রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ফুটপাথ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট্ট ‘মিজানের হোটেল’। স্থানীয়দের কাছে যা ‘গরিবের বুফে’ নামে পরিচিত। প্রতিদিনই এখানে স্বল্পমূল্যে খেতে ভিড় করেন রিকশাচালক, দিনমজুর, পথশিশু, শ্রমজীবী মানুষসহ নিম্নআয়ের বহু মানুষ। তবে শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) দিনটি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক মো. মেহেদী হাসান বিপ্লব এ হোটেলে প্রায় তিন হাজার অসহায় মানুষের জন্য গরু ও খাসির মাংস দিয়ে একবেলা খাবারের আয়োজন করেন। উদ্যোগটি সরাসরি তদারকি করেন মজার টিভির সিইও ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর মাহসান স্বপ্ন।
এদিন সকাল থেকে শুরু হয়ে বিকেল পর্যন্ত চলে এই বিশেষ প্রীতিভোজ। ভাত, গরুর মাংস, খাসির মাংস সবই ছিল সবার জন্য বিনামূল্যে। স্থানীয়রা জানান, এমন আয়োজন এই এলাকায় খুব কম দেখা যায়। একজন ব্যবসায়ীর ব্যক্তিগত সহায়তায় হাজারো মানুষ একসঙ্গে পেট ভরে খাবার খেতে পেরেছে এটি তাদের কাছে বড় স্বস্তির বিষয়।
হোটেলের মালিক মিজান জানান, কয়েক দিন আগে তাঁর কাছে ফোন দেন মেহেদী হাসান বিপ্লব। তিনি জানান, শুক্রবার অসহায় মানুষদের জন্য বিশেষ খাবারের আয়োজন করতে চান। পরে তিনি গরু ও খাসি কিনে দেন এবং রান্নার সব খরচ বহন করার দায়িত্ব নেন।
মিজান বলেন, 'বিপ্লব ভাই শুধু বললেন ‘ভালো করে রান্না করেন, যেন সারা দিন সবাই পেট ভরে খেতে পারে।’ এরপর আর কিছু নিয়ে তিনি চিন্তা করেননি, আমাদের ওপর পুরো দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন।'
শুক্রবার সকাল ৯টার পর থেকেই হোটেলের সামনে ভিড় বাড়তে শুরু করে। রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুর, পথশিশু, বয়স্ক মানুষ সবাই অপেক্ষা করেন একবেলা ভালো খাবারের জন্য। কর্মীদের একটানা রান্না, পরিবেশন আর ব্যবস্থাপনা সামলাতে হিমশিম খেতে হয়। দুপুর নাগাদ হোটেলের বাইরে আরও বড় ভিড় জমে যায়।
খেতে আসা আব্দুর রহমান নামে এক রিকশাচালক বলেন, 'আমরা প্রতিদিন কী খাই, কী না খাই সেটা আল্লাহই জানে। আজ গরুর মাংস দিয়ে পেট ভরে খেতে পারলাম। এমন আয়োজন যদি আরও হয়, গরিব মানুষ অন্তত মাঝেমধ্যে একটু ভালো খেতে পারত।' এক পথশিশু জানায়, 'এত খাবার অনেকদিন পাই না। আজ খুব ভালো লেগেছে।'
জুমার নামাজ শেষে দুপুরে মিজানের হোটেল পরিদর্শনে আসেন তরুণ ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান বিপ্লব। তিনি কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং খাবারের মান ও ব্যবস্থাপনা দেখেন। অসংখ্য মানুষকে একসঙ্গে খাবার নিতে দেখে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
এ সময় হোটেলের মালিক মিজানকে ধন্যবাদ জানিয়ে তাঁর পরিশ্রমের স্বীকৃতিস্বরূপ নগদ ৫০ হাজার টাকা উপহার দেন। মিজান বলেন, 'এত বড় আয়োজনের পর আবার আমাকে সম্মান জানানোয় আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ। টাকা অনেকের কাছে, তবে এত বড় মন সবার হয় না।'
অসহায় মানুষের জন্য এ আয়োজনের কারণ জানতে চাইলে মেহেদী হাসান বিপ্লব বলেন, 'দেশ, সমাজ ও সাধারণ মানুষের প্রতি আমার একটা দায় দায়িত্ব আছে। যার জন্য আমি এগুলো করে থাকি। আমি সবসময় চিন্তা করি যে আমার ব্যবসার একটা বড় অংশ গরিব-দুঃখী মানুষের জন্য দান করে দেব। তাদের কিছু কর্মসংস্থান করার চিন্তা করতেছি।'
তিনি বলেন, 'গরিব মানুষের কষ্ট আমি কাছ থেকে দেখি। সমাজে যারা কঠোর পরিশ্রম করে, কিন্তু ঠিকমতো খাবার পান না তাদের জন্য অন্তত একবেলা ভালো খাবারের আয়োজন করতে পারাটা আমার কাছে সৌভাগ্যের। ভবিষ্যতেও মানুষের জন্য এমন কাজে নিজেকে যুক্ত রাখতে চাই।'
জানা গেছে, মেহেদী হাসান বিপ্লব দীর্ঘদিন ধরেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে মানুষের কল্যাণে কাজ করে আসছেন। কখনো গরিব শিক্ষার্থীর চিকিৎসা, কখনো খাবার বিতরণ, আবার কখনো দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য করেন তিনি। গত বুধবারও তাঁর উদ্যোগে কড়াইল বস্তিতে লাগা ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় দেড় হাজার মানুষের মাঝে রান্না করা ভাত ও গরুর মাংসের প্যাকেট বিতরণ করা হয়।
এসকে/আরআই