থার্টি ফার্স্ট নাইট—যে রাতটি সাধারণত উৎসব, আনন্দ আর আতশবাজির ঝলকানিতে কাটে, সেই রাতেই যখন শহরের এক প্রান্তে কনকনে শীতে কাঁপছিল অসহায় মানুষ, ঠিক তখনই মানবতার উষ্ণতা নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘রূপসী নওগাঁ’। আনন্দের রাতকে দায়িত্ববোধ ও সহমর্মিতার বার্তায় রূপ দিয়ে শীতার্ত ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য হয়ে ওঠে এই রাত আশার আলো।
বিগত বছরের ধারাবাহিকতায় এ বছরও থার্টি ফার্স্ট নাইটে ‘রূপসী নওগাঁ’-এর আয়োজনে প্রায় ২০০ জন শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র এবং ১৫০ জন অসহায় মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়।
বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) থার্টি ফার্স্ট নাইট রাত ৮টায় নওগাঁ শহরের বিভিন্ন এলাকা ও শান্তাহার রেলস্টেশনে ঘুরে ঘুরে এই শীতবস্ত্র ও খাবার বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি। গভীর রাতের কনকনে শীতে এই মানবিক উদ্যোগ শীতার্ত মানুষের জন্য বড় স্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সংগঠনের সভাপতি ডেন্টিস্ট খালেদ বিন ফিরোজ বলেন,
“থার্টি ফার্স্ট নাইট অনেকের কাছে উৎসবের রাত হলেও আমাদের কাছে এটি আত্মজিজ্ঞাসা ও দায়িত্ববোধের সময়। যখন সমাজের একাংশ আনন্দে মেতে ওঠে, তখন আরেক অংশ খোলা আকাশের নিচে শীতে কাঁপে। আমরা বিশ্বাস করি, এই রাতটি আনন্দের পাশাপাশি মানবতার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ারও উপযুক্ত সময়। সেই বিশ্বাস থেকেই ‘রূপসী নওগাঁ’ শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।”
তিনি আরও বলেন,
“মানবিক কাজ কোনো বিশেষ দিনের জন্য সীমাবদ্ধ নয়। তবে থার্টি ফার্স্ট নাইটে এমন উদ্যোগ সমাজকে ভিন্নভাবে ভাবতে শেখায়। আতশবাজির আলো ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু মানবতার আলো দীর্ঘস্থায়ী।”
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার সাজু রহমান (সুজন) বলেন,
“আমাদের সংগঠনের প্রতিটি কার্যক্রমের মূল শক্তি হলো মানবিক দায়বদ্ধতা। থার্টি ফার্স্ট নাইটকে কেন্দ্র করে আমরা আনন্দ উদযাপনের পরিবর্তে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিগত দিনের মতো ভবিষ্যতেও ‘রূপসী নওগাঁ’ নওগাঁর প্রতিটি অসহায় মানুষের জন্য নির্ভরতার প্রতীক হয়ে থাকতে চায়।”
এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘রূপসী নওগাঁ’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি ডেন্টিস্ট খালেদ বিন ফিরোজ, সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার সাজু রহমান সুজন, সহ-সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান সাদ্দাম, সদস্য আ. মজিদ, সাঈদ জোবায়েদ অনিক, সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার সাদেকিন ইসলাম, মো. ইউনুস আলী, মাওলানা নাসিরুদ্দিন সাদ, আজিজুল হক রাজাসহ সংগঠনের অন্যান্য সদস্য ও শুভানুধ্যায়ীরা।
স্থানীয় সচেতন মহলের মতে, থার্টি ফার্স্ট নাইটকে মানবিক দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে উদযাপন করার এই উদ্যোগ সমাজে ইতিবাচক বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছে এবং তরুণ সমাজকে অনুপ্রাণিত করবে।
উল্লেখ্য, ‘রূপসী নওগাঁ’ ২০১৬ সালে যাত্রা শুরু করে। গরিব শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ ও শিক্ষাদান কর্মসূচি, পথশিশুদের মাঝে খাদ্য বিতরণ, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প, চিকিৎসায় আর্থিক সহায়তা, বেওয়ারিশ লাশ দাফনসহ নানা মানবিক কার্যক্রমের মাধ্যমে সংগঠনটি প্রশংসনীয় অবদান রেখে চলেছে।
এনআই