ক্রোয়েশিয়ার রাজধানীতে রবিবার কয়েক হাজার মানুষ একটি ফ্যাসিবাদবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধসংক্রান্ত ইতিহাস পুনর্লিখন এবং দেশে উগ্র ডানপন্থী মতাদর্শের উত্থানের প্রতিবাদে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ক্রোয়েশিয়ায় ডানপন্থী জাতীয়তাবাদীরা ক্রমে তাদের এজেন্ডা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এর ফল হিসেবে জাতিগত সার্ব সংখ্যালঘুদের লক্ষ্য করে বিভিন্ন ঘটনা ঘটছে এবং প্রকাশ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন নাৎসিপন্থী শাসনের স্লোগান ব্যবহারের প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে।
নভেম্বরের শুরুতে মুখোশধারী একদল ব্যক্তি ক্রোয়েশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর স্প্লিটে একটি সার্ব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ভণ্ডুল করে দেয় এবং সেখানে উস্তাশা স্যালুট পুনরাবৃত্তি করে।
১৯৯০-এর দশকে বেলগ্রেড সমর্থিত বিদ্রোহী সার্বদের সঙ্গে স্বাধীনতার প্রশ্নে ক্রোয়েশিয়ার যে যুদ্ধ হয়েছিল, তার পর থেকে জাতিগত সার্বদের সঙ্গে সম্পর্ক এখনো নাজুক রয়ে গেছে।
জুলাই মাসে জাগরেবে অতি-জাতীয়তাবাদী গায়ক মার্কো পেরকোভিচ থমসনের এক কনসার্টে লক্ষাধিক মানুষ জড়ো হয়। থমসনের জনপ্রিয় গানগুলোর একটি উস্তাশা স্লোগান দিয়ে শুরু হয় এবং তার ভক্তদের অনেকের শরীরে সংশ্লিষ্ট প্রতীকও দেখা যায়।
ওই কনসার্টের পরবর্তী দিনগুলোতে দুইজন সংসদ সদস্য সংসদের মঞ্চ থেকেই সেই স্লোগান দেন। এ ছাড়া অক্টোবরে সংসদে একটি গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ক্রোয়েশিয়ার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন মৃত্যু শিবিরে নিহতদের সংখ্যাকে খাটো করে দেখানো হয়।
রবিবারের মিছিলের আয়োজকরা এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ফ্যাসিস্টরা আর লজ্জিত নয়, আর তারা লুকিয়েও নেই।’ তারা ‘সহিংসতা, ইতিহাস পুনর্লিখন এবং ভীতি প্রদর্শনের’ বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
বিক্ষোভকারীদের একজন, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র ক্রিস্তিয়ান ক্রালয় বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের বড় সমস্যা হলো উস্তাশা মতাদর্শের ব্যাপক পুনরুত্থান।’
উস্তাশা সংগঠন শত সহস্র সার্ব, ইহুদি, রোমা এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী ক্রোয়েশীয়দের নির্যাতন ও হত্যা করেছিল। যদিও তাদের স্বাধীন ক্রোয়েশিয়া রাষ্ট্র ছিল একটি নাৎসি পুতুল রাষ্ট্র, তবে তাদের আধুনিক অনুসারীরা তাদেরই জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে দেখে।
জাগরেব থেকে প্রায় ৮৫ কিলোমিটার পূর্বে বিয়েলোভার শহর থেকে আসা দাদো গাজদা বলেন, তিনি ‘কট্টর ডানপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই সব মানুষকে সমর্থন জানাতেই’ এসেছেন।
তিনি এএফপিকে বলেন, এখন সময় এসে গেছে আমাদের উদ্বেগের কথা বলার, কেন আমরা আমাদের দেশ নিয়ে চিন্তিত—তা প্রকাশ করার।
এদিকে ‘আমরা সবাই ফ্যাসিবাদবিরোধী’—এই স্লোগান দিতে দিতে রৌদ্রোজ্জ্বল কিন্তু ঠান্ডা দিনে মিছিলকারীরা নগরীর কেন্দ্রস্থল পেরিয়ে মূল চত্বরে গিয়ে পৌঁছন। তাদের সামনে বহন করা হচ্ছিল একটি বিশাল ব্যানার, যেখানে লেখা ছিল—‘ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ’।
একই দিনে ক্রোয়েশিয়ার আরো তিনটি শহর—রিয়েকা, পুলা ও জাদার—যেগুলো সবই আদ্রিয়াটিক উপকূলে অবস্থিত, সেখানেও অনুরূপ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
এবি