এইমাত্র
  • কিছুটা ‍কমেছে সবজির দাম, চড়া তেল-পেঁয়াজ
  • মুক্ত হয় উত্তর-পূর্ব ও উত্তরাঞ্চলের বেশ কিছু এলাকা
  • ঝিনাইদহে নসিমন চালককে কুপিয়ে হত্যা
  • দেশে তীব্র শৈত্যপ্রবাহের আভাস
  • যশোরে পোষা কুকুর-বিড়ালে আক্রান্ত বাড়ছে, টিকা সংকট
  • সব ঠিক থাকলে খালেদা জিয়াকে লন্ডন নেওয়া হবে রোববার
  • নওগাঁয় মাদকসহ ১ জন গ্রেপ্তার
  • বিএনপির মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে অগ্নিসংযোগ-বিক্ষোভ-সড়ক অবরোধ
  • নোয়াখালী প্রেসক্লাবে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া
  • ঢাকার পথে ডা. জুবাইদা রহমান
  • আজ শুক্রবার, ২১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ | ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    এইডসের নতুন ‘হটস্পট’ চট্টগ্রাম, তিন বছরে আক্রান্ত ২১৭

    গাজী গোফরান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (চট্টগ্রাম) প্রকাশ: ১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:২৮ পিএম
    গাজী গোফরান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (চট্টগ্রাম) প্রকাশ: ১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:২৮ পিএম

    এইডসের নতুন ‘হটস্পট’ চট্টগ্রাম, তিন বছরে আক্রান্ত ২১৭

    গাজী গোফরান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (চট্টগ্রাম) প্রকাশ: ১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:২৮ পিএম

    চট্টগ্রাম বিভাগে এইচআইভি–এইডস পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল আকার ধারণ করছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় সাম্প্রতিক সময়ে শনাক্তের হার এমনভাবে বেড়েছে যে বিশেষজ্ঞরা এটিকে এখন জনস্বাস্থ্যের “উচ্চঝুঁকিপূর্ণ সংকট” হিসেবেই বিবেচনা করছেন।

    চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অ্যান্টি রিক্টোভাইরাল থেরাপি (এআরটি) সেন্টারের সর্বশেষ বিশ্লেষণ বলছে, শুধু গত এক বছরেই এই অঞ্চলে নতুন করে ৭৫ জনের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। প্রতি মাসে গড়ে ছয়জন করে নতুন রোগী যুক্ত হয়েছেন। তিন বছরের হিসাবে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১৭; মৃত্যু হয়েছে ৫১ জনের।

    এই উর্ধ্বমুখী প্রবণতা বিশেষজ্ঞদের গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের মতে, আক্রান্তের হার বাড়লেও সচেতনতা, প্রতিরোধব্যবস্থা ও সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণের প্রবণতা অনুপাতহীনভাবে কম, ফলে অকাল মৃত্যু ঠেকানো যাচ্ছে না। গত তিন বছরের তথ্য বিশ্লেষণেও দেখা গেছে, মৃত্যুর বড় একটি অংশই ঘটেছে চিকিৎসা শুরু করার আগেই, কারণ রোগীরা হাসপাতালে আসেন অত্যন্ত অবনত অবস্থায়।

    জাতীয় পর্যায়ের তথ্যও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। জাতিসংঘের এইডস কর্মসূচি ইউএনএইডসের হিসেবে বাংলাদেশে এইডস আক্রান্তের সংখ্যা ১৩ হাজার ২০০ জন। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এইডস–এসটিডি প্রোগ্রাম (এএসপি) বলছে দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ৮৬৫, যাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশই চট্টগ্রামসহ ২৩টি ঝুঁকিপূর্ণ জেলার বাসিন্দা। দেশে এ পর্যন্ত ৯২৪ জন রোগী মারা গেছেন; আক্রান্তদের মধ্যে শিশু রয়েছে ৩০০-এর বেশি।

    চট্টগ্রাম অঞ্চলের চিত্র আরও ভয়াবহ। এখানে শনাক্ত হওয়া রোগীদের বড় অংশই প্রবাস ফেরত শ্রমিক কিংবা তাদের পরিবার। চিকিৎসকদের মতে, বিদেশে অবস্থানকালে অনেক শ্রমিক ঝুঁকিপূর্ণ যৌনসম্পর্কে জড়ান, অথচ এ বিষয়ে তাদের জ্ঞান খুবই সীমিত। দেশে ফিরে আসার পরেও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যপরীক্ষা বা সচেতনতা না থাকায় স্ত্রী–সন্তান কিংবা ঘনিষ্ঠ স্বজনদের মধ্যে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে শিশু থাকার এটিই প্রধান কারণ।

    চমেক হাসপাতালের চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগের প্রধান ডা. জুনায়েদ মাহমুদ খান পরিস্থিতিকে অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে অভিহিত করেছেন। তিনি সময়ের কন্ঠস্বর-কে বলেন, ‘আমরা গত এক বছরে যে সব রোগীকে হারিয়েছি, তাদের অধিকাংশই হাসপাতালে এসেছেন রোগের একেবারে শেষ ধাপে। আগে এলে তাদের অনেককে বাঁচানো যেত। মানুষ এখনো জানে না, চিকিৎসা শুরু করলে এইচআইভি–এইডস নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং রোগী স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে।’

    তার মতে, চট্টগ্রামের আক্রান্তদের একটি বড় অংশই প্রবাসী বা প্রবাসী পরিবারের সদস্য হওয়ায় এই অঞ্চলে বিশেষ সচেতনতামূলক কার্যক্রম জরুরি। প্রবাসে অবস্থানকালে ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ, দেশে ফিরে পরীক্ষা না করা এবং পরিবারকে অনিচ্ছাসত্ত্বেও ঝুঁকির মুখে ফেলে দেওয়াই এখন মৃত্যুহারের বড় কারণ।

    চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় চর্ম ও সামাজিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান রাহাতও একই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি মনে করিয়ে দেন, অভিবাসী শ্রমিকদের মধ্যেই সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি বাড়ছে। অনেকেই নিজেদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বা উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষা করান না। ফলে ভাইরাস শরীরে থাকলেও তারা তা জানেন না; এভাবেই অজান্তেই পরিবারে নতুন রোগী তৈরি হচ্ছে। অথচ সময়মতো শনাক্ত হলে চিকিৎসার মাধ্যমে ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, এবং রোগী দীর্ঘদিন সুস্থ থাকতে পারেন।

    চলতি বছর নতুন শনাক্ত ৭৫ জনের মধ্যে অধিকাংশই চট্টগ্রাম জেলার বাসিন্দা। ফেনী, কক্সবাজার, রাঙামাটি ও অন্যান্য জেলার বসবাসকারীরাও রয়েছে সেসব তালিকায়। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এই প্রবণতা যদি এখনই নিয়ন্ত্রণে না আনা যায়, তাহলে চট্টগ্রাম বিভাগ খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই দেশের সবচেয়ে বড় এইচআইভি–সংক্রমণকেন্দ্রে পরিণত হতে পারে।

    সরকারি ও বেসরকারি উভয় পর্যায়ে সচেতনতা, স্ক্রিনিং ও চিকিৎসা সেবার প্রসার বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, প্রতিটি প্রবাসী শ্রমিকের বিদেশযাত্রার আগে এবং দেশে ফিরে বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্যপরীক্ষা চালু করা সময়ের দাবি। একই সঙ্গে সমাজে এইডসকে ঘিরে থাকা কুসংস্কার দূর করা জরুরি, কারণ ভয় বা সামাজিক লজ্জা রোগীদের চিকিৎসার বাইরে ঠেলে দিচ্ছে।

    চট্টগ্রাম অঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবাকর্মীরা মনে করেন, সময়মতো শনাক্তকরণ, সঠিক চিকিৎসা ও সমাজের সহযোগিতা থাকলে এইডস মৃত্যুর কারণ নয়, এটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ। কিন্তু এজন্য প্রয়োজন দ্রুত পদক্ষেপ, কার্যকর সচেতনতা, এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর ওপর গুরুত্ব দিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।

    আরডি

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    চলতি সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

    Loading…