ভারতের ‘সবচেয়ে পরিষ্কার শহর’ হিসেবে টানা আটবার পুরস্কার পাওয়া মধ্য প্রদেশের ইন্দোর শহরে সরকারি পাইপলাইনে সরবরাহ করা দূষিত পানি পান করে অন্তত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। একই ঘটনায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এক হাজারের বেশি মানুষ। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।
তারা জানান, ইন্দোরের ভাগীরথপুরা এলাকার বহু বাসিন্দা গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে বমি ও ডায়রিয়ার উপসর্গ নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হতে শুরু করেন। পরিস্থিতি গুরুতর আকার নেওয়ায় এলাকায় স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা তৈরি হয়েছে।
ইন্দোরের প্রধান চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (সিএমএইচও) মাধব প্রসাদ হাসানি দ্য হিন্দুকে জানান, বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ১১১ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এছাড়া এক হাজারের বেশি মানুষকে হালকা উপসর্গের জন্য চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ভাগীরথপুরার ২ হাজার ৭০০ পরিবারের প্রায় ১২ হাজার মানুষের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে এক হাজারের বেশি মানুষের মধ্যে উপসর্গ পাওয়া গেছে। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হয়েছে।
তবে পাঁচজনের মৃত্যুর বিষয়ে সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন সিএমএইচও। তিনি বলেন, সব মরদেহ দাহ করা হয়েছে। ফলে নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন, মৃত্যুগুলো সরাসরি পানিবাহিত সমস্যার কারণে হয়েছে কি না। নিহতদের একজন দুই বছর ধরে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত ছিলেন, দুজনের বয়স ছিল ৭০ বছরের বেশি। আরেকজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হলেও অন্য হাসপাতালে নেওয়ার পথে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
স্থানীয় প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়েক সপ্তাহ ধরেই ভাগীরথপুরা এলাকার বাসিন্দারা নর্মদা নদীর পানি সরবরাহকারী ইন্দোর মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের (আইএমসি) পাইপলাইন থেকে ‘নোংরা পানি’ আসার অভিযোগ করে আসছিলেন।
পাইপলাইনে শৌচাগারের পানি?
অন্যদিকে, আইএমসি কমিশনার দিলীপ যাদব জানান, মূল পানির লাইনে একটি বড় ধরনের লিকেজ পাওয়া গেছে, যার পাশে একটি শৌচাগার ছিল। শৌচাগারটি বন্ধ করে মেরামত করা হয়েছে। তিনি বলেন, এক-দুইদিনের মধ্যে পরীক্ষা শেষে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ওই লাইনের পানি ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। আপাতত এলাকাবাসীকে লাইনের পানি পান না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আইএমসির এক কর্মকর্তা জানান, ভাগীরথপুরা পুলিশ চেকপোস্টের একটি শৌচাগারের পানি লিকেজের মাধ্যমে মূল লাইনের সঙ্গে মিশে যাচ্ছিল। তিনি আরও বলেন, চলতি বছরের শুরুতেই ওই এলাকায় লিকেজ ও নোংরা পানির অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল। আগস্টে নতুন পাইপলাইন বসানোর দরপত্র আহ্বান করা হলেও তা বিলম্বিত হয়। দুর্ঘটনার পর সোমবার সন্ধ্যায় দরপত্র খোলা হয় এবং মঙ্গলবার সকালে তড়িঘড়ি করে কাজ শুরু করা হয়েছে।
চিকিৎসা ও তদন্ত কার্যক্রম
সিএমএইচও জানান, এলাকায় একাধিক মেডিকেল ক্যাম্প বসানো হয়েছে এবং দুই দিনের জন্য অ্যাম্বুলেন্স মোতায়েন করা হয়েছে। মহাত্মা গান্ধী মেমোরিয়াল মেডিকেল কলেজের একটি বিশেষ দল মহামারি সংক্রান্ত তদন্ত ও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা চালাচ্ছে। পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও আশা কর্মীদের দিয়ে ঘরে ঘরে স্বাস্থ্য জরিপ করা হচ্ছে।
মধ্য প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব ঘটনাটিকে ‘অত্যন্ত মর্মান্তিক’ উল্লেখ করে নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে জানান, নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে দুই লাখ রুপি করে দেওয়া হবে। পাশাপাশি অসুস্থদের চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয় সরকার বহন করবে। তিনি পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ এবং কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন।
এই ঘটনার পর নগর উন্নয়ন ও আবাসনমন্ত্রী কৈলাশ বিজয়বর্গীয় হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের দেখতে যান। ভাগীরথপুরা তারই বিধানসভা এলাকার অন্তর্ভুক্ত। তিনি সাংবাদিকদের জানান, এলাকার পানি থেকে ৭০টির বেশি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়েছে। পাইপলাইন ও পানির ট্যাংক বিভিন্ন জায়গায় পরীক্ষা করা হচ্ছে। কোথা থেকে দূষণ ছড়িয়েছে, তা শিগগির শনাক্ত করা হবে। এর জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।
সূত্র: দ্য হিন্দু
এবি