চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা নির্ভর করে শ্রমবাজারের ওপর। এখন এই শ্রমবাজার বেশিরভাগই দখল করে নিয়েছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রোহিঙ্গারা ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে সাতকানিয়ায় এসে কম টাকায় শ্রম দেওয়ার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়ছেন স্থানীয় শ্রমিকরা।
শনিবার (২৯ নভেম্বর) সকালে কেরানীহাট কাঁচাবাজার সংলগ্ন এলাকায় দেখা যায় স্থানীয় শ্রমিকদের পাশাপাশি রোহিঙ্গা শ্রমিকরা জড়ো হয়ে আছে। এই স্থানটি শ্রমবাজার হিসেবে পরিচিত। আর স্থানীয় লোকজন এখানে এসে কমদামে রোহিঙ্গা শ্রমিকদের নিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন কাজের জন্য। এসব রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছেড়ে এসে এখন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কমদামের ভাড়া বাসায় থাকে। এতে শুধু শ্রমবাজার নয় অপরাধ জগতেও তারা জড়িয়ে পড়ছে।
জানা গেছে, বেশিরভাগ রোহিঙ্গা নির্মাণকাজ, কৃষিকাজ ও ইটভাটায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে এবং অনেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক হিসেবে সাতকানিয়ার শ্রমবাজার দখলে নিয়েছে।
মাহমুদুর রহমান নামে এক দিনমজুর বলেন, আগের মতো কাজ পাই না। সবাই রোহিঙ্গাদের দিয়ে কাজ সেরে নিচ্ছে। রোহিঙ্গাদের মজুরি একেবারে কম হওয়ায় তাদের কাজে নিচ্ছে সবাই।
তিনি আরও বলেন, একদিকে রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে বিভিন্ন এনজিও থেকে ত্রাণসামগ্রী পায়। আবার বাইরে এসে কাজ করেও টাকা আয় করছে। কিন্তু স্থানীয়রা না পায় কাজ, না পায় ত্রাণ। এ অবস্থা চলতে থাকলে রোহিঙ্গাদের কাছে আমরা জিম্মি হয়ে পড়ব।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কর্মক্ষেত্রে এখন শুধু রোহিঙ্গা আর রোহিঙ্গা। শ্রমবাজারসহ চারদিকে রোহিঙ্গাদের বিচরণ। অনেকেই অটোরিকশা চালাচ্ছে। তারা অর্ধেক ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করায় বেকার হচ্ছে স্থানীয়রা।
কেঁওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. মহসিন বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়রা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। যেখানে একজন শ্রমিকের দিনে মজুরি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা সেখানে রোহিঙ্গারা ৩০০ টাকায় কাজ করছে।
স্থানীয় সংবাদকর্মী নুরুল ইসলাম সবুজ বলেন, কম বেতন পেলেও রোহিঙ্গারা কাজ করতে চলে যায়। এ কারণে স্থানীয় শ্রমিকরা কাজ পাচ্ছে না।
এদিকে, গত রাতে উপজেলার ছদাহা ও কেঁওচিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে ২২ রোহিঙ্গা যুবককে আটক করেছে প্রশাসন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খোন্দকার মাহমুদুল হাসান ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সামছুজ্জামান পৃথক এ অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে সহায়তা করেন সেনাবাহিনী ও আনসার সদস্যরা।
অভিযানে ছদাহা ইউনিয়ন এলাকা থেকে নির্মাণ কাজে নিয়োজিত ১০ রোহিঙ্গা যুবককে আটক করা হয়। একই সময় কেঁওচিয়া ইউনিয়নের নয়া খালের মুখ এলাকা থেকে ইটভাটায় কর্মরত আরও ১২ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়।
অন্যদিকে, রোহিঙ্গাদের চাকরি এবং আশ্রয় দিলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে উপজেলা প্রশাসন।
গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সবার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, সাতকানিয়া উপজেলায় বিদ্যমান সব ইটভাটা, কলকারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে রোহিঙ্গাদের নিয়োগ ও বাসা ভাড়া/আশ্রয় দেওয়া আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। রোহিঙ্গাদের বাসা ভাড়া ও কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সামছুজ্জামান বলেন, রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে কাজে লাগানোর বিষয়টি শুধু শ্রম আইন লঙ্ঘন নয়, এটি সরাসরি নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি তৈরি করে। আমরা নিয়মিত মাঠ পর্যায়ে মনিটরিং করছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খোন্দকার মাহমুদুল হাসান বলেন, বর্তমানে ইটভাটার মৌসুম চলছে। এখানে যাতে রোহিঙ্গাদের শ্রমিক হিসেবে চাকরি এবং আশ্রয় না দেয় সেজন্য সতর্ক করা হয়েছে। কেননা সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনে রোহিঙ্গাদের যাতে অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে না পারে, সেজন্য এই গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শুক্রবার রাতের অভিযানে মোট ২২ জন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের থানা পুলিশের মাধ্যমে নির্ধারিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
অবৈধভাবে কাজ করা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান ইউএনও।
এসআর