গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) আইন বিভাগের প্রভাষক মো. লিমন হোসেনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও নানাবিধ অনৈতিক আচরণের অভিযোগ তুলেছেন বিভাগটির বেশ কয়েকজন ছাত্রী।
রবিবার (৭ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে পৃথক লিখিত অভিযোগপত্র জমা দেন তারা।
উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ বরাতে জানা যায়, প্রভাষক মো. লিমন হোসেন শ্রেণিকক্ষে এবং নিজের কক্ষে অশোভন মন্তব্য করতেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ফেসবুকে আপত্তিকর বার্তা পাঠিয়ে নারী শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত জীবনে জোরপূর্বক হস্তক্ষেপ করতেন এবং সবার সামনে তাদের লজ্জিত করতেন। বার্তায় তিনি নিজের বৈবাহিক সমস্যা এবং ব্যক্তিগত যৌনজীবন নিয়ে আলোচনা করে শিক্ষার্থীদের অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলতেন। তিনি বলতেন যে তার স্ত্রী তাকে সন্তুষ্ট করতে পারেন না এবং তিনি যৌন জীবনে নিঃসঙ্গতায় ভুগছেন। এ ছাড়াও অনেক আপত্তিকর বিষয়েও লিখিত অভিযোগে আলোকপাত করেছেন বিভাগটির ছাত্রীরা।
শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আরেকটি অভিযোগপত্রে পাঁচটি দফা উপস্থাপন করা হয়। এতে বলা হয়, শিক্ষক লিমন হোসেন ধর্ষণে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের সশরীরে থানায় গিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করেছেন, অপরাধীকে বাঁচানোর চেষ্টাও অপরাধের শামিল; ক্লাসে পড়ানোর ছলে শিক্ষার্থীদের ব্যাক্তিগত জীবনে জোড়পূর্বক প্রবেশ করে শিক্ষার্থীর ব্যাক্তিগত বিষয় সকলের সামনে উপস্থাপন করে শিক্ষার্থীদের হেয় করেন তিনি; একজন শিক্ষক হিসেবে তার পড়ানোর পদ্ধতি কোনভাবেই গবেষণাকেন্দ্রিক নয়, উল্টো গলাদ্ধকরণ পদ্ধতিতে বিশ্বাস করেন তিনি, যা শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল মেধাকে বিনষ্ট করেন; স্বজনপ্রীতি নীতি ব্যবহার করে ব্রিটিশ পদ্ধতি Divide and Rule policy প্রয়োগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করেন তিনি, যা পরবর্তীতে বড় অপরাধের জন্ম দেয় এবং ক্যাম্পাসে বিগত দিনে ঘটে যাওয়া প্রায় সব অপরাধের সঙ্গে জড়িত চক্রের সঙ্গে, এমনকি সম্প্রতি বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও প্রভাষক লিমন হোসেনের একান্ত সম্পর্কে বিদ্যমান এবং তাদের প্রকাশ্য মদদদাতা তিনিই, যা শিক্ষার্থী মনে ক্রমশ ভীতি সঞ্চারণ করে যাচ্ছে।
রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলনায়তনে শিক্ষার্থীরা এসব অভিযোগের বিস্তারিত তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। অনেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন যে তিনি মানুষের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অতিরিক্ত আগ্রহী, যা বিব্রতকর। এমনকি নিজের প্রেম ও বিচ্ছেদের গল্প বারবার বলে শিক্ষার্থীদের অস্বস্তিতে ফেলেন। শিক্ষার্থীরা কার সাথে মেলামেশা করবে, সেটাতেও তিনি হস্তক্ষেপ করেন।
এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে লিমন হোসেন বলেন, ’এ ধরণের অভিযোগের বিষয়ে আমি অবগত নই। আমি এ ধরনের কোনো কথা বলি নাই। এ ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন।’
তিনি এও বলেন, ’আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্যে আমার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ তোলা হয়েছে।’
এ নিয়ে যৌন নিপীড়ন-বিরোধী সেলের প্রধান ড. ওয়াহিদা জামান লস্কর বলেন, ’আজই আমাকে যৌন নিপীড়ন-বিরোধী সেলের সভাপতির দায়িত্বের বিষয়ে প্রশাসন থেকে চিঠি প্রদান করা হয়েছে। তবে উপাচার্যের কাছে প্রদানকৃত অভিযোগপত্রের বিষয়ে এখনো অবগত নন তিনি।’
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে ধর্ষণের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য ৭ দিন সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তদন্ত চলাকালীন আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. রফিকুল আলম ও প্রভাষক লিমন হোসেনকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এই সময়ে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে তাদের।
তদন্ত কমিটিতে ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. জহিরুল ইসলাম খানকে সভাপতি ও বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আবু রায়হানকে সদস্য সচিব করা হয়েছে।
এনআই