এইমাত্র
  • বিপিএলের স্থগিত হওয়া দুই ম্যাচের নতুন সূচি প্রকাশ
  • খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ক্রীড়াঙ্গনে শোকের ছায়া
  • পানিসংকট ও খাল দখলে বিপর্যস্ত বাগেরহাট–রামপালের কৃষি‎
  • জকসু নির্বাচন ৬ জানুয়ারি
  • খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সাকিবের পোস্ট
  • টানা তিন দিন ধরে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নিকলীতে
  • ব্যাংক ঋণের আদলে ক্ষুদ্রঋণেও চালু হচ্ছে এমএফ-সিআইবি সিস্টেম
  • খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে রাষ্ট্রের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে: রাষ্ট্রপতি
  • খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, বুধবার সাধারণ ছুটি
  • খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শেখ হাসিনার শোক
  • আজ মঙ্গলবার, ১৬ পৌষ, ১৪৩২ | ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    টানা তিন দিন ধরে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নিকলীতে

    সাব্বির হোসেন, কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:২২ পিএম
    সাব্বির হোসেন, কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:২২ পিএম

    টানা তিন দিন ধরে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নিকলীতে

    সাব্বির হোসেন, কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:২২ পিএম

    টানা তৃতীয় দিনের মতো কিশোরগঞ্জের নিকলীতে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। উত্তরের হিমেল বাতাসে শীতের তীব্রতা বাড়ছেে এ অঞ্চলে। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষ। জীবিকার তাগিদে মাঠে-ঘাটে কাজ করতে গিয়ে হাড়কাঁপানো শীতে চরম কষ্ট পোহাতে হচ্ছে তাদের।

    মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে হাওর অধ্যুষিত এই উপজেলায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে নিকলীতে দেশের সর্বনিম্ন ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। আর গত রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে এখানে তাপমাত্রা নেমে আসে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা সেদিন দেশের সর্বনিম্ন ছিল।

    বেলা ১১টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, আজও সারা দেশের মধ্যে নিকলীতেই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রবিবার ও সোমবারের তুলনায় শীতের তীব্রতা সামান্য কমলেও জেলার ওপর দিয়ে এখনও মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। চলতি মাসজুড়ে শীতের প্রভাব অব্যাহত থাকতে পারে এবং শীতের অনুভূতি কমার তেমন সম্ভাবনা নেই। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষজন। পাশাপাশি জেলার হাওরাঞ্চলে বোরো ধান আবাদের মৌসুম চলায় কৃষকরাও বাড়তি দুর্ভোগে পড়েছেন।

    স্থানীয়রা জানান, হিম বাতাস ও ঘন কুয়াশার কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শীতের কারণে বেশি দুর্ভোগে রয়েছে খেটে খাওয়া ও ছিন্নমূল মানুষগুলো। সাধারণ মানুষ প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। সড়কে মানুষের উপস্থিতি তুলনামূলক কম। শীত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে মানুষ খড়-কুটোয় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে শীতের তীব্রতা বাড়ায় হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে ঠাণ্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা। জ্বর, হাঁচি, কাশি ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছেন অনেকে। তাদের মধ্যে শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যাই বেশি।

    বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হালকা কুয়াশার সঙ্গে বইছে উত্তরের ঝিরিঝিরি হিমেল বাতাস। রাতভর টিপটিপ বৃষ্টির মতো ঝরা কুয়াশায় ভিজে গেছে পথ। সকালের হাড় কাঁপানো শীতের মধ্যেই কর্মজীবী মানুষজনের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে। মোটা জ্যাকেট, মাফলারে ঢেকে মানুষজনকে জবুথুবু হয়ে পথ চলতে দেখা যায়। হাড় কাঁপানো শীতে ঘর থেকে বের হননি অনেকে। তবে ঘর থেকে বের হয়েও কাজ মিলছে না শ্রমজীবী মানুষের। তীব্র শীত আর একটানা কুয়াশার কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন শিশু ও বৃদ্ধারা। প্রতিনিয়তই সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা।

    কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের আখড়া বাজার এলাকায় প্রতিদিন অর্ধশতাধিক মানুষ শ্রম বিক্রির জন্য জড়ো হয়ে থাকেন। প্রচণ্ড শীতে সেই সংখ্যা অর্ধেকে এসে দাঁড়িয়েছে। তারপরও কাজ না পাওয়ায় অনেকেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। কিছু মানুষ অনেক বেলা অবধি অপেক্ষা করছেন কাজের আশায়। এসময় কথা হয় মিজান মিয়া নামের এক দিনমজুর বলেন, ‘ভোরে ঘুম থেকে উঠে কাজের জন্য শহরে আসতে হয়। এত শীতে সাইকেল চালিয়ে শহরে পৌঁছানো কষ্টের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। হাত অবাস হয়ে পড়ে। শীতে কাজও তেমন একটা নেই। মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। সেই জন্য কাজও পাচ্ছি না। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে কাজ না পেয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।

    সদর উপজেলার কৃষক আলাল মিয়া বলেন, স্বাভাবিক সময়ে তাঁরা মাঠে যান সকাল ৭টার আগে। কয়েক দিনের ঘন কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহের কারণে এখন মাঠে যেতে ৯টা থেকে ১০টাও বেজে যাচ্ছে। এখন মাঠে বোরো ধান রোপণ ও পরিচর্যার কাজ চলছে।

    রিকশা চালক তাহের মিয়া বলেন, ‘সময় এখন প্রায় দুপুর ২টা। সূর্যের আলো এখনো দেখা যায়নি। অন্যদিনে এ সময়ের মধ্যে তিন থেকে চারশো টাকা রোজগার হতো। আর আজকে এখন পর্যন্ত একশ টাকায় কামাই করতে পারিনি। শীতের কারণে লোকজন বাহিরে বের হচ্ছে না। পরিবার পরিজনদের নিয়ে খুব খারাপ সময় পার করছি।’

    মালবাহী ট্রাকচালক সোহেল বলেন, ‘কুয়াশার কারণে সড়ক দেখা যায় না। সে কারণে হেডলাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। গাড়ির গতি সামান্য রেখে চালাতে হয়। আর এ কারণে সময়মতো মালামাল পৌঁছে দিতে পারছি না।’

    জেলা শহরের কাঁচাড়ি বাজারের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শামীম বলেন, ‘শীতের জন্য মানুষ কম চলাচল করছে বাইরে। দোকান খোলা থাকলেও বিক্রি নেই। যাদের প্রয়োজন তারাই বাজারে আসছেন। শীতের তীব্রতা অনেক বেশি দিনে ও রাতে।

    নিকলী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম মাসুম জানান, আগামীকাল বুধবার শীতের তীব্রতা সামান্য বাড়তে পারে। জেলার ওপর দিয়ে বর্তমানে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। চলতি মাসজুড়েই শীতের প্রভাব থাকবে এবং শীতের অনুভূতি কমার সম্ভাবনা নেই। তিনি আরও জানান, আগামীকাল তাপমাত্রা আরও কিছুটা কমতে পারে।

    এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আসলাম মোল্লা বলেন, গত এক সাপ্তাহ ধরে হাওর-অধ্যুষিত কিশোরগঞ্জে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা ধারাবাহিকভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ করে যাচ্ছেন। আমরা যারা বাসায় থেকে শীত অনুভব করছি, ছিন্নমূল মানুষের ক্ষেত্রে সেই কষ্ট আরও বেশি। সে কারণে যেখানে ভাসমান মানুষ রয়েছে, সেখানে কয়েক দিন ধরেই কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে।

    পিএম

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    Loading…