ইরানের দক্ষিণাঞ্চলে একটি সরকারি ভবনে বুধবার হামলা হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এর মধ্যেই কয়েক দিনের অর্থনৈতিক বিক্ষোভের পর পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার যেকোনো প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে ‘দৃঢ় জবাব’ দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দেশটির প্রধান প্রসিকিউটর।
তেহরানের সবচেয়ে বড় মোবাইল ফোন বাজারের ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ করে দিলে রবিবার অর্থনৈতিক স্থবিরতা নিয়ে অসন্তোষ থেকে সৃষ্ট স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ শুরু হয়। এর পর থেকে সারা দেশের শিক্ষার্থীরাও এতে যোগ দিচ্ছে।
বিচার মন্ত্রণালয়ের মিজান সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে ফাসা শহরের বিচার বিভাগের প্রধান হামেদ অস্তোভার বলেন, ‘একদল লোকের হামলায় প্রাদেশিক গভর্নরের দপ্তরের একাংশের দরজা ও কাচ ভেঙে গেছে।’ তবে কিভাবে হামলা চালানো হয়েছে—তা স্পষ্ট করেননি তিনি।
এই হামলার আগে দেশের অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বিক্ষোভকারীদের অর্থনৈতিক উদ্বেগ বৈধ—তবে প্রয়োজন হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে মোহাম্মদ মোভাহেদি-আজাদ বলেন, জীবিকাসংক্রান্ত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সামাজিক ও বোধগম্য বাস্তবতার অংশ।
তিনি আরো বলেন, অর্থনৈতিক বিক্ষোভকে অশান্তি, জনসম্পত্তি ধ্বংস বা বাইরের শক্তির সাজানো কোনো চক্রান্ত বাস্তবায়নের হাতিয়ার বানানোর যেকোনো প্রচেষ্টা—আইনসম্মত, সমানুপাতিক ও দৃঢ় প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়বে।
তার এই মন্তব্য আসে কয়েক দিন পর, যখন ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইরানি বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে বার্তা দিয়ে বলে—তারা ‘মাঠে তোমাদের সঙ্গে আছে।
সংস্থাটি তাদের পারসিয়ান ভাষার এক্স অ্যাকাউন্টে ইরানিদের আহ্বান জানায়, ‘একসঙ্গে রাস্তায় নেমে আসুন।’
ইসরায়েলকে স্বীকৃতি না দেওয়া ইরান দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে—তারা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় নাশকতা চালায় এবং বিজ্ঞানীদের হত্যা করে।
বিক্ষোভগুলো এরপর গতি পেয়েছে। রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য শহরে মঙ্গলবার ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এতে যোগ দিয়েছে।
তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য মোহাম্মদ রেজা তাঘিদোকত ইরানিয়ান স্টুডেন্টস নিউজ এজেন্সিকে বলেন, চারজন শিক্ষার্থীকে মঙ্গলবার আটক করা হয়েছিল এবং রাতেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
তবু বিক্ষোভ এখনো সংখ্যায় সীমিত এবং মূলত মধ্য তেহরানেই কেন্দ্রীভূত—এক কোটি মানুষের এই বিশাল নগরীর অন্য এলাকাগুলোর দোকানপাট এতে প্রভাবিত হয়নি।
ফাসার ঘটনার আগে, ইরানি গণমাধ্যমগুলো বুধবার নতুন কোনো বিক্ষোভের খবর দেয়নি।
ইরানের অর্থনীতি বহু বছর ধরেই মন্দায়। তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভারী নিষেধাজ্ঞা এর ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেছে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রিয়াল মুদ্রারও বড় অবমূল্যায়ন হয়েছে—গত বছরের তুলনায় ডলারের বিপরীতে এর মান এক-তৃতীয়াংশের বেশি কমেছে। কিছু মৌলিক পণ্য এখন জনগণের একটি অংশের জন্য অপ্রাপ্য হয়ে উঠছে—যারা দশকজুড়ে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার ভার বইছে।
দৈনিক এতেমাদকে মঙ্গলবার দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘এখানে সবাই এক টুকরো রুটির জন্য লড়ছে।’
এবি