এক সময় রেডিও ছিল বিনোদন, সংবাদ এবং শিক্ষার অন্যতম প্রধান মাধ্যম। গ্রামের অজ পাড়া গাঁ থেকে শুরু করে শহরের ব্যস্ত জনপথেও রেডিওর ছোঁয়া ছিল সর্বত্র। ঘরে ঘরে রেডিও চলত, মানুষ আগ্রহভরে শুনত ‘সংবাদ বুলেটিন’, নাটক, সংগীত, এবং খেলাধুলার ধারাভাষ্য। কিন্তু প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে রেডিও তার একচ্ছত্র আধিপত্য হারাতে শুরু করে।
বর্তমানে স্মার্টফোন, ইন্টারনেট, টেলিভিশন ও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের সহজলভ্যতায় রেডিওর জনপ্রিয়তা অনেক কমে গেছে। মানুষ এখন চায় চিত্রসহ দ্রুত এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক কনটেন্ট, যা রেডিও দিতে পারে না। ইউটিউব, স্পটিফাই, পডকাস্ট ইত্যাদি নতুন মাধ্যম মানুষকে আরও বেশি আকর্ষণ করছে, কারণ সেগুলিতে রয়েছে নির্বাচন করার স্বাধীনতা এবং ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনা।
তবে, বলা যায় না যে রেডিও একেবারে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এখনো অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলে রেডিওই একমাত্র তথ্য ও বিনোদনের মাধ্যম। পাশাপাশি ডিজিটাল রেডিও, অনলাইন স্ট্রিমিং রেডিও বা পডকাস্টের আকারে রেডিও নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ করছে। অর্থাৎ, রেডিও তার প্রচলিত রূপে বিলুপ্তপ্রায় হলেও আধুনিক রূপে এখনো তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে।
ঠিক তেমনি ডিম বিক্রেতা গোপাল মামা। মামার থেকে এক ডিম ক্রেতা জিজ্ঞাসা করে মামা এক হালি ডিমের দাম কত? মামা একটু দেরি করে উত্তরে বলে ৪৮ টাকা। দেরির কারনটা কি জানেন?
কারণটা বলি, রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী বাজারে মামার একটি ছোট্ট দোকান যেখানে ডিম, মধু এবং ঘি বিক্রি করে । ডিম বিক্রি করার সাথে সাথে সব সময় মনোযোগ দিয়ে গান আর খবর শুনে তার একটি তিন বছরের পুরনো রেডিও দিয়ে। যে রেডিও এখন বিলুপ্তি প্রায়। বলতে পারি রেডিওতে গান বা খবর শুনা ব্যতিক্রমী কথা।
ডিম বিক্রেতা মামার নাম, গোপাল প্রামাণিক বয়স সঠিক বলতে পারে না উত্তরে মৃদু হাসি দিয়ে বলে ৭০ হয়তো হবে। বাড়ি উপজেলার আড়ানী পেয়াদাপাড়া গ্রামে। পড়াশোনার কথা জিজ্ঞেস করলে বলেন, কত বার স্কুলে গেছি মনে নাই তবে পড়াশোনা কিছুই জানি না অশিক্ষিত মানুষ আমি। সন্তানের কথা বললে বলেন, সন্তান ২ টা, একটা ছেলে একটা মেয়ে, আলহামদুলিল্লাহ মেয়েকে সুন্দর করে বিয়ে দিয়েছি সংসার করছে।
গোপাল প্রামাণিক তার দোকানে কাজের সাথে সাথে রেডিওতে গান আর খবর শুনেন। প্রশ্ন করি এই ডিজিটাল সময়ে এখনো রেডিও শুনেন? উত্তরে বলে রেডিও তে যে সকল অনুষ্ঠান হয় সেই অনুষ্ঠান আর কোথাও হয় না সাথে পুরনো যুগের গান, যে গান গুলো এখন সহজে শুনতে পাওয়া যায় না আবার খবরো শুনতে পাই।
এমন কথা বলতে বলতে ভারি কণ্ঠে তার এই রেডিও নিয়ে কষ্টের কথাও শেয়ার করলেন তিনি বলেন, আমার অনেক আগের রেডিও চ্যানেল গুলো সব সময় স.স শব্দ হয় আবার বছর খানেক আগে আড়ানীর রেডিও বড়াল বন্ধ হয়ে দুরের চ্যানেল গুলো ধরে না তাই সুনতে কষ্ট হয়। বর্তমান রেডিওটির বয়স প্রায় ৩ বছর। এই বর্তমান রেডিওটির আগে আরো ৩ টা রেডিও প্রেমে পড়েছেন মানে ৩টি রেডিও সে ব্যবহার করছে। মামর বৃদ্ধি হবার পর থেকেই রেডিও সাথে এক অন্য রকম প্রেম । তবে বর্তমান রেডিওটিতে এফএম ধরে না তাই মেমোরিতে গান শুনে, এটি নষ্ট হওয়াতে নতুন রেডিও কিনতে গিয়েও আড়ানি বা বাঘাতে পাওয়া যায়নি।
প্রশ্ন করা হয় হাতের বর্তমান রেডিওটি কোথায় কি ভাবে কিনেছেন ? উত্তরে তিনি বলেন, তার মেয়ে জামাই কিনে দিয়ছিলো ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম মার্কেট থেকে । তার জামায় আর সেখানে থাকে না তাই কিনে আনতে পারে না। ডিম বিক্রেতা মামার প্রয়োজন একটি রেডিও।
এসআর