জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য, বেসরকারি কারা পরিদর্শক এবং চট্টগ্রাম-১৩ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী জুবাইরুল আলম মানিক ও তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে হত্যার হুমকি, যৌন হয়রানি, চাঁদাবাজি ও সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগ উঠেছে।
গত বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার মুখপাত্র মাহবুবা ইলা খাদিজা।
মানিকের বিরুদ্ধে অশোভন বার্তা, হুমকি ও সাইবার বুলিং এর অভিযোগ এনে ইলা উল্লেখ করেন, কর্ণফুলী অঞ্চলে সামাজিক ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থাকার কারণে মানিকের অনিয়ম ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে তিনি মত প্রকাশ করেন। এরপর থেকেই মানিক ও তাঁর কয়েকজন অনুসারী তাঁকে নিয়মিত হুমকি, অপমান ও মানসিক চাপ দিয়ে আসছেন।
ইলার অভিযোগ, প্রথমদিকে মানিক হোয়াটসঅ্যাপে অশোভন বার্তা পাঠাতেন এবং কুপ্রস্তাব দিতেন। পরে অনলাইনে তাকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও সাইবার বুলিং চালানো হয়। কর্ণফুলী নতুন উপজেলা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে শহীদ ওয়াসিম আকরামের ছবি বাদ দিয়ে মানিক নিজের ছবি ব্যবহার করলে বিরোধ সৃষ্টি হয়। ওই ঘটনার পর তাঁর প্রতি হুমকি আরও বাড়ে।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, বিদেশি নম্বর থেকে তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয় এবং তাঁর কাছে থাকা তথ্য মুছে ফেলতে চাপ সৃষ্টি করা হয়। অতিরিক্ত চাপের কারণে ১৪ মে রাতে তিনি স্ট্রোকে আক্রান্ত হন বলে উল্লেখ করেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, ২০২৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারির ছাত্রদের মশাল মিছিলে মানিকের অনুসারীরা যোগ দিতে চাইলে বাধা দিলে উত্তেজনা তৈরি হয়। এরপর এলাকাভিত্তিক কয়েকটি পক্ষ তাঁকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে বলে অভিযোগে দাবি করা হয়েছে। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার পরও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ পোস্ট করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অভিযোগে জুবায়রুল আলম মানিক, মো. ফরিদ, মো. কামাল, উজ্জিল সাহেদসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করেন ইলা।
অভিযোগ নিয়ে যোগাযোগের জন্য তাকে অন্তত পাঁচবার ফোন দেয়া ও মুঠোফোনে বার্তা পাঠানো হলেও তাঁর কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে মানিকের দাবি, তাকে ফাঁসানো হচ্ছে। অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে জুবাইরুল আলম মানিক সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, ‘মেয়েটা চিনি আগে থেকে। তবে এক বছরে কোনো যোগাযোগ হয়নি। সে একটা ফ্রড। এর আগেও বৈষম্যবিরোধীর আরও অনেকে তাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগে জড়াতে চাওয়ার কথা বলেছেন।’
তিনি দাবি করেন, ‘সে রাজনৈতিক প্ররোচনায় পড়ে আমাকে ফাঁসাতে তৎপর হয়েছে। সিএমপি আমাকে জানিয়েছে তারা আমার চরিত্র ভালোভাবে জানে।’
এদিকে ঘটনাটি নিয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে আরেকটি দিক সামনে এসেছে। গত ২৫ জুন মাহবুবা খাদিজা লিজা ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে সহযোগিতা করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)–এর একটি দেয়াল ভাঙচুর করেন, এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে সিডিএর একাধিক কর্মকর্তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করে তিনি রেহাই পান বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এছাড়া একাধিক সূত্র জানায়, তিনি বর্তমানে আপ বাংলাদেশ পার্টির চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সদস্য সচিব। পার্টির অভ্যন্তরে তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন পরিচয়ে চাঁদাবাজি ও প্রভাব খাটানোর অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর চট্টগ্রাম নগরীর লালদিঘি এলাকা থেকে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে ধরে ছাত্রজনতা। ওই আওয়ামী লীগ নেতা ছাড়াতে তদবির করে এই নারী নেত্রী।
জানা যায়, আওয়ামী লীগের এই নেতাকে আটকের পর সরাসরি তিনি ইলাকে ফোন দেন এবং এতদিন তিনি ইলার আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে ছিলেন। এমন একটি ভিডিও প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
আরও জানা গেছে, তিনি ঘনিষ্ঠদের কাছে বন্দর, সিডিএ ও আনোয়ারার কারখানাগুলোতে কীভাবে আয় করা যায় তা নিয়ে দিকনির্দেশনা দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
একদিকে এনসিপি নেতা মানিকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি, হুমকি ও সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগ; অন্যদিকে অভিযোগকারী নেত্রীর বিরুদ্ধেও উঠে এসেছে ভাঙচুর, চাঁদাবাজি ও প্রভাব খাটানোর তথ্য। ফলে ঘটনাটি ঘিরে তৈরি হয়েছে জটিল রাজনৈতিক ও নৈতিক প্রশ্ন।
আরডি