এইমাত্র
  • কিছুটা ‍কমেছে সবজির দাম, চড়া তেল-পেঁয়াজ
  • মুক্ত হয় উত্তর-পূর্ব ও উত্তরাঞ্চলের বেশ কিছু এলাকা
  • ঝিনাইদহে নসিমন চালককে কুপিয়ে হত্যা
  • দেশে তীব্র শৈত্যপ্রবাহের আভাস
  • যশোরে পোষা কুকুর-বিড়ালে আক্রান্ত বাড়ছে, টিকা সংকট
  • সব ঠিক থাকলে খালেদা জিয়াকে লন্ডন নেওয়া হবে রোববার
  • নওগাঁয় মাদকসহ ১ জন গ্রেপ্তার
  • বিএনপির মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে অগ্নিসংযোগ-বিক্ষোভ-সড়ক অবরোধ
  • নোয়াখালী প্রেসক্লাবে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া
  • ঢাকার পথে ডা. জুবাইদা রহমান
  • আজ শুক্রবার, ২১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ | ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    চট্টগ্রামের দুই ‘গরিব’ স্বামীর স্ত্রী কোটিপতি

    গাজী গোফরান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (চট্টগ্রাম) প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:৩৭ পিএম
    গাজী গোফরান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (চট্টগ্রাম) প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:৩৭ পিএম

    চট্টগ্রামের দুই ‘গরিব’ স্বামীর স্ত্রী কোটিপতি

    গাজী গোফরান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (চট্টগ্রাম) প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:৩৭ পিএম

    চট্টগ্রাম শহরের ব্যস্ত সড়কে প্রতিদিন হাজারো মানুষের ভিড়। শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে চলা এই নগরজীবনের আড়ালে লুকিয়ে থাকে বহু গল্প, অঘটন, অনিয়ম, আর আশ্চর্য উত্থানের কাহিনি। সেই আড়াল থেকেই সাম্প্রতিক সময়ে উঠে এসেছে দু’টি নাম, সেলিম হাওলাদার ও আলমগীর লাতু।

    দুইজনই নিম্নপদস্থ সরকারি কর্মচারী। একজন পুলিশের সাবেক কনস্টেবল, অন্যজন সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের অফিস সহকারী। বেতনের সীমাবদ্ধতায় যাঁরা নিজ নামের ওপর কোনো উল্লেখযোগ্য সম্পদই দেখাতে পারেন না।

    তাদের স্ত্রী, জাহানারা বেগম ও হাসিনা বেগম দু’জনই এখন কোটিপতি। কারও নামে রয়েছে বহুতল ভবন, কারও নামে রয়েছে দামী জমি, দোকানঘর, স্বর্ণ, নগদ অর্থ, সব মিলিয়ে কোটি টাকার সম্পদ।

    দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়–১-এর অনুসন্ধান বলছে, এই সম্পদ অর্জনের বড় অংশই স্বামীদের চাকরিজীবনে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অবৈধ অর্থের ফল। আর সেই অর্থ সাদা করতে ব্যবহার করা হয়েছে ‘হেবামূল দান’, ‘স্বর্ণ বিক্রি’, ‘উপহার’ ও ‘মৌজা দর’ দেখানোর মতো চিরচেনা কিন্তু কৌশলী পদ্ধতি।

    কনস্টেবল সেলিম হাওলাদারের স্ত্রী জাহানারা ভুয়া স্বর্ণ বিক্রি, বোনের জমি ‘হেবামূলে’, আর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ছয়তলা ভবন নির্মাণ করেছে।

    চট্টগ্রাম নগরের জাকির হোসেন বাই লেন। জিইসি মোড়সংলগ্ন গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকায় অবস্থান সেলিম হাওলাদারের পরিবারের ছয়তলা ভবন, টিনশেড কলোনি, দোকান ও প্রতিষ্ঠিত সাম্রাজ্য।

    ১৯৭৬ সালে পুলিশ কনস্টেবল হিসেবে চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর ২০১২ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩৬ বছরের কর্মজীবন কাটান সেলিম। কিন্তু পুরো চাকরিজীবনে তাঁর নামে উল্লেখযোগ্য কোনো সম্পদ নেই।

    কিন্তু তাঁর স্ত্রী জাহানারা বেগম এখন এক কোটি ৭১ লাখ টাকার সম্পদের মালিক, দুদকের তদন্তে এমনটিই উঠে এসেছে। জাহানারা দুদকে জানান ৮৫ লাখ ৫৭ হাজার টাকার সম্পদ আছে তাঁর। কিন্তু প্রকৃত তথ্যের সঙ্গে তা মেলে না। তদন্তে পাওয়া গেছে এর চেয়েও দ্বিগুণের বেশি সম্পদ।

    জাহানারা জানান, ১৯৯৭ সালে মায়ের কাছ থেকে এক শতক জমি হেবামূলে পেয়েছেন। ২০০২ সালে বোনের কাছ থেকে আরও শূন্য দশমিক ১০৬ শতক জমি পেয়েছেন দান হিসেবে। তদন্তে দেখা গেছে, এই জমিগুলো কেনা হলেও কাগজে দেখানো হয়েছে ‘দান’। এতে সম্পদের প্রকৃত উৎস আড়াল করা হয়।

    দুদক বলছে, জাহানারা এমন এক জমি দেখিয়েছেন, যার মূল্য দেখানো হয়েছে আট হাজার টাকা। বর্তমান বাজারমূল্যে এই জমির দাম কয়েক কোটি টাকা। জমির ‘মৌজা দর’ দেখিয়ে প্রকৃত মূল্য আড়াল করার ফাঁদ এটি। জাহানারার বড় জালিয়াতি ধরা পড়ে স্বর্ণ বিক্রির হিসাব থেকে। তিনি দাবি করেন, ২০২০ সালে মিমি সুপারমার্কেটে ‘কর জুয়েলার্স’ নামের দোকানে ২০ লাখ টাকার স্বর্ণ বিক্রি করেছেন। কিন্তু মিমি সুপারমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির তথ্য বলছে, এই নামে কোনো দোকান ২০১৫ সালের পর আর ছিল না। অর্থাৎ স্বর্ণ বিক্রির গল্প পুরোই সাজানো।

    দুদক বলছে, জাহানারার প্রকৃত সম্পদের বর্তমান বাজারমূল্য কমপক্ষে ২০ কোটি টাকা। অথচ তিনি দেখিয়েছেন অল্প কিছু অঙ্ক, যা বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন।

    অভিযুক্ত সেলিম হাওলাদার অবশ্য বলেন, “আমাদের নামে কোনো অবৈধ সম্পদ নেই।”

    জাহানারারও দাবি, “সবই মা-বোনের দেওয়া। কোনো জালিয়াতি করিনি।”

    কিন্তু দুদকের তদন্তে তাদের বক্তব্য টিকেনি। অফিস সহকারী আলমগীর লাতুর স্ত্রী হাসিনা, পিয়নের বেতনে অসম্ভব উত্থান।

    চট্টগ্রামের পাথরঘাটার ব্রিক ফিল্ড বাই লেন। এখানেই বাস আলমগীর লাতুর পরিবারের। পাহাড়তলী সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের অফিস সহকারী ছিলেন তিনি, সাধারণত যাকে ‘পিয়ন’ বলা হয়। এই পদে চাকরি করে কারও নামে আয়কর নথি থাকা বিরল। আলমগীরের ক্ষেত্রেও তাই তাঁর নামে নেই আয়কর নথি।

    কিন্তু তাঁর স্ত্রী হাসিনা বেগমের নামে রয়েছে এক কোটি টাকার বেশি সম্পদ।

    হাসিনা ২০০৭ সালে তিন কড়া জমি কেনেন ২০ লাখ টাকায়। কিন্তু পাথরঘাটা এলাকায় তখনই এক কড়া জমির দাম ছিল দেড় কোটি টাকার কাছাকাছি। স্থানীয় ব্যবসায়ী সাজিদুল ইসলামের ভাষ্যমতে, “তখনও তিন কড়া জমির দাম দেড় কোটি টাকার নিচে পড়েনি।”

    এই জমিতে হাসিনা নির্মাণ করেন চার ইউনিটের ছয়তলা ভবন, ব্যয় দেখানো হয়েছে ৫৬ লাখ টাকা। বাস্তবে এ এলাকায় এমন ভবন নির্মাণের খরচ আরও কয়েক গুণ বেশি।

    হাসিনা নথিতে দেখিয়েছেন, বাবা ও ভাইয়ের দেওয়া অর্থ, ১০ লাখ টাকার স্বর্ণ উপহার, অস্থাবর সম্পদ, পারিবারিক ব্যয়সহ মোট এক কোটি ১২ লাখ টাকার হিসাব। দুদকের মতে, এগুলোর উল্লেখযোগ্য অংশের বৈধ উৎস নেই।

    অভিযুক্ত আলমগীর বলেন, “আমি যে বেতন পেতাম, তা দিয়ে সংসার চলে যেত। সম্পদ স্ত্রী–শ্বশুরবাড়ির টাকায়।”

    হাসিনার দাবি, “স্বামীই সব নথি করে। আমি কিছু জানি না।”

    দুদকের মতে, এই ব্যাখ্যা বিশ্বাসযোগ্য নয়। এই প্রসঙ্গে দুদকের উপসহকারী পরিচালক সবুজ হোসেন সময়ের কন্ঠস্বর-কে বলেন, “দুই স্বামী-স্ত্রীর আর্থিক অবস্থার মধ্যে বিপুল অসামঞ্জস্য। স্বামীদের নামে কিছু নেই, অথচ স্ত্রীদের নামে কোটি টাকার সম্পদ। তদন্তে দেখা গেছে, এই সম্পদের বড় অংশের কোনো বৈধ উৎস নেই।”

    তিনি আরও বলেন, “ভুয়া স্বর্ণ বিক্রি, কম দাম দেখানো, হেবামূল দান, এসব কৌশল ব্যবহার করে আয় গোপন ও অবৈধ সম্পদ সাদা করার চেষ্টা করা হয়েছে।”

    দুদক ইতোমধ্যে দুই কর্মচারীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে।

    চট্টগ্রাম দীর্ঘদিন ধরে নানা সরকারি দপ্তরে দালালি, কমিশন, ঘুষ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের ‘অদৃশ্য অর্থনীতি’র জন্য পরিচিত। তলানি স্তরের কর্মচারীরাও কখনো কখনো সম্পদের মালিক হয়ে ওঠেন, যা কেবল তাদের বেতনে সম্ভব নয়।

    এসআর

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    চলতি সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

    Loading…