ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় বিএনপির দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে ১৪৪ ধারা জারি করেছেন উপজেলা প্রশাসন।
শনিবার (২৯ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পৌর এলাকার স্কুল, মাঠ ও বাজার এলাকায় এ আদেশ কার্যকর থাকবে।
এরআগে শুক্রবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট রাসেল ইকবাল স্বাক্ষরিত ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারার এই আদেশ জারি করেন। পরে এই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে পৌর এলাকায় মাইকিং করে প্রচার হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট রাসেল ইকবাল জানান, 'জারিকৃত পত্র অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ও জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তায় প্রশাসন থেকে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।'
জানা গেছে, ফরিদপুর-১ আসনে বিএনপির দুই মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহ-সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার নাসিরুল ইসলাম এবং বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও সাবেক ভিপি শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনুর অনুসারীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে গ্রুপিং চলে আসছে। এই গ্রুপিংয়ের জের ধরেই আলফাডাঙ্গায় দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির ডাক দেয়। শনিবার বিকেলে পৌরসদরের আরিফুজ্জামান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে খন্দকার নাসিরুল ইসলাম অনুসারী উপজেলা ও পৌর বিএনপি তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়ন ও দলীয় প্রার্থী বিজয়ী করার লক্ষ্যে একটি সমাবেশের আয়োজন করেন। অন্যদিকে একই দিনে বিকেল ৩টায় পৌর সদরের আসাদুজ্জামান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গণে ভিপি শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু সমর্থকরা উপজেলা ও পৌর বিএনপির কমিটি বাতিলের দাবিতে ও গত ৭ নভেম্বর বোয়ালমারীতে দুইপক্ষের সংঘর্ষে যুবদল নেতা মিনহাজুর রহমান লিপনের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেন। বিএনপির দুইপক্ষের সমাবেশকে কেন্দ্র করে কোন ধরনের আইন শৃঙ্খলার অবনতি যাতে না ঘটে সেই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারার আদেশে বলা হয়েছে, ১৪৪ ধারা চলাকালীন সময়ে উল্লিখিত এলাকায় পাঁচ (৫) বা ততোধিক ব্যক্তির একত্রে অবস্থান কিংবা চলাফেরা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। একইসঙ্গে এই সময়ে সব ধরনের সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, গণজমায়েত, বিস্ফোরক দ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র ও সকল প্রকার দেশীয় অস্ত্র বহনসহ প্রদর্শন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ইউএনও রাসেল ইকবাল তার ক্ষমতাবলে জনস্বার্থে এবং শান্তি-শৃঙ্খলা স্থিতিশীল রাখার জন্য এই আদেশ জারি করেছেন। তিনি স্থানীয় জনসাধারণকে আইন মেনে চলার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও প্রশাসন সতর্ক করেছেন।
এ ব্যাপারে খন্দকার নাসিরুল ইসলাম অনুসারী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান খসরু জানান, আমাদের এক সপ্তাহ আগে পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়ন ও দলীয় প্রার্থী বিজয়ী করার লক্ষ্যে সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল। হঠাৎ করে দেখলাম ঝুনু সমর্থকরা প্রতিবাদ সমাবেশের জন্য মাইকিং করছে। দুইপক্ষের সমাবেশের জন্য প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছেন। আমাদের সমাবেশ করবো কি করবো না, বিষয়টি শনিবার সকালে জেলা কমিটির সাথে কথা বলে জানাতে পারবো।
শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু সমর্থিত পৌর যুবদলের আহবায়ক সৈয়দ মিজানুর রহমান জানান, উপজেলা ও পৌর বিএনপির কমিটি বাতিলের দাবিতে এবং গত ৭ নভেম্বর বিপ্লবী সংহতি দিবসে বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির দুইপক্ষের সমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনায় উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মিনহাজুর রহমান লিপনের উপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে এক বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল। তবে যেহেতু প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছেন সেহেতু আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই আমাদের সকল কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গত ২১ অক্টোবর জেলা বিএনপি কর্তৃক ফরিদপুর-১ আসনের তিনটি উপজেলা ও পৌর বিএনপির নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর থেকেই নাসিরুল ইসলাম ও ভিপি ঝুনু গ্রুপের মধ্যে গ্রুপিং তীব্র আকার ধারণ করে। ঘোষিত কমিটিতে খন্দকার নাসিরুল ইসলাম সমর্থকরা প্রাধান্য পাওয়ায় ভিপি ঝুনু গ্রুপ কমিটি বাতিলের দাবিতে লাগাতার বিক্ষোভ চালিয়ে আসছিল। গত ৭ নভেম্বর বোয়ালমারীতে দুই গ্রুপের সমাবেশে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে উভয়পক্ষের ১৫-২০ জন আহত হয়েছিল এবং পাল্টাপাল্টি মামলাও দায়ের হয়। এই গ্রুপিংয়ের ধারাবাহিকতায় আলফাডাঙ্গার আজকের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
এসআর