টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার বড়চওনা ইউনিয়নের বেলতলী-বিন্নাখাইড়া ভায়া বড়বাড়ী তিন কিলোমিটার দীর্ঘ কাঁচা রাস্তা দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। প্রতিদিন এই রাস্তায় যাতায়াত করেন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থীসহ শত শত মানুষ। তবে সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তাটিতে জমে যায় কাদা-পানি, ফলে চলাচল হয়ে পড়ে অত্যন্ত দুর্বিষহ। দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটি পাকা না হওয়ায় কয়েক এলাকার মানুষের জীবনে দুর্ভোগ আর দুঃখের যেন অবসান হচ্ছে না।
বুধবার (৬ আগস্ট) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সখীপুর উপজেলার বড়চওনা ইউনিয়নের বেলতলী-বিন্নাখাইড়া ভায়া বড়বাড়ী তিন কিলোমিটার দীর্ঘ কাঁচা রাস্তাটি বর্তমানে প্রায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও হাঁটুসমান কাদা জমে আছে। বিকল্প কোনো পথ না থাকায় বাধ্য হয়ে কাদামাটি পেরিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করছেন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, বৃদ্ধ, রোগীসহ সাধারণ মানুষ।
বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে দুর্ভোগ চরমে পৌঁছে। বৃষ্টির দিনগুলোতে কোনো অ্যাম্বুলেন্স, মাইক্রোবাস এমনকি ভ্যান বা রিকশাও এই রাস্তায় প্রবেশ করতে পারে না। মোটরসাইকেল বা বাইসাইকেল তো দূরের কথা, খালি পায়ে চলাচল করাও হয়ে ওঠে দুষ্কর। কেউ গুরুতর অসুস্থ হলে, কাঁধে তুলে কাদা মাড়িয়ে পার করতে হয় রোগীকে।
স্থানীয়দের দাবি, এটি একটি প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ পথ। এই রাস্তাই ভরসা কয়েকটি গ্রামের কৃষকদের জন্য, যারা ধান, কলা, কাঠাল, লেবু, শাকসবজি ইত্যাদি মৌসুমী কৃষিপণ্য বড়চওনা ও কুতুবপুর হাটে নিয়ে বিক্রি করেন। কিন্তু রাস্তার এই করুণ অবস্থার কারণে কৃষকরা সময়মতো বাজারে পৌঁছাতে পারেন না, ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে জনপ্রতিনিধিরা রাস্তাটি পাকাকরণের আশ্বাস দিলেও কোনো কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। তাঁরা অবিলম্বে এই কাঁচা রাস্তাটি পাকা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা কবির হোসেন বলেন, ‘আমরা ঠিকমতো হাটবাজারে যেতে পারি না। কৃষিপণ্য সময়মতো বিক্রি করতে পারি না। বাচ্চারা কষ্ট করে স্কুল-কলেজে যায়, বিশেষ করে বর্ষায় জুতা হাতে নিয়েই হেঁটে যেতে হয়।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য আশরাফ আলী জানান, সামান্য বৃষ্টিতেই কাদা জমে হাঁটাচলা দুরূহ হয়ে পড়ে। এছাড়া পাশের মাঠের সব ফসল এই রাস্তা দিয়েই ঘরে তোলা হয়। যোগাযোগ অব্যাহত রাখার জন্য এ রাস্তাটি পাকা করাটা জরুরি।
বিন্নাখাইড়া-যশীহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল গফুর বলেন, ‘প্রতিদিন শতাধিক শিক্ষার্থী এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে। কাদা ও দুর্ভোগের কারণে তাদের খুব সমস্যা হয়। জরুরি সেবার কোনো গাড়ি বা যেকোনো গাড়ি গ্রামে প্রবেশ করতে পারে না। কেউ মারা গেলে কাঁদার কারণে সৎকার, দাফন-কাফনে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। অসুস্থ কোনো ব্যক্তিকে দ্রুত হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। রাস্তাটি পাকাকরণ এখন সময়ের দাবি।
বড়চওনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম বলেন, 'রাস্তাটি পাকা না হওয়ায় এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। এই দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনার অবসান ঘটাতে দ্রুত রাস্তাটি পাকাকরণ প্রয়োজন। আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি।'
উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মো. আরিফুর রহমান বলেন, ‘রাস্তাটি নির্মাণের জন্য খুব শিগগিরই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল রনী বলেন, ‘বেলতলী-বিন্নাখাইড়া রাস্তাটি গুরুত্বপূর্ণ। এ বছর নতুন রাস্তার তালিকা হলে এর পাকাকরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এসএকে/আরআই