পাবনার ঈশ্বরদীতে ধানক্ষেত থেকে মেহেদী হোসেন (২৭) নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে উপজেলার অরোণকোলা এলাকার একটি ধানক্ষেত থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত মেহেদী হোসেন ওই এলাকার মো. আবু বক্কর জোয়ার্দারের ছেলে।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার অরোণকোলা গ্রামের পার্শ্ববর্তী হিন্দুপাড়া এলাকার স্থানীয় শ্যামল নামে একজনের বাড়ির টিউবওয়েলের হ্যান্ডেল চুরি নিয়ে একটি ঝামেলা হয়েছিল, যা পরে মীমাংসা হয়। পরে আবার নিহত মেহেদীর ছোট ভাই ইমনের বন্ধুর একটি মোবাইল ফোন চুরি নিয়ে নতুন করে আরেকটি ঝামেলার সূত্রপাত ঘটে।
মোবাইল চুরির বিষয়টি মীমাংসার জন্য গতকাল মেহেদী তার মায়ের কাছে ১ হাজার ৭০০ টাকা চাইলে তার মা তাকে ১৫০ টাকা দেন। এরপর সে বাড়ি থেকে চলে আসে। পরে মেহেদীর ছোট ভাই ইমন তাকে ডেকে ঘটনার মীমাংসার সময় শাসনস্বরূপ চড় মারলে সে রাগ করে চলে যায়।
এদিকে মেহেদী অতিরিক্ত নেশাগ্রস্ত হয়ে বাড়িতে প্রায়ই ঝগড়াঝাঁটি করত। এ কারণে পরিবারের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হলে সে ভয়ে পালিয়ে বেড়াত। সর্বশেষ গতকাল রোববার স্থানীয়রা তাকে বাড়ির পাশের আমবাগানের একটি টংঘরে বসে থাকতে দেখেছেন।
হঠাৎ করে দুপুরে স্থানীয় মজিবর নামে একজন ওই টংঘরের পাশের একটি ধানক্ষেতে তাকে খালি শরীরে পড়ে থাকতে দেখে বিষয়টি তার চাচাতো ভাই বিল্লাল জোয়ার্দারকে জানান। পরে বিল্লাল জোয়ার্দার ঘটনাস্থলে এসে তার ভাইয়ের মরদেহ শনাক্ত করেন এবং পরিবার ও পুলিশকে খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে।
উদ্ধারকৃত মরদেহের বিভিন্ন স্থানে ধস্তাধস্তির চিহ্ন লক্ষ করেছে পুলিশ। এছাড়া টংঘর থেকে মেহেদীর পরিহিত একটি চাদর ও মুঠোফোন এবং ধানক্ষেতের পাশের একটি কচুরিপানার ভেতর থেকে তার টি-শার্ট উদ্ধার করা হয়েছে।
নিহত মেহেদীর ছোট ভাই ইমন বলেন, “আমার ভাই প্রচুর নেশা করত। নেশার টাকা জোগাড় করতে মাঝে মাঝে চুরির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ত। সর্বশেষ আমার এক বন্ধুর ভাইয়ের মোবাইল চুরি নিয়ে আমি তাকে রাগের মাথায় চড় মারি। এরপর সে রাগ করে চলে যায়। পরে জানতে পারি তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।”
নিহতের চাচাতো ভাই মো. বিল্লাল জোয়ার্দার বলেন, “দুপুর আড়াইটার দিকে স্থানীয়রা আমাকে জানায় ধানক্ষেতে কেউ পড়ে আছে। গিয়ে দেখি আমারই ভাই মেহেদী। পরে পরিবার ও পুলিশকে খবর দিই। এটি হত্যা না আত্মহত্যা—কিছুই বুঝতে পারছি না।”
কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিহতের স্ত্রী মোছা. মৃত্তিকা খাতুন বলেন, “আমার স্বামীর কারও সঙ্গে কোনো বিরোধ ছিল না। মোবাইল চুরি নিয়ে একটি বিষয় হয়েছিল, সেটাও পারিবারিকভাবে মীমাংসা করা হয়। গতকালই তার সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়। আজ শুনছি তার মরদেহ ধানক্ষেতে পাওয়া গেছে।”
ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রণব কুমার বলেন, “খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।”
এনআই