ময়মনসিংহের ত্রিশালে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে বন্ধু মুনতাসির ফাহিমকে (২২) খুন করে থানায় আত্মসমর্পণ করেছে অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী অনিক মণ্ডল (২২)। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে ত্রিশাল থানা পুলিশ। তারা দু’জন এক যুগেরও বেশি সময় ধরে একে অপরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে এলাকায় পরিচিত।
বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) রাত ৯টার দিকে ত্রিশাল উপজেলা সদরের থানার পাশে অবস্থিত ত্রিশাল সরকারি নজরুল একাডেমি মাঠে এই লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে ত্রিশাল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আসামিকে আদালতে প্রেরণ করেছে ত্রিশাল থানা পুলিশ।
জানা যায়, ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকেই অনিক আর ফাহিমের বন্ধুত্ব। ফাহিম বর্তমানে মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং অনিক টাঙ্গাইলের করটিয়া কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করে। ফাহিম তিন মাস আগে ছুটিতে বাড়ি আসে এবং আগামী ৭ ডিসেম্বর দেশে ফেরার কথা ছিল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর ফাহিম বাড়ি থেকে বের হয়ে বন্ধু অনিকের সঙ্গে স্থানীয় নজরুল একাডেমি মাঠে আড্ডা দিতে আসে। এর এক ঘণ্টা পরই বন্ধু অনিক তাকে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে থানায় এসে ঘটনাটি বর্ণনা করে নিজেকে গ্রেপ্তার করতে বলে।
ত্রিশাল থানা পুলিশ তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী নজরুল একাডেমির ভবনের পাশ থেকে ফাহিমের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অনিক পুলিশকে জানায়, “ও আমাকে ধ্বংস করে দিয়েছে, আমার জীবন নষ্ট করে ফেলেছে—এ কারণেই তাকে হত্যা করেছি।”
নিহত মুনতাসির ফাহিম ত্রিশাল ইউনিয়নের চিকনা গ্রামের সাবেক মেম্বার বাদলের ছেলে। সে স্টুডেন্ট ভিসায় মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতো। এক মাস আগে ছুটিতে দেশে আসে এবং দু’দিন পর ফেরার কথা ছিল।
অপরদিকে ঘাতক অনিক মণ্ডল টাঙ্গাইলের করটিয়া কলেজের অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী। সে পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে থানার পেছনের এলাকার বাসিন্দা।
নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফাহিম সেদিন সন্ধ্যায় নানা বাড়ি কোনাবাড়ী থেকে খাওয়া-দাওয়া করে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে বলে বাড়ি থেকে বের হয়। ঘণ্টাখানেক পর তারা লাশের খবর পান। পরিবারের দাবি, এর দু’দিন আগে অনিক তাদের বাড়িতে গিয়ে গোরস্থান দেখে এবং বাড়ির লোকজনকে বলে—“ফাহিমকে ভালো খাবার খাওয়ান, বিদেশ যাওয়ার আগে তো দুনিয়া থেকেও চলে যেতে পারে।” দীর্ঘদিনের বন্ধু হওয়ায় তারা বিষয়টি গুরুত্ব দেননি।
ত্রিশাল থানা ওসি মুনসুর আহাম্মদ জানান, হত্যাকারী নিজেই রক্তমাখা কুড়াল নিয়ে থানায় হাজির হয়ে খুনের কথা স্বীকার করলে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতের বাবা বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। আসামিকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
নিহত ফাহিমের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার সন্ধ্যায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় ফাহিমের পরিবার ও সহপাঠীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে।
এনআই