কিশোরগঞ্জ ব্যাবসায়িদের ওপর হকারদের হামলার প্রতিবাদে ফুটপাত থেকে স্থায়ীভাবে হকার উচ্ছেদের দাবিতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষনা করেছে ব্যবসায়িরা।
রবিবার (৩০ নভেম্বর) সকাল থেকে চলছে অনর্দিষ্টকালের এই শাটডাউন কর্মসূচি। এ সময় ব্যবসায়িরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ-সমাবেশ করে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
জানা যায়, কিশোরগঞ্জ জেলা শহরে প্রায় ৭ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অপর দিকে সড়কের দুই পাশে ফুটেপাত দখল করে ব্যবসা করছে কয়েক হাজার হকার। গতকাল শনিবার রাতে একটি ছিনতাইয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে শহরের রখখোলা এলাকায় অবস্থিত পালফেব্রিক্স এর মালিক শ্রভ্র কর ও তার কর্মচারি আউয়াল মিয়াকে মারধর করে কয়েকজন ফুটপাতের হকার। এ ঘটনার প্রতিবাদে রাতেই বিক্ষোভ মিছিল করে ব্যবসায়িরা। ব্যবসায়ির ওপর হামলায় জড়িতদের গ্রেফতার ও অবৈধ ফুটেপাতের ব্যবসা উচ্ছেদের দাবিতে রবিবার সকাল থেকে আবারও রাস্তায় নামে ব্যবসায়িরা। শহরের গৌরাঙ্গবাজার, তেরিপট্টি, পুরান থানা, রথখোলা ও বড়বাজারের ব্যবসায়িরা সকাল ১০টা থেকে অনির্দ্রিষ্টকালের জন্য কমপ্লিট শাটডাইন ঘোষনা করে। তারা গৌরাঙ্গবাজার, তেরিপট্টি ও কাচারি এলাকায় রাস্তায় অবরোধ করে বিক্ষোভ-সমাবেশ করে। পরে তারা শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে। কয়েক হাজার ব্যবসায়ি এতে অংশ নেন। অবিলম্বে হামলায় জড়িতদের গ্রেফতারসহ অবৈধ ফুটপাত দখল মুক্ত করতে তারা প্রশাসনের কাছে দাবি জানান ব্যবসায়িরা।
ব্যবসায়িরার জানান, হকারদের কারণে জেলা শহরে যানজটে কষ্ট পায় সাধারণ মানুষ। তাদের কারণেই শহরের আশপাশের এলাকায় ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটে। তাদের দোকানের সামনে রাস্তায় চৌকি ফেরেল শত শত হকার ব্যবসা করছে। প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়া তারা অবৈধ ব্যবসা করছে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা। সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স না দিলেও তাদের অনেকে কোটিপতি। এতে বৈধ দোকানের সাধারণ ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
এদিকে সচেতন মহল বলছে, ব্যবসায়ীদের কমপ্লিট শাটডাউন ও শহর যানজনমুক্ত করার জন্য ফুটপাত থেকে হকার ও ভ্যানগাড়ির ব্যবসা উচ্ছেদ আন্দোলন এক অর্থে যথেষ্ট যৌক্তিক ও সময়োপযোগী বলেই মনে হয়। তবে পাশাপাশি দরিদ্র হকারদের জীবন-জীবিকার বিষয়টিকেও মাথায় রাখতে হবে। ওদের পুনর্বাসনের বিকল্প ব্যবস্থা না করে উচ্ছেদের উদ্যোগ নিলে হাজারো পরিবার বিপদগ্রস্ত হবে। যা কারোরই কাম্য হওয়া উচিত নয়। আমাদের নীতিনির্ধারণী মহল সবক্ষেত্রে বরাবরই একচোখ, অদূরদর্শী ও অপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বাস্তবায়নে সিদ্ধহস্ত। যে জনসমাজে নানামুখী সমস্যা ও সংকট তৈরি হয়। ভাসমান হকার পুনর্বাসনের জন্য অতীতে বহুবার বহু সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কোনো সিদ্ধান্তই ফলপ্রসূ ও বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে দিনে দিনে সমস্যার পাহাড় হয়ে দাঁড়িছে। ভাসমান হকারদের জন্য পরিকল্পিত ছাউনি বা ন্যূনতম তিনতলা হকার মার্কেট তৈরি করে প্রকৃত হকারদের অনুকূলে যৌক্তিক ভাড়ায় দোকান বরাদ্দের ব্যবস্থা করা যায় তাহলে পৌর কর্তৃপক্ষ যেমন ভালো রাজস্ব পাবে, তেমনি হকারদের পুনর্বাসনের কাজটিও হয়ে যাবে।
পথচারী কামরুল ইসলাম জানান, ফুটপাতে দোকান বসানোর ফলে হাঁটার কোনো জায়গা থাকে না। এর ফলে রাস্তা দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়।
রাস্তা দিয়ে হাঁটার কারণে প্রায় সময় গাড়ির সাথে ধাক্কা লাগার ঝুঁকিতে থাকতে হয়, যা দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। অনেক ফুটপাত দোকানে পণ্য রাখার পাশাপাশি আবর্জনা ফেলার স্থান হিসেবেও ব্যবহৃত হয়, যার ফলে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের এই কমপ্লিট শাটডাউনকে শতভাগ সমর্থন করি। নাগরিক জীবন বিপন্নকারী ভাসমান হকারদের রাস্তা থেকে সরাতেই হবে। হকারদের পৃষ্ঠপোষক পেছনের শক্তি কেও চিহ্নিত করার জরুরী। প্রশাসন নির্মোহভাবে সে কাজটি করবেন বলে আশা করি।
কিশোরগঞ্জ ব্যবসায়ি সমিতির সভাপতি মো. আসাদুজ্জামান খান মনির বলেন, ফুটপাত জনসাধারণের চলাচলের জন্য তৈরি করা হয়েছে, অবৈধ হকার বসিয়ে ব্যবসা পরিচালনার জন্য তৈরি করা হয়নি। অবৈধ হকারের দখলে থাকায় ফুটপাত ধরে স্কুল, কলেজের ছাত্রছাত্রীসহ জনসাধারণ চলাচল করতে পারছে না। ছাত্রীদের ইভটিজিংয়ের শিকার হতে হয়। ব্যবসায়িদের ওপর হামলার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার ও ফুটপাত উচ্ছেদ না হলে ব্যবসায়ীরা লাগাতার কর্মসূচি পালন করা হবে।
অবৈধ ফুটপাত উচ্ছেদের দাবিতে দুপুরে ব্যবসায়িরা মিছিল সহ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করে। এ সময় কিশোরগঞ্জ ব্যবসায়ি সমিতির সভাপতি মো. আসাদুজ্জামান খান মনির, সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান মাসুদ, বড় বাজার ব্যবসায়ি সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন, ঈশাখা রোড ব্যবসায়ি সমিতির সভাপতি মো. মাহবুব আলম, সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মিয়াসহ ব্যবসায়ি নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এসআর