কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে ২২০ ফিট লম্বা বাঁশের সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বারোমাসিয়া নদীর দুপাড়ের হাজারও মানুষ। সব থেকে চরম ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে কোমলমতি শিশু, শিক্ষার্থীসহ নারীরা। এই চরম দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পেতে জরুরি ভিত্তিতে ভাঙা বাঁশের সাঁকোটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
কিশামত শিমুলবাড়ী এলাকার আহের আলী ও ঝাউকুটি এলাকার নুর ইসলাম জানান, এখানে বলার ভাষা নেই। সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ার প্রায় এক মাস হয়ে গেল। এখন পর্যন্ত ভাঙা সাঁকোটি মেরামতের জন্য কেউ-ই উদ্যোগ নেয়নি। আমরা প্রতিদিনই বাইসাইকেল কাঁধে নিয়ে বারোমাসিয়া নদী পারাপার হচ্ছি। আমাদের এই দুঃখ-কষ্ট দেখার কেউ নেই বলেও ক্ষোভ ঝাড়েন তিনি।
স্থানীয় মর্জিনা বেগম ও জাহানারা বেগম জানান, 'কী কই বাহে, তোমরাতো দেখতেছেন। আমরা বারোমাসিয়া নদীর পানি মাড়ি দিয়ে জ্বালানির কাজে ব্যবহার করা শুকনো খড়ি (লাকড়ি) মাথায় নিয়ে পার হচ্ছি। খালি ছবি তোলেন বাহে। আজ এক মাস ধরে এতো কষ্ট করে নদী পার হইতিছি, কেউয়ে খোঁজ নিতে আসেননি।'
লালমনিরহাট উপজেলার চর খারুয়া এলাকার বাসিন্দা তসলিম উদ্দিন জানান, 'আমাদের এলাকার শত শত মানুষজন এই পথেই নাওডাঙ্গার বালারহাট বাজারে নিয়মিত আসা যাওয়া করি। এছাড়াও আমাদের এলাকার ছেলে-মেয়েরা নাওডাঙ্গা বালারহাট আদর্শ স্কুলে পড়েন। সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ায় আমরা চরম দুর্ভোগে পড়েছি। ছেলেমেয়েদের নিয়েও খুব দুশ্চিন্তায় পড়েছি।'
চর খারুয়া এলাকার শিক্ষার্থী জুয়েল রানা, খারুয়া এলাকার মাসুদ রানা ও ঝাউকুটি এলাকার শিক্ষার্থী হাসানুর রহমান বলেন, 'এখন স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় মাঝে মাঝে সাঁতরিয়ে নদী পার হচ্ছি। কয়েকদিন পর স্কুল কলেজ খুলবে, তখনতো বই, খাতাপত্রসহ নদী সাঁতরিয়ে কিভাবে যাব এটাই এখন ভাববার বিষয়। তাই আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে সাঁকোটি মেরামতের দাবি জানাচ্ছি।'
বিশিষ্ট মৎস্য খামারি আতাউর রহমান রতন ও মজিবর রহমান বাবু জানান, 'নদী ওপারে আমরা মাছ চাষ করছি। সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছি। নদীর ওপারে আমাদের মৎস্য খামার রয়েছে। কিন্তু আমরা মাছের খাদ্য সামগ্রী পার করতে পারছি না। মাছও বিক্রি করতে পারছি না। দিনে যতবারই পারাপার হই, ততবারই নদী সাঁতরিয়ে যেতে হয়।'
নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হাছেন আলী জানান, 'আমাদের ৬ নং ওয়ার্ডে বারোমাসিয়া (বাণিদাহ) নদীতে একটি সাঁকো আছে। সেই সাঁকো দিয়ে দুপাড়ের হাজার হাজার মানুষ পারাপার হন। কিন্তু গত এক মাস আগে তীব্র স্রোতে সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ায় নদী পারাপারে চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হচ্ছে। স্কুলের ছেলে-মেয়েরা পাড় হতে পারছেন না। অনেকেই এক বুক পানিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পাড় হচ্ছেন। ভেঙে যাওয়া সাঁকোটি দ্রুত পূর্ণ:নির্মাণ করা এখন খুবই জরুরি। আর তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।'
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সিরাজউদ্দৌলা জানান, 'সরেজমিন পরিদর্শন করে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। এরপর বরাদ্দ আসলে সেখানে একটি বাঁশের সাঁকো পূর্ণ:নির্মাণ করা হবে।'