এইমাত্র
  • দেশের সব নির্বাচন অফিসে নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
  • স্বামীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে হত্যার অভিযোগ, স্ত্রী ও প্রেমিক আটক
  • রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্দে ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা চান এরদোয়ান
  • ওসমান হাদির ওপর হামলাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে করছে না বিএনপি
  • ছুটির দিনেও খোলা থাকবে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়
  • ওসমান হাদির ওপর হামলার পর পানছড়ি সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার
  • ১২ ঘণ্টায়ও নিয়ন্ত্রণে আসেনি জাবালে নূর টাওয়ারের আগুন
  • চট্টগ্রাম-১৫ আসনে বিএনপি’র প্রার্থীকে জরিমানার পর শোকজ
  • আফগানিস্তানকে ৩ উইকেটে হারাল বাংলাদেশ
  • ডেঙ্গুতে একদিনে আক্রান্ত ৫৭২
  • আজ রবিবার, ২৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ | ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    ছাত্রদল নেতা পরিচয়ে ‘মলম পার্টি’ চালান সোহেল!

    শাহীন মাহমুদ রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (কক্সবাজার) প্রকাশ: ৫ জুন ২০২৫, ০৮:২০ এএম
    শাহীন মাহমুদ রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (কক্সবাজার) প্রকাশ: ৫ জুন ২০২৫, ০৮:২০ এএম

    ছাত্রদল নেতা পরিচয়ে ‘মলম পার্টি’ চালান সোহেল!

    শাহীন মাহমুদ রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (কক্সবাজার) প্রকাশ: ৫ জুন ২০২৫, ০৮:২০ এএম

    কক্সবাজারের রামু উপজেলায় সক্রিয় একটি প্রতারক চক্রের সন্ধান মিলেছে, যারা 'মলম পার্টি' নামে পরিচিত। সাধারণ মানুষকে চেতনানাশক মলম বা দ্রব্য ব্যবহার করে অচেতন করে সর্বস্ব লুটে নেওয়া এই চক্রের কৌশল। আর এই চক্রের নেতৃত্বে রয়েছেন মোহাম্মদ সোহেল সিকদার নামের এক যুবক, যিনি নিজেকে রামু উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি পদপ্রার্থী হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন।

    সোহেলের বাড়ি রামুর জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের ইলিশিয়া পাড়ায়। স্থানীয় শামশুল আলমের ছেলে তিনি।

    স্থানীয়দের ভাষ্য, রামু, সদর, উখিয়া ও আশপাশের এলাকায় সোহেল ও তার সহযোগীরা দীর্ঘদিন ধরে পথচারীদের টার্গেট করে এই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। চক্রটি সাধারণত দলবদ্ধভাবে রাস্তায় অবস্থান করে। কেউ অসুস্থ সেজে পড়ে থাকে, কেউ সহানুভূতি দেখিয়ে ভুক্তভোগীকে কাছে ডেকে আনে। এক পর্যায়ে চেতনানাশক মলম বা দ্রব্য প্রয়োগ করে মুহূর্তেই অচেতন করে ফেলে এবং সাথে থাকা মোবাইল, টাকা-পয়সা, স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে সটকে পড়ে।

    এই চক্রের প্রধান সোহেল সিকদার নিজেকে কেবল মুখে নয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছাত্রদল নেতা হিসেবে জাহির করেন। বিভিন্ন ফেসবুক পোস্ট, ছবি এবং দেয়ালে লাগানো পোস্টারের মাধ্যমে তিনি নিজেকে রামু উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি পদপ্রার্থী হিসেবে উপস্থাপন করে থাকেন। পোস্টারে স্পষ্ট লেখা- ‘ছাত্রদল নেতা মোহাম্মদ সোহেল সিকদার, সভাপতি পদপ্রার্থী, রামু উপজেলা ছাত্রদল।’ এই পরিচয় তাকে অনেকের কাছে রাজনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা এনে দিয়েছে, যা সে ব্যবহার করছে নিজ স্বার্থে।

    তবে বাস্তবতা ভিন্ন। এলাকাবাসীর বড় অংশ তাকে একজন শীর্ষ প্রতারক হিসেবে চেনে। স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরেই সে মলম পার্টির কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। অনেক সময় পুলিশ তাকে হাতেনাতে ধরলেও, অজ্ঞাত কারণে ছেড়ে দেওয়া হয়।

    একটি ঘটনা বেশ আলোচিত। কয়েক মাস আগে উখিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এক নারীর হাতব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন সোহেল। উত্তেজিত জনতা তাকে ঘিরে ধরে গণপিটুনি দেয়। সেই ঘটনার একটি ভিডিও প্রতিবেদকের হাতে এসেছে, যেখানে সোহেলকে ঘিরে জনতার শোরগোল দেখা যায়। ভিডিওতে তাকে নিজের ছাত্রদল পরিচয় ব্যবহার করে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করতে দেখা যায়। পরে পুলিশ এসে তাকে হেফাজতে নিলেও কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

    এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রামু ও সদরের কয়েকজন ছাত্রদল নেতা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, ‘ছাত্রদলের নাম ব্যবহার করে কেউ যদি অপরাধ করে, সেটা আমাদের সংগঠনের জন্য কলঙ্ক। সোহেলের কর্মকাণ্ডে আমরা বিব্রত।’

    রামুর বিভিন্ন সড়ক ও গলিতে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, দেয়ালে দেয়ালে সোহেলের ছবি সম্বলিত পোস্টার সাঁটানো। দেখে মনে হবে তিনি একজন উদ্যমী ছাত্রনেতা, অথচ বাস্তবে তার নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে চুরি, প্রতারণা, চেতনানাশক দিয়ে সর্বস্ব লুটসহ একাধিক অভিযোগ।

    স্থানীয়রা আরও জানান, চক্রটি শুধু পুরুষ নয়, নারীদের প্রতিও নির্মম আচরণ করে। এক ভুক্তভোগী নারী জানান, বাসে ওঠার সময় এক যুবক ফোন না থাকার অজুহাতে তার ফোন চায়। বিশ্বাস করে ফোন দিলে কিছুক্ষণের মধ্যেই ফোনসহ ব্যাগ উধাও হয়ে যায়। আরেকজন বলেন, ‘রাস্তায় এক ব্যক্তি অসুস্থ সেজে পড়েছিল। আমি এগিয়ে গেলে সে মুখে কিছু লাগায়, তারপর আর কিছু মনে নেই।’

    এক ভুক্তভোগী নারী বলেন, ‘আমি বাসে উঠতে যাচ্ছিলাম, এক যুবক বলে তার ফোন চার্জ নেই। আমার ফোন দিয়ে কথা বলার সুযোগ দিই। পরে দেখি ফোনটা নেই, ব্যাগটাও কেটে ফেলে দিয়েছে।’

    আরেকজন জানান, ‘চোখের সামনে কেউ পড়ে ছিল, এগিয়ে গেলে সে উঠে দাঁড়িয়ে একটা কিছু মুখে লাগায়। চোখে অন্ধকার দেখি। জ্ঞান ফেরার পর দেখি মানিব্যাগ উধাও।’

    রামু বিভিন্ন এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই চক্র বহুদিন ধরে সক্রিয়। সোহেল সিকদার ও তার সহযোগীরা রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে পার পেয়ে যাচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে হুমকি দেওয়া হয়।

    এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘সে রাজনৈতিক নেতা বলে থানায় কেউ মুখ খুলতে চায় না। মানুষ অনেক সময় ছবি বা ভিডিও তোলে, কিন্তু মামলা করতে ভয় পায়।’

    স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি, সোহেল সিকদারের নেতৃত্বে একটি সংগঠিত প্রতারক চক্র গড়ে উঠেছে। রাজনৈতিক পরিচয় ও প্রভাবের কারণে তারা দিনের পর দিন পার পেয়ে যাচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করতে গেলেই হুমকি আসে। অনেকেই ছবি বা ভিডিও থাকলেও মামলা করতে ভয় পান।

    এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত সোহেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিবেদককে কোনো সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান। একপর্যায়ে প্রতিবেদককে 'ম্যানেজ' করার চেষ্টা করেন এবং বিষয়টি 'অফ দ্য রেকর্ড' রাখার আহ্বান জানান। তবে সোহেল তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো সরাসরি অস্বীকার করেননি।

    পিএম

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    Loading…