নেত্রকোণায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইট ভাটা গুলো পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযানকে তোয়াক্কা না করেই পরিবেশ ধ্বংসে রাজত্ব করে যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে দুএকটিতে অভিযান চালিয়ে গুড়িয়ে দিলেও অদৃশ্য শক্তিতে থেমে নেই ভাটার কার্যক্রম। ইটের ভাটায় নষ্ট হচ্ছে কৃষিজমিসহ পরিবেশ। বিশুদ্ধ বায়ু গ্রহণে বাধা ঘটলেও কর্তৃপক্ষের চোখ বন্ধ।
সরেজমিন দেখা গেছে, কৃষিতে উদ্বৃত্ত নেত্রকোণা জেলায় অবাধে চলছে অবৈধ ইটের ভাটা। জেলার ১০ উপজেলায় ৫৪টি ভাটা থাকলেও ৪০ টির মধ্যে মাত্র চারটি ভাটার বৈধতা রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই প্রায় সবগুলোই নিয়মের তোয়াক্কা না করেই চলছে প্রভাব খাটিয়ে।
এলাকাবাসী ও কৃষকরা বলছেন, কৃষি জমির জন্য ক্ষতিকর ভাটাগুলোর দুএকটি মাঝেমধ্যে বন্ধ করলেও আবারো টাকা পয়সা দিলে চালু করা হয় এসব ভাটা। এদের ব্যাপারে কেউ কিছু বলতে পারেন না ভয়ে। কৃষি জমি নষ্ট করে গড়ে ওঠা এসকল ভাটায় ইট তৈরীতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয় কৃষি জমির উপরের মাটি। ফলে জমির উর্বর শক্তি নষ্ট হয়ে দিনে দিনে কমে যাচ্ছে উৎপাদন। আম কাঁঠালসহ নষ্ট হচ্ছে অন্যান্য ফসলও। ভাটায় কর্মরত শ্রমিকদের দাবী তাদের কর্মসংস্থানের মাধ্যম ভাটাগুলো।
পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আবু সাঈদ সাংবাদিকদের জানান, চলতি বছরের ২২ জানুযারি নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার ঢাকা ব্রিকস গুড়িয়ে দেয়া হয়। এছাড়াও ৪ ফেব্রুয়ারী মোহনগঞ্জ উপজেলায় কে এস ব্রিক্সের মালিককে ৪ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়ছে।
ঢাকা ব্রিক্সস বন্ধ করার পরেও বর্তমানে চালুর বিষয়ে বলেন, আমরা বন্ধ করে আসলেও তারা কোর্টের মাধ্যমে আবারো চালু করেছে। তবে নিয়মিত মনিটরিং রয়েছে। পরিবেশগত ভাবে সঠিক না হওয়ায় বেশ কয়েকটির ছাড়পত্র বাতিল করা হয়েছে। তবে তাদের পরিবেশ বান্ধব ভাটা স্থাপনে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছেও বলে জানান তিনি।
নেত্রকোনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নুরুজ্জামান জানান, ভাটায় ব্যবহৃত টপসয়েল (কৃষি জমির উপরের অংশ) কৃষি জমি থেকে নেয়া হয়। ফলে মাটির উর্বর শক্তি কমে যায়। এটি পূরণ হতে কমপক্ষে ৫০ বছর সময় লাগে। যে কারণে আমরা ছাড়পত্র দিতে গিয়ে কোনমতেই তিন ফসলি জমির অনুমোদন দেই না। এছাড়াও মাটির টপসয়েল বিক্রি না করতে কৃষকদের পরামর্শ দেই।
এছাড়া জেলার কলমাকান্দা উপজেলায় চারটি ইটভাটায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকলেও ইটভাটায় কয়লার বিপরীতে প্রকাশ্যে পুড়ছে কাঠ। ভাটার সামনে রাখা হয়েছে শত শত মণ কাঠ। এতে পরিবেশ যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি ভাটার ধোঁয়ার হুমকিতে রয়েছে জনস্বাস্থ্য ও জীববৈচিত্র। কয়লার দাম বেশি হওয়ায় ভাটা স্থাপনের শুরু থেকেই ভাটায় কাঠ পোড়ানো হচ্ছে বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।
পিএম