হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক। মাদকের জোয়ারে ভাসছে রাজধানীর গোটা মিরপুর। সরকার ও আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর চলমান ঘোর মাদক বিরোধী অভিযানকে তোয়াক্কা না করে প্রকাশ্যেই নানা রকম মরণ নেশার রমরমা বাণিজ্য চালিয়ে আসছে মিরপুরের কিছু চিহ্নিত ও সংঘবদ্ধ মাদক কারবারীরা। বিশেষ করে ডিএমপির মিরপুর বিভাগের শাহ আলী থানার অন্তর্ভুক্ত হযরত শাহ আলী (রঃ) মাজার শরীফকে কেন্দ্র করে মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী।
এলাকাবাসীর অভিযোগ ও তাদের ভাষ্যমতে, ২০ থেকে ২৫ জনের একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট সক্রিয়ভাবে নিয়োজিত রয়েছে মাদক বিক্রিতে। মাজার শরীফে আগন্তক যে কাউকে প্রকাশ্য দিবালোকে ডেকে ডেকে বিভিন্ন প্রকার মাদক কিনতে আহ্বান করছে এরা। এতে করে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছেন সুশীল সমাজ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাজার শরীফের একজন দোকানদার বলেন, মাজার কেন্দ্রীক যারা মাদক বিক্রি করছে তাদের বেশিরভাগই ভাসমান সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোর-কিশোরী ও ভ্রাম্যমাণ পতিতা। তবে নেপথ্যে থেকে এদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে শক্তিশালী ও প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। এলাকার চিহ্নিত কিশোর গ্যাংয়ের কিছু সদস্যসহ শাহ আলী থানা ছাত্রলীগের সাবেক একজন নেতার পিতা পরিচয় দিয়ে আনিস মিয়া নামে এক ব্যাক্তি এই মাদক ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করেন বলেও অভিযোগ করেন এই দোকানি।
নাম প্রকাশে একজন মাদক ব্যবসায়ী বলেন, ছাত্রলীগ নেতার বাবা পরিচয় দিয়ে প্রভাব খাটিয়ে আনিস মিয়া আমাদের এই কাজ করতে বাধ্য করেন। অনেক সময় মারধোর করে টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয় এই আনিস।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর একজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, মিরপুর এলাকার বিভিন্ন ব্যস্ততম এলাকা কেন্দ্রীক ছিনতাইকারী চক্রের অভয়াশ্রম এই মাজার শরীফ। প্রায় অর্ধ শতাধিক শিশু-কিশোর ছিনতাইকারীর সমন্বয়ে গঠিত এই সিন্ডিকেটের ছিনতাইকৃত মোবাইল ফোন, পার্টস ব্যাগসহ মূল্যবান সামগ্রী এই আনিসের কাছেই জমা হয়। বিনিময়ে তাদের কপালে জোটে দু'একশ টাকা। আর ডেন্ড্রাইট (ড্যান্ডি) নামক এক কৌটা আঠা। যা এই মাদকাসক্ত ছিনতাইকারী শিশু-কিশোরদের নিকট এক ধরণের জনপ্রিয় মাদক।
প্রসঙ্গে, আসাদুজ্জামান আসাদ নামে স্থানীয় একজন বাসিন্দা জানান, মাদক ব্যবসায়ীদের অত্যাচারে এলাকাবাসী চরম অসহায় হয়ে পড়েছে। মাদকের সহজলভ্যতায় এলাকার স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও ঝুকে পড়ছে মাদকের দিকে। তাছাড়া স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীরাসহ এলাকার বিভিন্ন গার্মেন্টসে কর্মরত নারীদের আসা যাওয়ার পথে ইফটিজিংসহ নানা হয়রানীর শিকার হতে হয় মাদকসেবীদের হাতে।
চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের অনেকে বর্তমানে জেলহাজতে থাকলেও কারাগারে বসেই তাদের বিশাল মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন তারা। চুরি, ছিনতাই আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিনীত অনুরোধ করছি। অতিসত্ত্বর এসব চিহ্নিত মাদক কারবারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে এলাকাবাসীকে উদ্বুদ্ধ সমস্যা থেকে পরিত্রাণের ব্যবস্থা করুন।
ডিএমপির মিরপুর বিভাগের শাহ আলী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, আমরা মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে বেশ কিছু মাদক সেবনকারী ও ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়েছি। এধরণের কোনো অভিযোগের সত্যতা পেলে সে যে বা যারাই হোক, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এইচএ