এইমাত্র
  • তাইওয়ানে ৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাত
  • ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠকের আগে রাশিয়ার হামলায় কাঁপল কিয়েভ
  • পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রথম নারী গভর্নরের মৃত্যু
  • ভারতের আসামে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প
  • ভারতে বিনা নোটিশে গুঁড়িয়ে দেয়া হলো ৪০০ মুসলিম পরিবারের ঘর
  • বরিশালে শীতের পোশাকের দোকানে উপচেপড়া ভিড়
  • চুয়াডাঙ্গায় ১৪ ভারতীয় নাগরিককে পুশইন
  • অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচনে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • নীলফামারীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে যুবকের মৃত্যু
  • চকরিয়ায় যানজটের ভোগান্তি
  • আজ শনিবার, ১৩ পৌষ, ১৪৩২ | ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৫
    আন্তর্জাতিক

    ৩০ বছর পর শিশু জন্ম নিল যে গ্রামে

    আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:১৮ পিএম
    আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:১৮ পিএম

    ৩০ বছর পর শিশু জন্ম নিল যে গ্রামে

    আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:১৮ পিএম

    ইতালির আবরুজো অঞ্চলের মাউন্ট গিরিফালকোর ঢালে অবস্থিত প্রাচীন এক গ্রাম পাগলিয়ারা দেই মার্সি। এই গ্রামে মানুষের চেয়ে বিড়ালের সংখ্যা অনেক বেশি। দশকের পর দশক ধরে জনসংখ্যা কমার ফলে গ্রামটিতে যে শুনশান নীরবতা নেমে এসেছে। তবে গত মার্চ থেকে সেই নীরবতা কিছুটা ভেঙেছে। এক বিরল ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রামজুড়ে বয়ে গেছে আনন্দের বন্যা একটি শিশুর জন্ম।

    গত প্রায় ৩০ বছরের মধ্যে 'পাগলিয়ারা দেই মার্সিতে জন্ম নেওয়া প্রথম শিশু হলো লারা বুসি ট্রাবুক্কো। তার জন্মের পর গ্রামটির জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০-এ।

    বাড়ির ঠিক উল্টো দিকের গির্জায় ছিল তার খ্রিস্টধর্মে দীক্ষা অনুষ্ঠান। সেই আয়োজনে গ্রামের বিড়ালগুলোসহ সব বাসিন্দাই উপস্থিত ছিল। এই গ্রামে একটি শিশু থাকা এতটাই অভিনব ব্যাপার যে, সে এখন সেখানকার প্রধান পর্যটন আকর্ষণে পরিণত হয়েছে।

    শিশুটির মা সিনজিয়া ট্রাবুক্কো বলেন, 'যারা আগে জানতও না যে পাগলিয়ারা দেই মার্সি নামে কোনো জায়গার অস্তিত্ব আছে, তারাও এখন লারার কথা শুনে এখানে আসছে। মাত্র নয় মাস বয়সেই ও বিখ্যাত হয়ে গেছে।'

    লারার এই আগমন যেমন আশার প্রতীক, তেমনি এ ঘটনা ইতালির জনসংখ্যা সংকটের নির্মম ও বাস্তব চিত্রও তুলে ধরে।

    ইতালির জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা ইস্ট্যাট-এর তথ্য অনুযায়ী, টানা ১৬ বছরের নেতিবাচক ধারা অব্যাহত রেখে ২০২৪ সালে দেশটিতে জন্মহার ঐতিহাসিকভাবে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। ওই বছর জন্ম হয়েছে মাত্র ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৯৪৪ শিশুর। প্রজনন হারও রেকর্ড পরিমাণ কমেছে। ২০২৪ সালে সন্তান ধারণে সক্ষম নারীদের গড়ে সন্তান জন্মদানের হার ছিল ১.১৮, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম সর্বনিম্ন।

    এই নিম্নমুখী জন্মহারের অন্যতম কারণ চাকরির অনিশ্চয়তা ও তরুণ প্রজন্মের দলে দলে বিদেশে পাড়ি জমানো। এ ছাড়াও কর্মজীবী মায়েদের জন্য পর্যাপ্ত সহায়তার অভাব এবং অন্যান্য দেশের মতো পুরুষদের বন্ধ্যত্ব বৃদ্ধিও এর জন্য দায়ী। এর বাইরে বর্তমানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ স্বেচ্ছায় সন্তান না নেওয়ার সিদ্ধান্তও নিচ্ছেন।

    ইতালির ২০টি প্রশাসনিক অঞ্চলের মধ্যে এই সংকট সবচেয়ে প্রকট আকার ধারণ করেছে আবরুজো অঞ্চলে, যেখানে জনসংখ্যা আগে থেকেই কম ছিল। ২০২৪ সালের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাইয়ের মধ্যে এখানে জন্মহার ১০.২ শতাংশ কমেছে।

    পাগলিয়ারা দেই মার্সি আয়তনে খুব ছোট হলেও গ্রামটি বর্তমানে পুরো ইতালির বাস্তব পরিস্থিতির এক প্রতীকী রূপ। দেশজুড়েই বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, স্কুলগুলো হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীশূন্য। এই পরিস্থিতি সরকারি কোষাগারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে এবং স্থানীয়, আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ের নেতাদের সামনে কঠিন অর্থনৈতিক ও সামাজিক চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে।

    স্থানীয় মেয়র জিউসেপিনা পেরোজ্জি বলেন, 'পাগলিয়ারা দেই মার্সি চরম জনশূন্যতায় ভুগছে। অনেক বয়স্ক মানুষ মারা যাচ্ছেন, কিন্তু তাদের জায়গা পূরণ করার মতো কোনো নতুন প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে না—ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে।'

    শিশু লারার বাড়ির কয়েক ঘর পরেই বাস করেন মেয়র পেরোজ্জি। তিনি ৪২ বছর বয়সি ট্রাবুক্কো ও তার ৫৬ বছর বয়সি সঙ্গী পাওলো বুসির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন পরিবার শুরু করার জন্য। তিনি আশা করেন, তাদের দেখে অন্যরাও উৎসাহিত হবে।

    এদিকে লারা জন্ম নেওয়ার পর লারার বাবা মা ১ হাজার ইউরোর একটি 'বেবি বোনাস' পেয়েছেন। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জন্ম নেওয়া বা দত্তক নেওয়া প্রতিটি শিশুর জন্য এই সুবিধা চালু করেছে জর্জিয়া মেলোনির কট্টর ডানপন্থি সরকার। এছাড়াও তারা প্রতি মাসে শিশুভাতা হিসেবে প্রায় ৩৭০ ইউরো পান।

    তবে এই যুগলের মূল সংগ্রাম হলো কাজের পাশাপাশি সন্তানের যত্ন নেওয়া। ইতালির চাইল্ডকেয়ার ব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরেই অপর্যাপ্ত। মেলোনি প্রশাসন জন্মহারের এই সংকটকে জাতীয় অস্তিত্বের লড়াই হিসেবে চিত্রিত করলেও, ডে-কেয়ার সেন্টারের সংখ্যা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি তারা এখনো পূরণ করতে পারেনি। ফলে অনেক নারী গর্ভবতী হওয়ার পর চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন এবং পরে কর্মক্ষেত্রে ফিরতে তাদের প্রচণ্ড বেগ পেতে হয়।

    লারার ভবিষ্যৎ পড়াশোনা নিয়েও তার বাবা-মা উদ্বিগ্ন। পাগলিয়ারা দেই মার্সি গ্রামে শেষ কবে একজন শিক্ষক ছিলেন—যার বাড়িটিই স্কুল হিসেবে ব্যবহৃত হতো—তা এখন দশকের আগের স্মৃতি। পাশের এলাকা ক্যাসেল্লাফিয়ুমে-তে একটি শিশু ও প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। কিন্তু জন্মহার কমে যাওয়ায় সারা ইতালিতে যেভাবে স্কুল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতে স্কুলটি টিকিয়ে রাখার মতো যথেষ্ট শিশু পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়।

    মা ট্রাবুক্কো মনে করেন, শুধু আর্থিক প্রণোদনা দিয়ে এই নেতিবাচক ধারা থামানো সম্ভব নয়। তিনি বলেন, 'পুরো ব্যবস্থাটিতেই আমূল পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। আমরা এমন এক দেশে বাস করি যেখানে চড়া হারে কর দিতে হয়, কিন্তু এর বিনিময়ে আমরা উন্নত জীবনমান বা ভালো সামাজিক সেবা পাই না।'

    পাগলিয়ারা দেই মার্সি থেকে প্রায় এক ঘণ্টার পথ সুলমোনা। একসময়ের সমৃদ্ধ এই শহরটিতে গত এক দশকে জনসংখ্যা কমার গতি ত্বরান্বিত হয়েছে। বর্তমানে সেখানকার আন্নুনজিয়াটা হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগ বন্ধের হাত থেকে বাঁচাতে রীতিমতো লড়াই চলছে।

    তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

    এবি

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    Loading…