জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি এমন এক ধরনের ওষুধ যেখানে হরমোন থাকে, যে হরমোন নারীর ডিম্বাশয় থেকে ডিম নিঃসরণে বাধা দিয়ে গর্ভধারণ প্রতিরোধে সহায়তা করে। এর প্রধান কাজ ওভুলেশন বা ডিম নিঃসরণে বাধা দেয়া, এবং এস্ট্রোজেন মাসিকের রক্তপাত নিয়ন্ত্রণ করা।
গত শতকের ১৯৬০ সালের ৯মে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন, মুখে খাওয়ার জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ির অনুমোদন দেয়। এরপর থেকে গত ৬৪ বছরে নারীর জন্মনিয়ন্ত্রণসহ গাইনি সংক্রান্ত নানা সমস্যার সমাধানে বড় নিয়ামক হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ওরাল কন্ট্রাসেপ্টিভ পিল।
নারীদের গর্ভনিরোধক ট্যাবলেট বা কনট্রাসেপ্টিভ পিল সম্পর্কে একটা প্রচলিত ধারণা হল, এই ধরনের ট্যাবলেট খেলে মোটা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে এটি সবার ক্ষেত্রে ঘটে না। কিছু কিছু নারী জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়া শুরু করার পর তাদের ওজন কিছুটা বেড়ে যায়। যদিও এটি জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলের অস্থায়ী একটি পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া যা শরীরের তরল ধরে রাখার কারণে হয়। তবে এই ওজন অতিরিক্ত চর্বির কারণে বাড়ে না। চলুন জেনে নিই
ডাক্তাররা জানাচ্ছেন, গর্ভনরোধক ট্যাবলেট থেকে মোটা হওয়ার কোনও আশঙ্কা নেই। ৪৪টি গবেষণার পর্যালোচনায় জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ায় ওজন বেড়ে যাওয়ার কোনো প্রমাণ দেখা যায়নি। তবে এ ধরনের ওষুধের সম্ভাব্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণে ওজন সামান্য বাড়লেও তা স্থায়ী হয় না। ২-৩ মাসের মধ্যেই ওই ওজন কমে যায়।
সাধারণত দু‘ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল আছে। একটি হলো কম্বিনেশন পিল, এতে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টিন থাকে। আরেকটি হলো শুধু প্রোজেস্টিন পিল। বেশিরভাগ জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলেই বিভিন্ন মাত্রায় একই ধরনের ইস্ট্রোজেন ব্যবহার করে। তাই ব্র্যান্ডভেদে এসব ওষুধে হরমোন প্রোজেস্টিনের মাত্রার হেরফের ঘটতে পারে। এর ফলাফলেই সম্ভাব্য বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
তাই যে কোনো জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল সেবন শুরু করলে অন্তত ৩ মাস দেখুন। তারপরও যদি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় কিংবা ওজন বেশি বেড়ে যায় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সবচেয়ে ভালো হয়, চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল সেবন শুরু করা। কারণ চিকিৎসকই আপনার শারীরিক অবস্থায় অনুযায়ী ভালো মানের জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল দেবেন।
১৯৬০ সালের গোড়ার দিকে যখন জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়িগুলো বিক্রি শুরু হয়, তখন সেগুলোর মধ্যে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টিন হরমোনের উচ্চ মাত্রা ছিল। আর উচ্চ মাত্রায় ইস্ট্রোজেন ক্ষুধা বাড়াত ও তরল ধরে রাখার কারণে ওজন বেড়ে যেত। তবে বর্তমানে যেসব জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল পাওয়া যায়, সেগুলোতে হরমোনের পরিমাণ অনেক কম। তাই ওজন বাড়ার ঝুঁকি নেই।
এবি