বরগুনার আমতলী উপজেলার অনুদানপ্রাপ্ত পাঁচটি মাদ্রাসাসহ ৭৬টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসায় বাস্তবে কোনো শিক্ষার্থী নেই। কাগজে-কলমে হাজারো ছাত্র দেখালেও পরীক্ষার সময় ধার করা শিক্ষার্থী এনে চালানো হচ্ছে কার্যক্রম। এলাকাবাসীর দাবি এ অনিয়মের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
জানা গেছে, আমতলী উপজেলায় অনুদানভুক্ত পাঁচটিসহ মোট ৭৬টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা রয়েছে। অনুদানপ্রাপ্ত মাদ্রাসাগুলো হলো পূর্ব চিলা হাসানিয়া, মধ্য পাতাকাটা আমানদিয়া, উত্তর ঘোপখালী, মোহাম্মদপুর মাহমুদিয়া নাচনাপাড়া ও কুতুবপুর ইসরাইলিয়া ইবতেদায়ী মাদ্রাসা।
গত দুই-তিন বছরে এসব মাদ্রাসায় কোনো শিক্ষার্থীই উপস্থিত হয়নি। শিক্ষকরা শুধু কাগজে-কলমে শিক্ষার্থী দেখিয়ে আসছেন। বাস্তবে ঘরগুলো প্রায়ই তালাবদ্ধ থাকে; শিক্ষক উপস্থিত হলেও স্বাক্ষর করে ফিরে যান।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের নথিতে ৭৬টি মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী দেখানো হয়েছে ৯,৫০০ জন। অথচ বাস্তবে দুই-একটি ছাড়া কোনো মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী নেই। বিগত ২০ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া পরীক্ষায় বেশিরভাগ মাদ্রাসার কোনো শিক্ষার্থী অংশ নেয়নি; কোথাও মাত্র একজন-দু’জন করে পরীক্ষার্থী পাওয়া গেছে।
কুতুবপুর ইসরাইলিয়া মাদ্রাসায় পরীক্ষার্থী রয়েছে মাত্র দুইজন। আয়শা আক্তার জুই (চতুর্থ শ্রেণি) ও সিয়াম (তৃতীয় শ্রেণি)। এ মাদ্রাসায় পরীক্ষার সময় স্থানীয় কয়েকজন বিদ্যালয় পড়ুয়া শিশুকে এনে মাদ্রাসায় বসানো হয় ‘দেখানোর’ জন্য। এ সময় শ্রেণিকক্ষে ছিলেন খণ্ডকালীন শিক্ষক খাদিজা।
মধ্য পাতাকাটা আমানদিয়া মাদ্রাসায় পরীক্ষায় অংশ নেয়নি কেউ। মাহিন নামে এক ছাত্র কলাপাড়া হাফিজিয়া মাদ্রাসায় পড়ে; তবুও তাকে এখানে এনে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ মাদ্রাসার ইবতেদায়ী প্রধান মাওলানা বশির আহম্মেদ সাফ জানিয়ে দেন, ‘আমার মাদ্রাসায় কোনো শিক্ষার্থী নেই।’
মোহাম্মদপুর মাহমুদিয়া মাদ্রাসায় গেলে দেখা যায় মাদ্রাসাটি তালাবদ্ধ। স্থানীয়রা জানান, কবে সর্বশেষ মাদ্রাসা খোলা ছিল তা কেউই বলতে পারেন না। অথচ কাগজে কলমে সেদিন চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বিজ্ঞান এবং তৃতীয় শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় পরীক্ষা ছিল।
আমতলী স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সভাপতি মাওলানা আলাউদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, ‘অনুদানপ্রাপ্ত পাঁচ মাদ্রাসার শিক্ষকরা ছয় মাস ধরে বেতনভাতা পান না। এ অবস্থায় মাদ্রাসা চালানো অসম্ভব।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার বলেন, ‘মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ প্রশ্নপত্র তৈরি করে। আমাদের কেবল পরীক্ষা তারিখ নির্ধারণ করা থাকে। মাদ্রাসায় পরীক্ষার্থী আছে কি না তা আমার জানা নেই।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জিয়াদুল হাসান জানান, ‘অনুদানপ্রাপ্ত পাঁচটি মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী আছে কি না জানি না। বাকিগুলো কাগজে-কলমে রয়েছে, বাস্তবে নেই।’
এসএম