যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে রোগীর চাপ মারাত্মকভাবে বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি চাপ দেখা দিয়েছে মেডিসিন ওয়ার্ড, শিশু ওয়ার্ড ও করোনারি কেয়ার ইউনিটে। হাসপাতালের বারান্দা, সিঁড়ি, এমনকি টয়লেটের সামনেও রোগী রাখা হচ্ছে। শয্যার তুলনায় দ্বিগুণের বেশি রোগী ভর্তি থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হিমশিম খাচ্ছেন।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক বলছেন, রোগীর তুলনায় চিকিৎসক-সেবিকা ও কর্মচারী সংকট রয়েছে। ৫০ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে ২৫০ শয্যা হাসপাতাল। ফলে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে গিয়ে হাপিত্যেশ অবস্থা। এছাড়া ধার করা জনবল দিয়ে চালানো হচ্ছে আইসিইউ ও সিসিইউ।
জানা গেছে, যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) ২২১, শনিবার (২৯ নভেম্বর) ৬২৮ ও রোববার (৩০ নভেম্বর) ৬৩৫ রোগী ভর্তি ছিল। রোগীর চাপ এত বেশি যে যেখানে সামান্য জায়গা মিলছে সেখানেই রোগীর চিকিৎসার জন্য বিছানা দেয়া হচ্ছে। হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে রোগীর সারি দীর্ঘ, চিকিৎসক ও সেবিকারা রোগীর কাছে পৌঁছানোও কঠিন বলে রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করেছেন।
হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্র জানায়, মোট ২৫০ শয্যার বিপরীতে প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ রোগী থাকার বিষয়টি অবশ্যই অবাক ব্যাপার। প্রতিদিন রোগীর চাপ বাড়ায় বর্তমান জনবল দিয়ে চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে হিমশিম অবস্থা। সেই সাথে মারাত্মক জায়গা সংকট রয়েছে। জনবল সংকেট মন্ত্রণালয়ে বার বার চাহিদাপত্র পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু সমাধানের কোনো নাম নেই।
সবশেষ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ২০২০ সালের ২৮ অক্টোবর ৬০ চিকিৎসক, ১০০ জন সেবিকা ও ১৬৫ জন কর্মকর্তা কর্মচারীর চাহিদাপত্র পাঠায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে। তবে সেই চাহিদাপত্রের সাড়া এখনও পাওয়া যায়নি।
হাসপাতালটিতে বর্তমানে ৫২ পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৪৬ জন চিকিৎসক। অর্থাৎ শূণ্য পদ রয়েছে ৬ পদ। যার মধ্যে সিনিয়র কনসালটেন্ট পদ ৩টি ও জুনিয়র কনসালটেন্ট পদ ৩ টি।
উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে হাসপাতালটির করোনারি কেয়ার ইউনিটের তিনতলা ভবন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। তবে জনবল সংকটে স্থবির ছিল এর চিকিৎসা কার্যক্রম। ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হাসপাতাল কতৃপক্ষ ২৪ জন চিকিৎসক ৫৬ জন নার্স ও ১৪৩ জন কর্মচারী নিয়োগের চাহিদাপত্র পাঠায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ে। কিন্তু কয়েক দফায় ইউনিটটি চালুর সময় পিছিয়ে যায়। শেষমেষ নানা সংকটের মধ্যে ২০০৯ সালের ১২ জুলাই যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের জনবল দিয়েই শুরু হয় চিকিৎসা কার্যক্রম।
এদিকে, জনবল সংকটে যে কোন সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে হাসপাতালের আইসিইউ। ২০২১ সালে করোনাকালীন সময়ে হাসপাতালে আইসিইউ চালু হওয়ার পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ৪ চিকিৎসককে এখানে দায়িত্ব পালনের জন্য পাঠানো হয়। কিন্তু ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ই আরপিপি প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ওই ৪ চিকিৎসককে মন্ত্রনালয়ে ফেরত নেয়া হয়েছে।
বর্তমানে আইসিইউ বিভাগের নিজস্ব কোন চিকিৎসক নেই। উপজেলা থেকে ধার করা ৫ জন চিকিৎসক দিয়ে কোন রকম আইসিইউ সেবা চালানো হচ্ছে। ৫ চিকিৎসকের সকলে মেডিকেল অফিসার। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আইসিইউতে নেই।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন শাফায়াত জানান, চলতি সপ্তাহে প্রতিদিন ৬০০–৬৫০ রোগী ভর্তি হচ্ছেন। মাঝে মধ্যে সংখ্যাটা ৭০০ পার হচ্ছে। শীতজনিত অসুখের কারণে শিশু ও বয়স্ক রোগীর চাপ বেশি, পাশাপাশি বর্তমানে ১২ জন ডেঙ্গু রোগীও ভর্তি।
তিনি আরও জানান, রোগীর সুবিধার্থে ধার করা চিকিৎসক ও কর্মচারী দিয়ে করোনারি কেয়ার ইউনিট ও আইসিইউ পরিচালনা করা হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালে প্রতিদিন ৫০০ টাকা ব্যয় করে রোগীরা আইসিইউ সেবা পাচ্ছে। একই সেবা বেরসকারি কোন হাসপাতাল থেকে নিতে হলে প্রতিদিন ব্যয় হবে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। সরকারি হাসপাতালের আইসিইউ বন্ধ হয়ে গেলে রোগীদের আর্থিক ক্ষতির সাথে দুর্ভোগ বাড়বে।
আরডি