এইমাত্র
  • ঝিনাইদহে নসিমন চালককে কুপিয়ে হত্যা
  • দেশে তীব্র শৈত্যপ্রবাহের আভাস
  • যশোরে পোষা কুকুর-বিড়ালে আক্রান্ত বাড়ছে, টিকা সংকট
  • সব ঠিক থাকলে খালেদা জিয়াকে লন্ডন নেওয়া হবে রোববার
  • নওগাঁয় মাদকসহ ১ জন গ্রেপ্তার
  • বিএনপির মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে অগ্নিসংযোগ-বিক্ষোভ-সড়ক অবরোধ
  • নোয়াখালী প্রেসক্লাবে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া
  • ঢাকার পথে ডা. জুবাইদা রহমান
  • কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবর্তন নবান্ন উৎসব-১৪৩২ উদযাপন
  • জামালপুরে ট্রাকচাপায় প্রাণ গেল চাচা-ভাতিজার
  • আজ শুক্রবার, ২১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ | ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    ২৭ বছরেও হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি

    এক মাসের আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে ৫ বছর পার, ভূঞাপুর যুবদলে অস্থিরতা

    রবিউল ইসলাম প্রকাশ: ৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম
    রবিউল ইসলাম প্রকাশ: ৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম

    এক মাসের আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে ৫ বছর পার, ভূঞাপুর যুবদলে অস্থিরতা

    রবিউল ইসলাম প্রকাশ: ৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম

    টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলা যুবদলে টানা ২৭ বছরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। ১৯৯৮ সালে সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর থেকেই সংগঠনটি চলছে আহ্বায়ক কমিটির ওপর ভর করে। এমনই একটি এক মাস মেয়াদী আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয় ২০২০ সালের মার্চে, যা সাড়ে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বহাল রয়েছে।

    জানা গেছে, ২০২০ সালের ১৬ মার্চ জেলা যুবদলের তৎকালীন আহ্বায়ক আশরাফ পাহেলীর অনুমোদনে খন্দকার জুলহাস উদ্দিনকে আহ্বায়ক এবং অর্নিবান আমির দুখুকে সদস্য সচিব করে ভূঞাপুর উপজেলার আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে একজন সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক, পাঁচ জন যুগ্ম আহ্বায়ক এবং ২৩ জন সাধারণ সদস্য রাখা হয়। কমিটির মেয়াদ এক মাসের জন্য নির্ধারিত ছিল এবং শর্ত ছিল, কমিটি ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।

    সেই সময় নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সকল ইউনিয়নের সম্মেলন সম্পন্ন করে উপজেলা সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করতে হবে। যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্মেলন সম্পন্ন না হয়, তবে ওই আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হবে এবং জেলা কমিটির নেতৃত্বে সম্মেলন আয়োজন করা হবে। পাশাপাশি, ওই আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক পরবর্তী কমিটির প্রার্থী হতে পারবেন না বলে শর্ত আরোপ করা হয়েছিল। তবে সেই একমাস মেয়াদী আহ্বায়ক কমিটি এখন সাড়ে পাঁচ বছর ধরে বহাল রয়েছে, যা শুরুর শর্তের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

    এদিকে দীর্ঘদিন ধরে সমন্বিত ও বৈধ কমিটি না থাকায় সংগঠনের স্বাভাবিক নেতৃত্ব কাঠামো ভেঙে পড়েছে। বহু নির্যাতিত ও ত্যাগী নেতা বছর পার হয়ে গেলেও পদবঞ্চিত রয়েছেন। নতুন প্রজন্মও নেতৃত্বের সুযোগ পাচ্ছে না। একই সঙ্গে একাধিক নেতা যুবদল ও বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদে দ্বৈত দায়িত্ব পালন করায় দলের গঠনতন্ত্র ভঙ্গ হচ্ছে।

    উপজেলা যুবদলের অন্তত পাঁচজন যুগ্ন আহ্বায়কের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। তাদের অভিযোগ- দীর্ঘদিন ধরে একই পদে থাকার কারণে দুই-একজন নেতা একনায়কতন্ত্র কায়েম করেছেন। এর ফলে দলের ভেতরে মতপার্থক্য বাড়ছে এবং সাধারণ কর্মীরা হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ছেন।

    শুধু উপজেলা যুবদল নয়, পৌরসভা যুবদলের পরিস্থিতি আরও সংকটজনক। দীর্ঘদিন ধরে আহ্বায়ক বহিস্কৃত থাকায় এই গুরুত্বপূর্ণ শাখাটি বর্তমানে এক সিনিয়র যুগ্ন আহ্বায়কের নেতৃত্বে কার্যত পরিচালিত হচ্ছে। এর ফলে সাংগঠনিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং দলীয় কর্মকাণ্ড ঝিমিয়ে পড়ার অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

    নেতৃত্ব স্থবিরতায় তীব্র ক্ষোভ:

    থানা ও পৌর যুবদলের বেশ কয়েকজন নেতা জানান, তিন বছরের মেয়াদি পূর্ণাঙ্গ কমিটির বদলে এক, দুই মাসের আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে একজন বা দুজন ব্যক্তি ১০–১৫ বছর ধরে একই পদে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এতে নেতৃত্বের স্বাভাবিক রোটেশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, মাঠের কর্মীরা সামনে আসতে পারছেন না।

    এরমধ্যে যুবদলের আহ্বায়ক খন্দকার জুলহাস উদ্দিন বর্তমানে উপজেলা বিএনপির যুব বিষয়ক সম্পাদক, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল আলিম চকদার উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং যুগ্ম আহ্বায়ক ইব্রাহীম খলিল তরফদার (স্বপন) উপজেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক।

    শুধু তাই নয়, খন্দকার জুলহাস উদ্দিন, আব্দুল আলিমসহ কয়েকজন নেতা দীর্ঘদিন ধরে যুবদলের আগের ৯ বছরের কমিটিতেও ছিলেন। অর্থাৎ তারা দীর্ঘ ১৬ বছরের বেশি সময় ধরে যুবদলের পদে বসে আছেন। এই ধরনের গঠনতন্ত্রবিরোধী দ্বৈতপদ ধারনের বিষয়টি নেতাকর্মীদের ব্যাপক ক্ষোভের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    এক যুগ্ম আহ্বায়ক বলেন, 'দীর্ঘদিন কমিটি না থাকায় অনেক নির্যাতিত নেতাই আজ পদহীন। নির্দিষ্ট মেয়াদের কমিটি হলে তারা ধাপে ধাপে নেতৃত্বে আসতে পারত। কিন্তু এখানে একজনের নামে একই পদ ১৫–১৬ বছর ধরে চলছে।'

    বর্ধিত সভা নিয়েও বিতর্ক:

    গত ৩ নভেম্বর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও টাঙ্গাইল-২ আসনের প্রার্থী এডভোকেট আব্দুস সালাম পিন্টু যুবদলের বর্ধিত সভা ডাকেন। কিন্তু আহ্বায়ক জুলহাস উদ্দিন অসুস্থতার কথা বলে সভায় উপস্থিত হননি।

    নেতাদের দাবি- আসলে জুলহাস ভাবছিলেন, ওই সভায় পুরোনো কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি ঘোষণা হতে পারে, তাই ইচ্ছাকৃতভাবে উপস্থিত হননি। সেই থেকেই সংগঠনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য হয়ে পড়েছে।

    নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন যুগ্ম আহ্বায়ক বলেন, জুলহাস অসুস্থ বলে বর্ধিত সভায় থাকেননি। এক প্রকার থানা যুবদল অনুষ্ঠান বয়কট করেছে বলা চলে। তিনি ভেবেছিলেন কমিটি ভেঙে নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা হবে। তাই আসেননি। এটা থানা জুড়ে ওপেন সিক্রেট।

    যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক খন্দকার জুলহাস উদ্দিন বলেন, যে মতবিনিময় সভার কথা বলা হচ্ছে, সেদিন আমার ব্যক্তিগত সমস্যা ছিল। আমি নিজেই দুই দিন পর তারিখ দেওয়ার অনুরোধ করেছিলাম। আর পৌরসভার একটি অংশ নিয়মবহির্ভুত ওয়ার্ড কমিটি গঠনের প্রতিবাদ করায় তাদের সঙ্গে কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। ফলে এগুলো ছড়ানো হয়েছে।

    কী বলছেন যুগ্ম আহ্বায়করা?:

    যুগ্ম আহ্বায়ক তৌহিদুল ইসলাম বিদ্যুৎ বলেন, নির্বাচনের আগে যুবদলের সাংগঠনিক কোনো কার্যক্রম হচ্ছে না। কমিটি দরকার, কিন্তু কয়েকজনের কারণে সেটি হচ্ছে না। তিনি সালাম ভাইসহ জেলা যুবদলকে জানিয়ে এসেছেন, কিন্তু কেউ সাড়া দিচ্ছে না।

    তিনি অভিযোগ করেন, ব্যক্তিগতভাবে নিজেদের মতো লোকজন দিয়ে সব চালানোর কারণে সমন্বয়হীনতা তৈরি হয়েছে।

    যুগ্ম আহ্বায়ক রাজিব হোসেন কফিল বলেন, আমি বারবার থানা ও পৌর বিএনপির কাছে কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছি। কিন্তু তারা প্রতিবার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথা বলছে। ‘দিতেছি, দিচ্ছি’ বলে গড়িমসি করছে। জেলাতেও কথাবার্তা হয়েছে, কিন্তু সেখান থেকেও কোনো কার্যকর সাড়া পাইনি। এখন যাকে দিয়েই করুক, আমরা চাই অন্তত একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হোক।

    তিনি বলেন, কমিটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া; দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না থাকায় অনেক নির্যাতিত নেতা পদহীন থেকে গেছেন। যদি নির্দিষ্ট মেয়াদি কমিটি থাকত, তাহলে এসব নির্যাতিত নেতারা ধাপে ধাপে পদবিতে আসতে পারত।

    আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক শরিফুল কবীর রঞ্জু বলেন, অনেকবার পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার কথা বলেছি। কিন্তু দিচ্ছে না। আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে সব পরিচালনা সম্ভব নয়। পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলে দল শক্ত হবে, নির্বাচনেও ভালো হবে।

    এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক যুগ্ম আহ্বায়ক বলেন, আহ্বায়ক মনে করেন তিনি-ই সব। পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব আসবে- এটা না চেয়েই তিনি কমিটি আটকে রেখেছেন। ফলে যুবদল কুখ্যাত অবস্থায় পড়ে আছে।

    নেতাদের মনোভাব:

    উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক খন্দকার জুলহাস উদ্দিন সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, কমিটি ঘোষণার পর থেকে ওয়ার্ড থেকে উপজেলাভিত্তিক যুবদলকে সুসংগঠিত করেছি। কিন্তু শুরু থেকেই একটি মহল আমাকে অসহযোগিতা করছে। তারা কখনোই সহযোগিতা করে না, উল্টো বাধা সৃষ্টি করে।

    প্রতিপক্ষের অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করে তিনি বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু সেটি সময়সাপেক্ষ। দলের ভেতরে কিছু কুচক্রী মহল আছে পদের লোভে তারা দলের জন্য কাজ না করে সমালোচনায় ব্যস্ত থাকে। তারাই এসব অভিযোগ ছড়াচ্ছে।

    জানতে চাইলে টাঙ্গাইল জেলা যুবদলের আহ্বায়ক খন্দকার রাশেদুল আলম রাশেদ সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, কেন্দ্রের নির্দেশনায় ওয়ার্ড থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত কমিটি প্রায় সম্পন্ন। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব উপস্থিত থাকলে জেলা–উপজেলায় সম্মেলন করা যেত, কিন্তু ২০২৪ সালের আন্দোলনের কারণে তা হয়নি।

    তিনি বলেন, এখন শুধু সম্মেলনের তারিখ দরকার। ভূঞাপুরে কমিটি হওয়া জরুরি। পৌর কমিটির অবস্থাও ভালো না, আহ্বায়ক বহিষ্কৃত। নির্বাচনের আগেই ভূঞাপুরের সম্মেলনের তারিখ দেওয়া হবে।

    দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়ায় সংগঠনে নেতৃত্বের সংকট তৈরি হয়েছে স্বীকার করে তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বের যোগ্যতা আছে, কিন্তু তা প্রতিফলন ঘটছে না। ফলে তৃণমূলে কিছুটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে।

    যুবদল কমিটি গঠনে বিএনপির অবস্থান কী?:

    ভূঞাপুর উপজেলা যুবদলের দীর্ঘদিনের স্থবির কমিটি নিয়ে বিএনপির নেতাদের সঙ্গে কথা হলে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেলিমুজ্জামান তালুকদার সেলু জানান, বর্তমানে যুবদলের কমিটি পুনর্গঠন বা অনুমোদনের বিষয়ে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত তাদের জানা নেই।

    তিনি বলেন, দুই-আড়াই বছর আগে ওয়ার্ড ও ছয়টি ইউনিয়নে কমিটি গঠন হয়েছিল, তবে সম্মেলন না হওয়ায় তা অনুমোদিত হয়নি। যারা দীর্ঘদিন আন্দোলন করেছে, তাদের নতুন কমিটির প্রয়োজনীয়তা স্বাভাবিক। বর্তমানে সাংগঠনিক কোনো নির্দেশনা তাদের কাছে আসেনি, নির্বাচনের পর হয়তো দল নতুন কমিটি গঠনের ব্যাপারে চিন্তা করবে।

    এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম পিন্টু সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, যুবদলের সম্মেলন অনেক আগে হয়েছে, ফলে নতুন নেতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে এখনই পুরোনো কমিটি ভেঙে তিনি নতুন কমিটি করার পক্ষে নন।

    তিনি বলেন, যুবদলে নতুন লোক এসেছে, তারাও নেতৃত্বে আসতে চায়। কিন্তু আমি এতদিন জেলে ছিলাম, বের হয়ে সকলের সঙ্গে বিভিন্ন বৈঠক করেছি। দীর্ঘদিনের পুরোনো কমিটি আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছে। তাই এখন ভেঙে ফেলার পক্ষে আমি নই; বরং নিয়মতান্ত্রিক নতুন যুবদল গড়তে চাই।

    এসকে/আরআই

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    চলতি সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

    Loading…