এইমাত্র
  • দেশের সব নির্বাচন অফিসে নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
  • স্বামীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে হত্যার অভিযোগ, স্ত্রী ও প্রেমিক আটক
  • রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্দে ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা চান এরদোয়ান
  • ওসমান হাদির ওপর হামলাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে করছে না বিএনপি
  • ছুটির দিনেও খোলা থাকবে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়
  • ওসমান হাদির ওপর হামলার পর পানছড়ি সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার
  • ১২ ঘণ্টায়ও নিয়ন্ত্রণে আসেনি জাবালে নূর টাওয়ারের আগুন
  • চট্টগ্রাম-১৫ আসনে বিএনপি’র প্রার্থীকে জরিমানার পর শোকজ
  • আফগানিস্তানকে ৩ উইকেটে হারাল বাংলাদেশ
  • ডেঙ্গুতে একদিনে আক্রান্ত ৫৭২
  • আজ রবিবার, ২৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ | ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    ঈদের দিন মানুষের ছাগলের ভুঁড়ি পরিষ্কার করে, হাফ কেজি ভুঁড়ি ভাগ্যে জুটছে বাহে!

    অনিল চন্দ্র রায়, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ৭ জুন ২০২৫, ১০:০৯ পিএম
    অনিল চন্দ্র রায়, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ৭ জুন ২০২৫, ১০:০৯ পিএম

    ঈদের দিন মানুষের ছাগলের ভুঁড়ি পরিষ্কার করে, হাফ কেজি ভুঁড়ি ভাগ্যে জুটছে বাহে!

    অনিল চন্দ্র রায়, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ৭ জুন ২০২৫, ১০:০৯ পিএম

    ছামিনা বেগম (৫০) ও স্বামী ভোলা মিয়া (৫৫)। এই দম্পতি থাকেন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের সীমান্তঘেঁষা গোরকমন্ডল আবাসনে। এই দম্পতির পরিবারে এভাবেই বছরের পর বছর কোরবানির ঈদ পালন করে আসছেন।

    ঈদের দিন শনিবার দুপুর দুইটায় গোরকমন্ডল আবাসনে গিয়ে দেখা গেছে, ছামিনা বেগম পলিথিনের ব্যাগে করে ছাগলের ভুঁড়ি নিয়ে ঘরে ফিরছেন। ঠিক ওই সময় আবাসনের বাসিন্দা ছামিনা বেগম পলিথিন ব্যাগে কী জানতে চাইলে বলেন, 'বাহে, এগুলো ছাগলের ভুঁড়ি।' পাশের এক বাড়িতে চারটি খাঁশি (ছাগল) এর ভুঁড়ি পরিষ্কার করে দিয়েছি। তাই একটি ছাগলের ভুঁড়ি আমাকে দিয়েছে। গরীব মানুষ ঈদে কোরবানি দেয়াতো দূরের কথা, গরু কিংবা খাঁশির একটুকরো মাংস কিনে খাওয়ার সামর্থ নেই। 'তোমরা (আপনি) বিশ্বাস করবেন কি না জানি না। আজ ঈদের দিন সকালে পরিবারের সবাই মিলে ডিম ভাজি ও আলুর ভর্তা দিয়ে খাবার খেয়েছি।'

    দুই স্বামী-স্ত্রী ঈদের নামাজ পড়ে আমি ছাগলের ভুঁড়ি পরিষ্কার করতে যাই এবং আমার স্বামী গরুর ছামরা ছাড়িয়ে দিতে যান। 'তা আপনি স্বচোখে দেখলেন, ব্যাগে করে খাঁশি ছাগলের ভুঁড়ি নিয়ে আসলাম।' আমার স্বামী একটু আগেই ঘরে ফিরেছেন। সকালের রান্না করা ডিম ভাজি ও আলুর ভর্তা দিয়েই স্বামী-স্ত্রী দুপুরের খাবার খান। এভাবেই তাদের ঈদের দিনটি কেটে যায়।

    ছামিনা বেগমের স্বামী ভোলা মিয়া জানান, 'কী বলবো বাহে! যা দেখছেন তার সবই সত্য। এখানে লুকানোর কিছুই নেই। স্ত্রী ছাগলের ভুঁড়ি নিয়ে বাড়িতে ফিরেছেন। আমিও বাড়িতে পাশের আর একজনের গরুর ছামরা ছাড়িয়ে মাংস সাইজ করে দিয়েছি। এখনো তারা কিছু দেয়নি। তবে সন্ধ্যার পর হয়তো কিছু মাংস দিতে পারবেন। আমাদের প্রতি বছরেই এভাবেই ঈদ পালন করি।'

    আবাসনের পাশের ব্যারাকের বাসিন্দা হাসনা বেগম জানান, 'আমার স্বামী গরুর ভুঁড়ি পরিষ্কার করে দিয়েছে। বিনিময়ে হাফ কেজি গরুর ভুঁড়ি দিয়েছে। সেগুলো ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করছি। ঈদে গরুর মাংস না জুটলেও গরুর ভুঁড়ি খেয়ে কোরবানির ঈদ কেটে যায় বাহে!'

    আবাসনের আরেক বাসিন্দা আছমা বেগম (৫৫) জানান, 'এগুলো ছবি ও ভিডিও করে কী লাভ বাহে! ঈদের দিন সকালে কোন রকমেই ডাল ভাত খেয়ে খেয়েছি। আমাদের খাবারে জোটেনা, আবার মাংস কেনার টাকা পাবো কোথায়। এমনিতে আয় রোজগার কমেছে। গরীব মানুষ কোন রকমেই খেয়ে না খেয়ে জীবনযাপন করে আসছি। দেখছেন না যে ঘরে থাকি, তাও বৃষ্টি আসলেই পানিতে বিছানা পত্র ভিজে যায়। কেউ দেখে না হামারগুলার দুঃখ কষ্ট।'

    একই কথা জানান, আব্দুল গফুর ও শাপলা বেগমসহ অনেকেই।

    আবাসনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে গোরকমন্ডল আবাসনে ৫২টি পরিবার বসবাস করছেন। এর মধ্যে ১০টি পরিবার হিন্দু সম্প্রদায়ের।

    ৪২টি পরিবারের লোকজন কোরবানি ছাড়াই পালন করছে ঈদ। এসব বাসিন্দাদের মাথাগোঁজার ঠাঁই না থাকায় সরকার আবাসনে থাকার সুযোগ করে দিয়েছে। মূলত আবাসের প্রতিটি বাসিন্দা নিম্ন আয়ের মানুষজন হওয়ায় তাদের সামর্থ নেই পশু কোরবানি দেওয়ার। ফলে প্রতি বছর ঈদে ওই আবাসনের থাকা নারী-পুরুষসহ শিশুরা বঞ্চিত হচ্ছে ঈদ আনন্দ থেকে। এই চিত্র উপজেলার চরগোরকমন্ডল আবাসন, ফুল সাগর আবাসনসহ গুচ্ছগ্রামগুলোতে।

    গোরকমন্ডল আবাসনের সভাপতি আব্দুল মোন্নাফ জানান, 'আমরা যারা আবাসনে বসবাস করছি, তারা সবাই দরিদ্র পরিবার। আবাসে দুই যুগ কেটে গেল, কেউ কোন দিন কোরবানি দিতে পারেনি। এমনকি স্ত্রী সন্তানকে নতুন কাপড় কিনে দেওয়ারও সামর্থ্য নেই। আমরা অনেক কষ্ট করে এখানে বসবাস করছি। সবাই দেখলেন। আজ একটা ঈদের দিন সারাদিন গেল, কেউ একটুকরো গরুর মাংস বা খাঁশির মাংস মুখে দিতে পারেনি। রাতে হয়তো কেউ গরুর ভুঁড়ি ও ছাগলের ভুঁড়িসহ বয়লারের দুই টুকরো মাংস জোটাতে পারে। আবার অনেকের ভাগ্যে নাও জুটতে পারে।'

    নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: হাছেন আলী ও গোরকমন্ডল ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শ্যামল চন্দ্র মন্ডল জানান, 'আবাসনের বাসিন্দারা প্রত্যেকেই দরিদ্র পরিবার। প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য ঈদের উপহার হিসেবে ১০ কেজি করে চাল সরকারের পক্ষ থেকে আবাসনের প্রত্যেকটি পরিবারকে দেওয়া হয়েছে। তবে আসলেই আবাসনে থাকা পরিবারগুলোর গরুর মাংস কিংবা খাঁশির মাংস কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নেই। সেক্ষেত্রে সরকার অথবা বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে অন্তত কোরবানি ঈদে মাংস থেকে পারতেন।'

    এনআই

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    Loading…