতের বিল দিয়েই যাচ্ছে এবং উচ্চ মূল্যে দিচ্ছে। তাহলে কেন কয়লার জন্য এলসি খুলতে পারছে না, কেন গ্যাসের এলসি খুলতে পারছে না, কেন তেলের জন্য এলসি খুলতে পারছে না। টাকাও নাই, ডলারও নাই। এই টাকা কোথায় গেছে, আমরা সবাই জানি।'
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।