নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় নোবিপ্রবি শাখা ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তঃবিভাগ শর্ট পিচ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ২০২৫। টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩২টি বিভাগ।
আয়োজকদের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ অক্টোবর ২০২৫ থেকে নোয়া প্রযুক্তি হাউজিং মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে টুর্নামেন্টটি। উদ্বোধনী ম্যাচের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা শুরু হলেও প্রতিদিন একাধিক বিভাগীয় দল অংশ নিচ্ছে।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, নোবিপ্রবি শাখার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, খেলাধুলার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বন্ধুত্ব, ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্য গড়ে তোলা এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য। তারা সকলকে উপস্থিত থেকে খেলোয়াড়দের উৎসাহিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে, ক্যাম্পাসে কঠোরভাবে রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকলেও, বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩২ টি বিভাগ নিয়ে এই বড় আয়োজনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।
সিএসটিই বিভাগের ১৬ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নিশাদ আহমেদ বলেন, ‘আপাতদৃষ্টিতে শিবিরের এই ক্রিকেট টুর্নামেন্টটি শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো মনে হতে পারে। শিক্ষার্থীদের শরীরচর্চার জন্যও এটি ইতিবাচক—কেউ এটিকে খারাপ বলবে না। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন লঙ্ঘন। শিবির বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করে প্রতিটি বিভাগকে তাদের প্রোগ্রামে অন্তর্ভুক্ত করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু না হওয়া পর্যন্ত শিবিরের এই কার্যক্রম অনৈতিক এবং নীতিবিরুদ্ধ। আর আমরা এই কাজকে সমর্থন করবো না।’
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী বুলবুল ফাহিম বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমার কাছে বিষয়টি ভিন্নভাবে ইতিবাচক মনে হয়। ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকায় তারা মূল ক্যাম্পাস এলাকার বাইরে আয়োজন করছে—এটি আসলে প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে সম্মান করারই একটি আচরণ। রাজনৈতিক পরিচয়ের বাইরে গিয়ে খেলাধুলা সবাইকে একসঙ্গে আনে, তাই যেই সংগঠনই উদ্যোগ নিক না কেন, শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিকভাবেই এতে আগ্রহী হবে। খেলাধুলার ক্ষেত্র বিভেদের নয়, বরং একতার। তাই ক্যাম্পাসের বাইরে এমন ভিন্নধর্মী রাজনৈতিক অনুশীলনকে আমি ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখি।’
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার শিবিরের সভাপতি আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক ঐক্য ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের জন্য এই টুর্নামেন্ট একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে, যার অন্যতম প্রমাণ ৩২টি বিভাগের অংশগ্রহণ। ইসলামী ছাত্রশিবির প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ইতিবাচক কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। তারই একটি অংশ হলো এই খেলার আয়োজন।শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্য তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ। সে সঙ্গে ক্যাম্পাসে নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ করে দিতে বিদ্যমান রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ রইল।’
এই বিষয়ে নোবিপ্রবির প্রক্টর এ.এফ.এম. আরিফুর রহমান বলেন, ‘ক্যাম্পাসের ভেতরে রাজনীতি নিষিদ্ধ এবং নোবিপ্রবির নাম ব্যবহার করে ক্যাম্পাসের বাইরে রাজনীতি করাও নিষিদ্ধ। আমরা প্রতিটি ছাত্রসংগঠন থেকে দায়িত্বশীল আচরণ আশা করি। যেহেতু শিবির ক্যাম্পাসের বাইরে ক্রিকেট টুর্নামেন্টে নোবিপ্রবির নাম ব্যবহার করে পরিচালিত করছে, তাদেরকে বলবো দায়িত্বশীল আচরণ করতে। আমরা সব ছাত্রসংগঠনকে দায়িত্বশীল আচরণ করার জন্য বার্তা দিয়েছি।’
এসএম