কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে ক্ষুদ্র কাঠ ব্যবসায়ীর ছেলে মেধাবী শিক্ষার্থী আতাউর রহমান ৪৫ তম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে প্রাথমিকভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ায় এলাকায় ব্যাপক প্রশংসায় ভাসছেন। মেধাবী শিক্ষার্থী আতাউর রহমানের বাড়ী কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের পূর্ব ফুলমতি গ্রামে।
জানা গেছে, মেধাবী শিক্ষার্থী মো: আতাউর রহমানের বাবা একজন ক্ষুদ্র কাঠ ব্যবসায়ী হওয়ায় অনেক কষ্ট করে ছেলের পড়াশুনার খরচ চালিয়েছেন। আতাউর রহমানও অনেক কষ্ট করেই তার বাবা-মায়ের স্বপ্ন পুরণ করার লক্ষ্যে পড়াশুনা চালিয়েছেন।
আতাউর রহমান ২০১৩ সালে বালারহাট আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসিতে জিপি-এ ৫, ২০১৫ সালে রংপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপি-এ ৫ ও ২০২২/২৪ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিশারিজ বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স উত্তীর্ণ হন।
আতাউর রহমান সদ্য ৪৫ তম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে প্রাথমিকভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ায় পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবসহ এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। সেই সঙ্গে আতাউর রহমানের বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের উত্তীর্ণ হওয়ার খবরে এলাকায় ব্যাপক প্রশংসায় ভাবছেন ওই পরিবারটি।
মেধাবী শিক্ষার্থী আতাউর রহমান বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল সরকারের এমন একটি দায়িত্বশীল পদে কাজ করা, যেখানে দেশের মানুষের জন্য কাজে লাগতে পারি। মহান আল্লাহ ও বাবা-মায়ের অশেষ কৃপায় আমার স্বপ্ন পুরণ হয়েছে। আমার এই সাফল্যের পিছনে বাবা-মায়ের অবদান অনেক বেশি থাকায়, আমি আমার বাবা-মায়ের স্বপ্নও পুরণ করতে পেরেছি। সবাই দোয়া করবেন, প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করে গরীব অসহায় মানুষের সেবা, উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নে ও স্বচ্ছ প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলায় ভূমিকা রাখতে পারি। সেই সঙ্গে মানুষের সমস্যার সমাধানে আমার কাছে সবচেয়ে বড় সাফল্য ও স্বপ্ন।’
আতাউর রহমানের বাবা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি একজন ক্ষুদ্র কাঠ ও খড়ি ব্যবসায়ী মাত্র। এক সময় আমি "ছ" মিলের শ্রমিকের কাজ-কাম করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করেছি। এরপর অনেক কষ্টে গত ১৮ থেকে ২০ বছর ধরে কাঠ ও খড়ির ব্যবসা করে কোন রকমেই জীবন জীবিকা নির্বাহ করে এক ছেলে এবং এক মেয়েকে মানুষ করেছি। গত বছর একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। মেয়ে জামাই একটি এনজিওতে কর্মরত। কাঠ-খড়ির এই ক্ষুদ্র ব্যবসা করে আমার একমাত্র ছেলের পড়াশুনার খরচটুকু অনেক কষ্ট করে চালিয়েছি। মহান আল্লাহর রহমতে একমাত্র ছেলে আমার স্বপ্ন পুরণ করেছে। এ জন্য মহান আল্লাহর কাছে লাখো লাখো শুকরিয়া। সবাই আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন, সে যেন সঠিক ভাবে সরকারের অর্পিত দায়িত্ব পালন করে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করতে পারে।’
বালারহাট আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান সরকার বলেন, ‘আতাউর রহমান আমাদের ছাত্র। তার বাবা-মা অনেক কষ্ট করে ছেলের পড়াশুনা চালিয়েছেন। সে সদ্য ৪৫ তম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ায় এটা আমাদের প্রতিষ্ঠান তথা নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের জন্য গর্বের। এক দিকে পরিবারের অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে প্রত্যান্ত গ্রামের এই মেধাবী শিক্ষার্থী সাফল্য এ সমাজের জন্য এক বিরল দৃষ্টান্ত উদাহরণ হয়ে থাকবে। সেই সঙ্গে আতাউর রহমানের বাবা-মা তারাও তাদের সন্তানের দায়িত্ব ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে ফলে তার বাবা-মাও প্রশংসার দাবিদার। আতাউর রহমান তার অর্পিত দায়িত্ব পালনে দেশ ও জাতির কল্যাণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করুক, আমরা তার সাফল্য কামনা করছি।’
ইখা