চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নের হাজারিখীল বুড়াইছড়ি খালের উপর ব্রীজ নির্মাণ নিয়ে দীর্ঘদিনের তামাশা, গড়িমসি আর প্রশাসনিক নিস্ক্রিয়তার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে শুরু হয়েছে কাঙ্ক্ষিত সেই কাজ।
দেশের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের কণ্ঠস্বরে গত ১১ মে “পিআইও-ঠিকাদারের তামাশা, আটকে আছে দুই গ্রামের স্বপ্ন” শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে সরব হয় স্থানীয় প্রশাসন। তারই ফলস্বরূপ, ব্রীজ নির্মাণস্থলে কাজ শুরু করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘আফছানা এন্টারপ্রাইজ’।
মঙ্গলবার (১৩ মে) সকাল থেকে খালের পাড়ে নির্মাণসামগ্রী আনা ও সাইট প্রস্তুতির কাজ চলতে দেখা যায়। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ও হতাশার মাঝে এই দৃশ্য যেন নতুন আশার আলো হয়ে এসেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “আমরা বিশ্বাসই করতে পারছি না যে অবশেষে কাজ শুরু হলো। এতদিন ধরে শুধু অজুহাত আর মিথ্যা আশ্বাস শুনে শুনে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম। আপনারা সংবাদ না করলে এটা কোনোদিনই শুরু হতো না।”
এ বিষয়ে ঠিকাদার মোহাম্মদ ফারুক বলেন, “আমি শুরু থেকেই ব্রীজের কাজ দ্রুত শেষ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু খালে বাঁধের পানি থাকায় কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। এখন সেইসব বাধা কেটে গেছে, কাজ শুরু হয়েছে। আমি আশাবাদী—অতি দ্রুত এই প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে পারব।”
তবে তাঁর এ বক্তব্যে অনেকেই ভ্রু কুঁচকেছেন। কারণ এর আগেও তিনি একাধিকবার “কাজ শুরু করব” বলে আশ্বাস দিলেও কার্যত কিছুই হয়নি। এবার সংবাদ প্রকাশ ও প্রশাসনিক চাপে পড়ে বাধ্য হয়েই তিনি মাঠে নামলেন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা দাবি করছেন, শুধুমাত্র কাজ শুরু করলেই চলবে না; নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এবং যথাযথ মান বজায় রেখে কাজ শেষ করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
স্থানীয় বাসিন্দা জুবাইর বিন জিহাদী বলেন, “এখন আমরা আর কথায় বিশ্বাস করি না। কাজে বিশ্বাস রাখি। এই ব্রীজ একদিন আমাদের ছেলে-মেয়েদের নিরাপদ পথ হবে—এই স্বপ্ন আমরা আবার দেখতে শুরু করেছি।”
তিনি আরও বলেন, “কাজ শুরু হওয়া ভালো, কিন্তু এই শুরু যেন মাঝপথে থেমে না যায়। প্রশাসনকে নজরদারিতে রাখতে হবে।”
ব্রিটিশ আমল থেকে বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পারাপারই ছিল দুই পাড়ের একমাত্র ভরসা। শিক্ষার্থী, মুসল্লি, বৃদ্ধ ও গর্ভবতী নারীদের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগের বিষয়টি বহুবার উচ্চারিত হলেও এতদিন কার্যত কিছুই হয়নি। সংবাদ প্রকাশের পর যে সচেতনতা তৈরি হয়েছে, তাতে এলাকাবাসী এখন নতুন আশায় বুক বাঁধছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস জানান, “প্রতিবেদনের পর বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখেছি। কাজ যাতে বন্ধ না হয়, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
এমআর