অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশ আমাদের সবার। মতপার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু ইসলামের বিষয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। বিভেদ সমাজকে ধ্বংস করে, আর ঐক্য জাতিকে শক্তিশালী করে তোলে।
তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ দ্রুত অগ্রগতি অর্জন করছে। যদি দেশে দুর্নীতি বন্ধ করা যায় এবং সম্পদ বিদেশে পাচার রোধ করা যায়, তাহলে বাংলাদেশ আরও বহু দেশকে পেছনে ফেলতে পারবে। যারা দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে তারা দেশপ্রেমিক নয়, আমরা সত্যিকারের দেশপ্রেমিক প্রজন্ম গড়ে তুলতে চাই। বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় কুমিল্লা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে কুমিল্লা আল কুরআন একাডেমির আয়োজনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ক্বিরাত সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব বলেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, কারাগার সংস্কার ও কোরআন শিক্ষার প্রসারে সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি জানান, তিনি দেশের দুটি বড় কারাগার পরিদর্শন করেছেন যেখানে বন্দীদের জন্য কোরআন শিক্ষার ব্যবস্থা আরও বৃদ্ধি করা হয়েছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কোরআন শিক্ষাকেন্দ্রে বর্তমানে ৩৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তিনি বলেন, যদি তারা সাহাবায়ে কেরামদের জীবন পড়ে, তাদের মধ্যেও ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
ড. খালিদ হোসেন আরও বলেন, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কোরআনের আলোকে জীবন গঠন করতে হবে। কোরআন থেকে দূরে সরে গেলে প্রকৃত দেশপ্রেম অর্জন সম্ভব নয়। প্রকৃত দেশপ্রেমিক কখনো দেশের টাকা বিদেশে পাচার করবে না। তিনি জানান, খুব শিগগিরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কারাগারগুলোতে লক্ষাধিক ধর্মীয় গ্রন্থ হস্তান্তর করা হবে।
সম্মেলনে ইসলামী ঐক্যের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর আলেম-ওলামাদের সামনে সুযোগ এসেছে নেতৃত্বে আসার। এবার ভুল করলে আরও ৫৪ বছর অপেক্ষা করতে হবে।
এসময়, পাঁচ দেশের খ্যাতনামা ক্বারীদের তিলাওয়াতে মুখরিত হয়ে উঠেছিল কুমিল্লা নগরী। আন্তর্জাতিক এই ক্বিরাত সম্মেলনে তিলাওয়াত পরিবেশন করেন বাংলাদেশের ক্বারি শাইখ আহমাদ বিন ইউসুফ আযহারী, মিশরের শাইখ আহমাদ আল জাওহারী, পাকিস্তানের ক্বারি আনওয়ারুল হাসান শাহ বুখারী, ইরানের ক্বারি মাহদী গোলাম নেযাদ এবং ফিলিপাইনের ক্বারি মুহাম্মদ নাজীর আসগার। তাদের অপূর্ব তিলাওয়াতে মুগ্ধ হয়ে হাজারো মুসল্লি সম্মেলনস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কুমিল্লা আল কোরআন একাডেমির সভাপতি আলহাজ্ব মু. নূরুদ্দিন আহমদ। সঞ্চালনা করেন সেক্রেটারি ড. মুজাহিদুল ইসলাম। অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন তামিরুল উম্মাহ ট্রাস্টের সভাপতি কাজী দ্বীন মোহাম্মদ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ইনসাফ গ্রুপের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কেএম এমদাদুল হক মামুন, কুমিল্লা মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি মাহবুবুর রহমান, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ভিপি আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিম, এবিপার্টি কুমিল্লা জেলা সভাপতি মিয়া মোহাম্মদ তৌফিক, অর্থ সম্পাদক ফয়েজ আহম্মেদ, গোমতী হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. মজিবুর রহমান, ভিক্টোরিয়া কলেজের জিএস সানাউল্লাহ মজুমদারসহ আরও অনেকে।
সম্মেলনে ক্বিরাত প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। নারীদের জন্য কুমিল্লা হাই স্কুল মাঠে পৃথকভাবে অনুষ্ঠান উপভোগের বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আন্তর্জাতিক ক্বিরাত সম্মেলনকে ঘিরে কুমিল্লা নগরী ধর্মীয় আবেগ, সৌহার্দ্য ও ঐক্যের বার্তায় এক অনন্য পরিবেশে রূপ নেয়।
এনআই