কক্সবাজারের টেকনাফে অপহরণ চক্রের সাথে জড়িত অপরাধীরা নানা প্রকার কৌশল অবলম্বন করে তাদের ঘৃণ্য অপকর্ম অব্যাহত রাখার চেষ্টা করছে।
তারই ধারাবাহিকতায় গত চার দিন আগে র্যাবের সদস্য পরিচয় দিয়ে হাফিজউল্লাহ নামে এক রোহিঙ্গা যুবককে অপহৃত করে অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা। ঘটে যাওয়া ঘটনাটি র্যাবের নজরে আসলে অপহৃত ভিকটিম ও উক্ত অপরাধে জড়িত সন্ত্রাসীদের ধরতে গোয়েন্দা অভিযানিক কার্যক্রম শুরু করে।
অবশেষে রবিবার (১৫ জুন) র্যাব, পুলিশ, নৌবাহিনীর সমন্বয়ে ২৫৬ জন জনবল নিয়ে টেকনাফের গহীন পাহাড়গুলোতে দফায় দফায় সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে অভিযানিক দলের সদস্যরা। উক্ত অভিযানে গত চার দিন আগে অপহৃত হওয়া ভিকটিমকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
র্যাবের তথ্যসূত্রে জানা যায়, অপহরণ চক্রের সাথে জড়িত বহিষ্কৃত সাবেক এক সেনা সৈনিকসহ তিন জনকে আটক করা হয়েছে।
এদিকে রবিবার (১৫ জুন) বিকালের দিকে কক্সবাজার র্যাব-১৫ এর সহকারী পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) সহকারী পুলিশ সুপার আ.ম. ফারুক সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যম কর্মীদের জানিয়েছেন, গত ১১ জুন রাত ১১টার দিকে ১৫ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা রহিমুল্লাহর পুত্র হাফিজউল্লাহকে র্যাব সদস্য পরিচয় দিয়ে অপহৃত করে নিয়ে গেছে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা। রোহিঙ্গা এনায়েত উল্লাহ ও নবী হোসেনের সহায়তায় ভিকটিমকে নিজ বসতঘর থেকে ডেকে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গিখালী গহীন পাহাড়ে নিয়ে যায় চক্রটি। এরপর অপহৃতের পরিবারের কাছে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা।
গোপন সংবাদের এই তথ্য অনুযায়ী র্যাব-১৫ ভিকটিমের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই প্রেক্ষিতে গত শুক্রবার (১৩ জুন) বিকালে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাবের একটি দল রঙ্গিখালীতে অপহরণের অন্যতম প্রধান হোতা ডাকাত সর্দার শাহআলমের বাড়িতে হানা দিয়ে আফ্রিদি ও আব্দুল গফুর নামে দুজন সন্দেহভাজনকে আটক করে।
এরপর ধৃতদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শনিবার বিকেলে উখিয়ার মরিচ্যা বাজার থেকে বহিষ্কৃত সেনা সৈনিক সুমন মুন্সীকে আটক করে। এরপর সুমনের মাধ্যমে অপহরণকারী ডাকাত শাহ আলম, সন্ত্রাসী রাকিব এবং সন্ত্রাসী শিকদারকে ভিকটিম হাফিজউল্লাহকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য বার্তা পাঠানো হয়। তাতেও সাড়া দেয়নি এই চক্রটি।
অবশেষে ভিকটিমকে উদ্ধার করার জন্য রবিবার র্যাব, বিজিবি, পুলিশ, এপিবিএন ও বনবিভাগের সদস্যসহ সর্বমোট ২৫৬ জনবল নিয়ে ভিকটিমদের আটকে রাখার কয়েকটি সম্ভাব্য স্পট সনাক্ত করে গহীন পাহাড়ী এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে ভিকটিম হাফিজউল্লাহকে উদ্ধার করা হয়। এসময় ঘটনাস্থল থেকে একটি দেশীয় অস্ত্র, ৩ রাউন্ড অ্যামুনিশনসহ র্যাবের ইউনিফর্ম ও ওয়াকিটকি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
আটক বহিষ্কৃত সাবেক সেনা সৈনিক সুমন মুন্সী হচ্ছে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানি উপজেলার রাজপাট ইউনিয়নের ডুমরাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা আকবর আলী মুন্সীর পুত্র। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় ১১টি মামলা রয়েছে। আটক তিন সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা দায়ের করার জন্য টেকনাফ মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
এসআর