ইতালির রঙিন স্বপ্ন বুকে নিয়ে ঘর ছেড়েছিল মাদারীপুরের শিবচরের তিন যুবক আলমাছ, সজিব ও সবুজ। নতুন দিনের আশায়, পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর স্বপ্নে তারা পা বাড়িয়েছিল দূরদেশের পথে। কিন্তু সেই স্বপ্নের পথে পা বাড়িয়েই আজ তারা দাঁড়িয়ে আছে মৃত্যুঝুঁকির অন্ধকার দরজায়।
লিবিয়ার মরুভূমির মাঝখানে একটি অন্ধকার কক্ষে বন্দি তিন যুবক। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায় তাদের হাত-পা-মুখ বেঁধে চলছে নির্মম নির্যাতন। না আছে খাবার, না আছে পানি। আছে শুধু দালালচক্রের লৌহমুষ্টির আঘাত আর হাহাকারমাখা আর্তনাদ। ‘মা, বাঁচাও… আমাদের বাঁচাইয়া নাও।’
প্রতিদিনই পরিবারের ফোনে আসে নতুন নতুন নির্যাতনের ভিডিও। আর সাথে অমানবিক হুমকি, ‘৬০ লাখ টাকা না দিলে দেশে ফিরবে কেবল লাশ।’
নিজের ছেলের যন্ত্রণাময় চিৎকার শুনে বারবার জ্ঞান হারান আলমাছের মা। অন্যদিকে সজিবের বাবা ভেজা চোখে বলেন- ‘টাকা দিলে হয়তো ছেলেটা এ যাত্রায় বেঁচে যেত।’
সবুজের ছোট ভাই বলেন- ‘ভাইরে মারার আগে যদি কিছু করতে পারতাম।’
স্থানীয়রা বলেন, কৃষক, দিনমজুর ও প্রবাসফেরত শ্রমিক- তিন পরিবারের আর্থিক চিত্র প্রায় একই। ৬০ লাখ টাকার বিশাল দাবি তাদের পক্ষে পূরণ করা অসম্ভব। তারপরও ছেলেদের বাঁচাতে কেউ বিক্রি করছেন গয়না, কেউ ছুটছেন জমি বন্ধক রাখতে। একটাই প্রার্থনা- সন্তানগুলো যেন আরেকবার ঘরে ফিরতে পারে, জীবিত অবস্থায়।
মানবাধিকার কর্মীদের ভাষায়- ‘এ শুধু প্রতারণা নয়; আন্তর্জাতিক মানবপাচারের এক ভয়াবহ দৃষ্টান্ত। দ্রুত দালালদের গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছে তারা।’
গ্রামজুড়ে এখন একটাই প্রশ্ন–ওরা ফিরবে তো?
আলমাছের মা হাহাকার করে বলেন- ‘বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন দেখি না… শুধু ছেলেটা বাঁচুক।’
সবুজের বোন হাতজোড় করে অনুরোধ করেন– ‘ভাইরে একবার যদি ফিরে পেতাম।’
ইতালির রঙিন স্বপ্ন আজ তিন যুবকের জন্য পরিণত হয়েছে মরুভূমির দুঃস্বপ্নে। বালুর দেশের বন্দিদশায় তারা লড়ছে প্রতিটি নিঃশ্বাসের জন্য, আর দূর দেশে তাদের পরিবার রাতজেগে প্রার্থনা করছে–শুধু একবার ফিরে আসুক আমাদের সন্তানরা।'
শিবচর থানার ওসি মোঃ রকিবুল ইসলাম জানান, ‘নির্যাতনের শিকার যুবকদের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে স্থানীয় দুই দালালকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পাশাপাশি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত পুরো চক্রকে আইনের আওতায় আনতে অভিযান চলছে।’
এসএম