এইমাত্র
  • দেশের সব নির্বাচন অফিসে নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
  • স্বামীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে হত্যার অভিযোগ, স্ত্রী ও প্রেমিক আটক
  • রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্দে ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা চান এরদোয়ান
  • ওসমান হাদির ওপর হামলাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে করছে না বিএনপি
  • ছুটির দিনেও খোলা থাকবে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়
  • ওসমান হাদির ওপর হামলার পর পানছড়ি সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার
  • ১২ ঘণ্টায়ও নিয়ন্ত্রণে আসেনি জাবালে নূর টাওয়ারের আগুন
  • চট্টগ্রাম-১৫ আসনে বিএনপি’র প্রার্থীকে জরিমানার পর শোকজ
  • আফগানিস্তানকে ৩ উইকেটে হারাল বাংলাদেশ
  • ডেঙ্গুতে একদিনে আক্রান্ত ৫৭২
  • আজ রবিবার, ২৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ | ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
    ফিচার

    বহুল ব্যবহারেও সংকটে চাষ

    সোনালী দিনের লাক্ষার এখন দুর্দিন, দাম না পাওয়ায় আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষিরা

    মো. আব্দুল বাশির, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি প্রকাশ: ৮ নভেম্বর ২০২৩, ১১:৪১ এএম
    মো. আব্দুল বাশির, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি প্রকাশ: ৮ নভেম্বর ২০২৩, ১১:৪১ এএম

    সোনালী দিনের লাক্ষার এখন দুর্দিন, দাম না পাওয়ায় আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষিরা

    মো. আব্দুল বাশির, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি প্রকাশ: ৮ নভেম্বর ২০২৩, ১১:৪১ এএম

    ভারতের পড়শি জেলা পুরুলিয়ার বলরামপুরের দিকে একটি প্রচলিত বাক্য আছে , “বিয়েতে পণ লাগবে না, একটি কুসুম গাছ দিও।” কেন না, একটা পরিণত গাছই বদলে দিতে পারে একটি পরিবারের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো। উপায় ওই গাছে লাক্ষা চাষ। কুসুম গাছেই সবচেয়ে ভালোমানের লাক্ষা চাষ সম্ভব। কুসুম গাছ না থাকলেও বাড়ির আশপাশে থাকা কুল গাছেও সফলভাবে লাক্ষা চাষ করা যায়।

    গবেষকদের মতে— সিলমোহর, কারুকার্যময়, ঢালাই, গ্রামোনফোন রেকর্ড, কাঠ পালিশ বা বার্নিস, প্রসাধনীসামগ্রী আঠা, ছাপাখানা ও রেশমজাতীয় বস্ত্রশিল্পেসহ অন্তত ১শ’ ধরনের কাজে ব্যবহার হয় লাক্ষা। দেশে প্রতিবছর লাক্ষার চাহিদা প্রায় ১০ হাজার মেট্রিকটন। কিন্তু, দেশে উৎপাদন হয় সবোর্চ্চ ১ হাজার মেট্রিক টন। যার মধ্যে শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জে উৎপাদন হয় প্রায় ২শ’ মেট্রিক টন।

    সম্ভাবনাময় অর্থকরী ফসল হলেও; দাম না পাওয়াসহ নানা কারণে দিন দিন কমছে লাক্ষা চাষির সংখ্যা। সংকুচিত হয়ে আসছে চাষের আওতায় থাকা এলাকার সংখ্যাও। ফলে চাহিদা বাড়লেও; কমছে উৎপাদন। যদিও গবেষকরা বলছেন, চাষ বাড়ানো গেলে ফিরবে লাক্ষার সোনালী দিন।

    প্রাচীন যুগ থেকেই দেশের একটি উল্লেখযোগ্য রপ্তানি পণ্য লাক্ষা। এর ব্যবহার বহুবিধ ও ব্যয়বহুল। তবে বর্তমানে হারিয়ে গেছে লাক্ষা চাষের সুদিনগুলো। গবেষণা বলছে, এক সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কুসুম, বরই ছাড়াও পলাশ খয়ের, বাবলা, শিরিশ, ডুমুর, কড়ই ইত্যাদি গাছের বাগানে লাক্ষা চাষ করা হলেও; নানা সংকটের মুখে এখন এই শিল্প। যা এখন জেলার দু’একটি এলাকায় সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। বর্তমানে যারা করছেন তারা বাপ—দাদার অস্বিত্ব ধরে রাখতেই লাক্ষা চাষ ও ছাড়ানো লাক্ষা প্রক্রিয়াজাত করে চাঁচ, টিকিয়া ও গালা তৈরি করছেন।

    লাক্ষা অর্থকরী ও সম্ভাবনাময় ফসল হলেও চাষিরা বলছেন, আবহাওয়ার বিরুপ প্রভাব, উন্নত জাতের বীজ না পাওয়া, বাজারজাতকরনে সমস্যা, দাম না পাওয়া এবং গবেষকদের পূর্ণ সহযোগিতা না পাওয়ায় আগ্রহ হারাচ্ছেন তারা। তবে বর্তমান বাজারে লাক্ষার চাহিদা ও দাম ভালো হওয়ায়; চাহিদার কথা মাথায় রেখে লাক্ষা চাষে সরকারি সহায়তা চান চাষিরা।

    নাচোল উপজেলার কণ্যানগর গ্রামের চুয়াত্তর বয়সোর্ধ লাক্ষা চাষি বীর মুক্তিযোদ্ধা এনামুল হক। তিনি লাক্ষার সুদিনগুলো হারিয়ে যাওয়ায় ক্ষোভের শুরে বলেন, আমার দেশের কৃষকেরা নায্যমূল্য পায়না। যার দরুন এটা চাষ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। এ দেশের লোক খেঁটে খাওয়া। তারা দশ টাকার লোভে এটা করে; কিন্তু ভারত থেকে লাহা এসে বাংলাদেশের লাহার দাম কমিয়ে দিচ্ছে। ভারতের চাষিরাতো ঠিকই দাম পাচ্ছে। তাদের সরকার এটা কিনে গুদামজাত করে। তাছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জে লাক্ষা নিয়ে যাঁরা কাজ করছে। তাঁরা শুধু গবেষণাগারে কিভাবে করতে হয় সেটা দেখিয়ে দিয়ে আর খোঁজখবর রাখে না। তাছাড়া সরকারি সহায়তা পেলে এই অর্থকরী ফষল চাষে আগ্রহ বাড়বে চাষিদের।

    একই এলাকার বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন এবার প্রথম সেমিয়ালতা নামের একটি সিম জাতীয় গাছে লাক্ষা চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ১৩শতক জমিতে এবার লাক্ষা চাষ করে ফলন হননি। এর প্রধান কারণ সঠিক সময়ে বীজ না পাওয়া।

    এদিকে দাম ও চাহিদা বাড়লেও; তাল মিলিয়ে কমছে লাক্ষার চাষ। এরজন্য আম চাষীদের অবৈজ্ঞানিক আচরণ, ভারত থেকে আমদানী ও বাজার ব্যবস্থা না থাকাকে দায়ী করছেন লাক্ষা গবেষকরা। তারা বলছেন, দেশে যে পরিমাণে বরই গাছ আছে; তা পরিকল্পনা করে লাক্ষা চাষের আওতায় আনা গেলে, দেশের পক্ষে স্বনির্ভর হয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব।

    দেশের একমাত্র চাঁপাইনবাবগঞ্জের লাক্ষা গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকতা ড. মুখলেসুর রহমান জানান, চাহিদার সাথে চাষ বাড়ানো গেলে ফিরবে লাক্ষার সোনালী দিন। এজন্য সরকারি পৃষ্ঠপোশকতা ও কৃষি বিভাগের চাষি পযার্য়ে সম্প্রসারণে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

    চাঁপাইনবাবগঞ্জের লাক্ষা গবেষণা কেন্দ্রের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকতার্ (এসএসও) ড. কাজী নজরুল ইসলাম জানান, লাক্ষার সম্প্রসারণে কৃষি বিভাগের কোন কার্যক্রম নেই। লাক্ষা চাষিদের উন্নয়নে কখনোই নেওয়া হয়নি কোন উদ্যোগ। এখন সেভাবে লাক্ষা চাষ হচ্ছে না। বাইরে থেকে এনে লাক্ষার চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে। তাই চাষি পর্যায়ে লাক্ষা চাষের পরিমাণ বাড়াতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি সেমিয়ালতার (সিম জাতীয় গাছ) মাধ্যমে চাষিদের চাষে আগ্রহী করার। আমরা সেভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে জেলার শিবগঞ্জ ও নাচোল উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে চারা ও লাক্ষা বীজ দিয়ে চাষাবাদ শুরু করেছি।

    লাক্ষার সোনালী দিন ফিরিয়ে আনতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কী ভূমিকা রাখছে? সে বিষয়ে জানতে চাইলে উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. পলাশ সরকার জানান, সময়ের পরিক্রমায় লাক্ষা চাষাবাদ কমে আসছে। এর কারণ হচ্ছে- বরই চাষ কমে যাওয়া, বিভিন্ন ফসলে প্রচুর পরিমাণে কীটনাশক প্রয়োগ, লাক্ষা চাষের সাথে সম্পর্কিত চাষিদের সরকারি প্রণোদনা ও প্রশিক্ষণ না দেয়া। তবে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে কিছু কার্যক্রম রয়েছে। কিন্তু লাক্ষার উপরে দক্ষ লোক কম থাকায় এই কার্যক্রমটি সেভাবে পরিচালনা করা যাচ্ছে না। এখানে যদি প্রশিক্ষিত কৃষক তৈরি করা যায়। তাদের দিয়ে লাক্ষার ভালোভাবে প্রদর্শনী করা যায়। তাহলে লাক্ষার সুদিন ফিরে আশার সম্ভবনা রয়েছে।


    লাক্ষা গবেষণা কেন্দ্রের জরিপ বলছে, এক সময় শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৭শ’ থেকে ৮’শ মেট্রিক টন লাক্ষার চাষ হতো। বর্তমানে জেলায় লাক্ষার যে পোষক গাছ রয়েছে, সেখান থেকে বছরে প্রায় ৫’শ মেট্রিকটন লাক্ষা উৎপাদন সম্ভব। যেখানে ২০ হাজার ভূমিহীন প্রান্তিক কৃষকের কর্মসংস্থান করা সম্ভব হলেও বর্তমানে লাক্ষা চাষের অবস্থা হতাশা ব্যঞ্জক।

    আরআই

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    Loading…