ময়মনসিংহের ত্রিশালে জেঁকে বসেছে হাড়কাঁপানো শীত। হিমেল হাওয়া আর ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে জনপদ। প্রকৃতির এই বৈরী রূপ থেকে বাঁচতে সাধারণ মানুষের মধ্যে শুরু হয়েছে শীতবস্ত্র কেনার ধুম। চড়া দামের কারণে শোরুম ছেড়ে সাধারণ মানুষের প্রধান গন্তব্য এখন ফুটপাতের অস্থায়ী দোকানগুলো। সাধ্য আর সাধের সমন্বয় ঘটাতে এসব দোকানে এখন তিল ধারণের ঠাঁই নেই।
সরেজমিনে ত্রিশাল পৌর শহরের মেইন রোড ও আলিয়া মাদ্রাসা মোড় ঘুরে দেখা যায়, রাস্তার দু’পাশে সারিবদ্ধভাবে বসেছে শীতবস্ত্রের ভ্রাম্যমাণ দোকান। রঙ-বেরঙের জ্যাকেট, সোয়েটার ও কম্বলের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। নিম্নবিত্তের পাশাপাশি মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোকেও দেখা যাচ্ছে এখান থেকে প্রয়োজনীয় কাপড় কিনতে। এছাড়াও পৌর শহরের সানাউল্লাহ মার্কেট, হুমায়ুন সিটি কমপ্লেক্স, রাজমণি মার্কেটসহ বিভিন্ন কাপড়ের দোকানে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
বাজার করতে আসা রিকশাচালক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, “কয়েকদিন ধরে যে ঠান্ডা পড়ছে, সোয়েটার ছাড়া বাইরে বের হওয়া যাচ্ছে না। বড় দোকানে কাপড়ের যে আগুন দাম, আমাদের মতো মানুষের সেখানে যাওয়ার সাধ্য নেই। এখানে দুই-তিনশ টাকায় ভালো গরম কাপড় পাওয়া যায়।”
গৃহিণী শামীমা আক্তার সন্তানদের জন্য কানটুপি ও মোজা কিনতে এসেছেন। তিনি জানান, “ফুটপাতের দোকানে অনেক সময় খুব ভালো মানের বিদেশি কাপড় পাওয়া যায়। একটু সময় নিয়ে খুঁজলে বড় শোরুমের চেয়েও টেকসই জিনিস এখানে কম দামে মেলে।”
বিক্রেতারা জানান, নভেম্বর মাসে বেচাকেনা কম থাকলেও গত কয়েকদিনের তীব্র শীতে বিক্রি কয়েকগুণ বেড়েছে। ব্যবসায়ী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দম ফেলার সময় পাচ্ছি না। এবার কাপড় কিনতে খরচ বেশি পড়লেও আমরা ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে দাম রাখার চেষ্টা করছি। বিশেষ করে শিশুদের কাপড়ের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।”
এদিকে শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এলাকায় সর্দি, কাশি ও হাঁপানিসহ নানা ঠান্ডাজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী, শিশু ও বৃদ্ধদের সুরক্ষায় বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন। সেই সতর্কতা থেকেই মানুষ এখন ভিড় জমাচ্ছেন গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে।
স্থানীয়দের মতে, ত্রিশালের ফুটপাতের এসব বাজার শুধু কেনাকাটার কেন্দ্র নয়, বরং নিম্ন ও স্বল্প আয়ের মানুষের শীত নিবারণের অন্যতম ভরসাস্থল। রাত যত বাড়ছে, শীতের তীব্রতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ফুটপাতের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের আনাগোনা ততই বাড়ছে।
এনআই