হঠাৎ করেই কিশোরগঞ্জের ভৈরব বাজারে আড়তগুলোতে ২ দিনে পেঁয়াজ প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে ২০ টাকা। এতে করে বিপাকে ব্যবসায়ী ও অস্বস্তিতে রয়েছে ক্রেতারা। সামনে আরো দাম বাড়তে পারে বলে আশঙ্কায় রয়েছে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা।
বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) ভৈরবের পেঁয়াজ বাজারে ঘুরে দেখা যায়, নদীর পাড় এলাকায় পেঁয়াজের আড়ত রয়েছে ১৪ টির মতো। প্রতিটি দোকানই খালি রয়েছে। কেউ আবার দোকান বন্ধ রেখেছেন। এসময় ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলতে গেলে তারা জানান, দেশি পেঁয়াজের ভরা মৌসুম শুরু হতে আরো দুই সপ্তাহ সময় লাগবে। শেষ সময়ে পুরাতন পেঁয়াজের মজুত কমেছে। ২৫ নভেম্বর কেজি প্রতি ৮০ টাকা, ২৬ নভেম্বর সারাদিন কেজি প্রতি ৯০ টাকায় বিক্রি করলেও আজ ২৭ নভেম্বর প্রতি কেজি পেঁয়াজে ১০ টাকা করে দাম বেড়ে হয়েছে ১০০ টাকা। সেই হিসেবে বস্তা প্রতি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা বেশি দিয়ে পিঁয়াজ কিনতে হচ্ছে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের।
ব্যবসায়ীরা বলেন, ভৈরবের পাইকাররা বেশিরভাগ পেঁয়াজ সংগ্রহ করে ফরিদপুর, পাবনা ও মাগুরা থেকে। কিন্তু দাম বৃদ্ধি ও মজুত না থাকায় পেঁয়াজের সংকট দেখা দিয়েছে। দেশি পিঁয়াজের পাশাপাশি ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ বাজার আসছে না। সরকার এ বছর পিঁয়াজ ইন্ডিয়া থেকে আনা বন্ধ করে দিয়েছে। এজন্য দেশে নতুন পেঁয়াজ আসার আগ পর্যন্ত দিন দিন দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। দাম বৃদ্ধিতে পেঁয়াজের সংকট দেখা দিয়েছে।
পাইকারি ব্যবসায়ী ফাইন ট্রেডার্স মালিক শাকিল মুন্সি বলেন, আমার ঘরে ২৫০ থেকে ৩০০ বস্তা পেঁয়াজ থাকে কিন্তু দাম বৃদ্ধিতে আজকে আমার আড়তে পেঁয়াজের বস্তা রয়েছে ৩০টি। প্রতিদিন দাম উঠা নামা করছে। আমাদের বড় বড় পাইকাররা অধিক পুঁজি খাটিয়ে পেঁয়াজ নিচ্ছে না। আমরা অধিক বস্তা দুই একদিনের জন্য মজুত করছি না। সরকার ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ দেশে ঢুকতে দিচ্ছে না। এতে করে বর্তমান বাজারে পুরাতন পেঁয়াজ সংকটে রয়েছে।
আরেক পাইকারি ব্যবসায়ী মেসার্স সামিয়া এন্টারপ্রাইজ-এর মালিক মিলন মিয়া বলেন, কৃষকের কাছে পেঁয়াজ মজুত নেই। বড় বড় ব্যবসায়ীরাও এবার বেশি মজুত করতে পারেনি। তবে দেশের পেঁয়াজেই দেশের মানুষের চাহিদা মিটেছে। ইন্ডিয়ান পেঁঁয়াজ দেশে না আসলে কৃষকরা বেশি লাভবান হবে। সরকার সঠিক তদারকি করলে পেঁয়াজের ফলন বাড়লে দেশে চাহিদা মিটিয়ে পিঁয়াজ বিদেশে রপ্তানি করা যাবে।
এদিকে পেঁয়াজ কিনতে আসা ক্রেতা ছিদ্দিক মিয়া ও ইমন মিয়া বলেন, পাঁচ কেজির নিচে কিনতে গেলে দাম বেশি দিতে হয়। এজন্য পাইকারদের কাছে থেকে প্রতি ৫ কেজি পেঁয়াজ কিনতে আসি। ২৬ নভেম্বর দাম করেছি ৪৫০ টাকা পাল্লা (৫ কেজি)। আজ বাজারে এসে দেখি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। ৫ কেজি পেঁয়াজে ৫০ টাকা বেশি দিতে হয়েছে। ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে করেই দাম বাড়িয়েছে কি না। ভৈরবের প্রশাসনের কর্মকর্তাদের তদারকি প্রয়োজন।
খুচরা ব্যবসায়ী রাজু মিয়া বলেন, আমি খোলা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করি। ২৫ নভেম্বর মঙ্গলবার পেঁয়াজ কিনেছি ৮০ টাকায়, পরদিন ৯০ টাকা ও আজ ২৭ নভেম্বর বাজারে এসে দেখি পেঁয়াজের দাম বেড়ে হয়েছে প্রতি কেজি ১০০ টাকা।
ভৈরব বাজার নদীরপাড় এলাকার কাঁচামাল আড়ত ব্যবসায়ী সমিতির নেতা মাসুম মিয়া বলেন, প্রতিদিন পেঁয়াজের দাম কমে ও বাড়ে। ব্যবসায়ীরা দাম বৃদ্ধির ভয়ে পেঁয়াজ কিনছেন না। এমনকি সপ্তাহ খানেক গেলেই নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসা শুরু হবে। বর্তমান দেশের পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবসায়ীরা বেশি পুঁজি খাটিয়ে ব্যবসা করতে ভয় পায়। এ বছর দেশি পেঁয়াজে দেশের মানুষের চাহিদা মিটেছে। সরকার ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ দেশে না ঢুকতে দেয়ায় এর সুফল পেয়েছে পেঁয়াজ চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে চেম্বার অব কমার্স এণ্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি জাহিদুল হক জাবেদ বলেন, পেঁয়াজ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য। হঠাৎ করে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ২০ টাকা বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি সন্দেহের। আমি বাজারে ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে খোঁজ নিচ্ছি। সেই সাথে ভৈরব প্রশাসনকে বাজার মনিটরিংয়ের অনুরোধ করবো।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শবনম শারমিন বলেন, হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি বাজার মনিটরিংয়ের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।
এফএস