বহুল আলোচিত দুর্নীতির মামলায় প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা চাওয়ার পর প্রথমবারের মতো আদালতে হাজির হয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। দীর্ঘদিন পর সোমবার দুর্নীতির এই মামলায় ইসরায়েলের আদালতে হাজির হন তিনি।
এর আগে ওই দুর্নীতির মামলা দেশটির প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমার আবেদন করেন তিনি। ক্ষমা চাওয়ার ওই আবেদনে সমর্থন জানিয়েছেন নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তবে ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতারা নেতানিয়াহুর ক্ষমা চাওয়ার আবেদনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন, যদি নেতানিয়াহুকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়, তাহলে তা শর্তসাপেক্ষে হওয়া উচিত। তারা বলছেন, এ জন্য নেতানিয়াহুকে রাজনীতি থেকে অবসর অথবা দোষ স্বীকার করতে হবে। আবার অনেকে বলছেন, ক্ষমার আবেদন করার আগে তাকে প্রথমে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে; যা ২০২৬ সালের অক্টোবরের মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
ইসরায়েলের সাব্কে প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট বলেছেন, নেতানিয়াহু যদি রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়াতে রাজি হন, তবেই কেবল তার বিচার প্রক্রিয়া বন্ধের পক্ষে তিনি।
তিনি বলেন, এভাবে আমরা এই অধ্যায়ের অব্সান, ঐক্যবদ্ধ এবং দেশ পুনর্গঠন করতে পারি। বেনেটের নেতৃত্বে ২০২১ সালের নির্বাচনে যে জোট সরকার ক্ষমতায় আসে, তা নেতানিয়াহুকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল। পরের বছর নির্বাচনে জিতে তিনি আবারও ক্ষমতায় ফেরেন।
ইসরায়েলে চালানো একাধিক জনমত জরিপে দেখা গেছে, নেতানিয়াহু সরে দাঁড়ালে পরবর্তী সরকার গঠনের সবচেয়ে সম্ভাব্য জোটের নেতৃত্বে আসতে পারেন নাফতালি বেনেট।
• নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ঘুষ ও জালিয়াতির অভিযোগ
ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে দীর্ঘ তদন্তের পর ২০১৯ সালে ঘুষগ্রহণ, প্রতারণা ও আস্থাভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়। এসব অভিযোগে দায়ের করা মামলায় তার বিচার শুরু হয় ২০২০ সালে।
যদিও নিজের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নেতানিয়াহু। ক্ষমার আবেদনেও তিনি কোনও দোষ স্বীকার করেননি। ইসরায়েলি এই প্রধানমন্ত্রীর আইনজীবীরা বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে তিনি সম্পূর্ণ খালাস পাবেন বলে আশাপ্রকাশ করছেন।
সোমবার তেল আবিবের আদালতের নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে শত শত মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় কমলা রঙের কারাগারের পোশাক পরে নেতানিয়াহুকে কারাগারে পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
বিক্ষোভকারী ইলানা বারজিলাই বলেন, নেতানিয়াহু দোষ স্বীকার না করে কিংবা কোনও দায় না নিয়ে ক্ষমার আবেদন করেছেন। এটি অগ্রহণযোগ্য।
রোববার প্রকাশিত এক চিঠিতে ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজোগকে নেতানিয়াহুর আইনজীবীরা জানান, ঘনঘন আদালতে হাজিরা দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। তারা দাবি করেন, নেতানিয়াহুকে ক্ষমা করে দেওয়া হলে তা দেশের জন্যও কল্যাণকর হবে।
ইসরায়েলে সাধারণত মামলা শেষ এবং দণ্ড ঘোষণার পরই ক্ষমা করে দেওয়া হয়। বিচার চলাকালীন ক্ষমা ঘোষণার কোনও নজির নেই। সোমবার এক বিবৃতিতে হারজোগ বলেছেন, ক্ষমার আবেদনটি বিতর্ক সৃষ্টি করেছে এবং বহু ইসরায়েলিকে অস্থির করে তুলেছে। তিনি বলেন, এটি সঠিক ও সূক্ষ্মভাবে বিবেচনা করা হবে। আমি কেবল রাষ্ট্র ও সমাজের স্বার্থকেই প্রাধান্য দেব।
• ট্রাম্প বলছেন, নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে মামলা ‘রাজনৈতিক’
নেতানিয়াহুর ডানপন্থী জোটের সহযোগীরা তার আবেদনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এর দুই সপ্তাহ আগে ট্রাম্প হারজোগকে চিঠি লিখে নেতানিয়াহুকে ক্ষমা বিবেচনার অনুরোধ জানান। চিঠিতে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলাকে ‘রাজনৈতিক ও ভিত্তিহীন’ বলে অভিহত করেন তিনি।
আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নেতানিয়াহুর প্রতিদ্বন্দ্বীরা তার মামলাগুলোকে মূল ইস্যু বানিয়েছেন। ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে ডানপন্থী এই সরকারি জোট পরবর্তী নির্বাচনে সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হিমশিম খেতে পারে বলে বহু জরিপে উঠে এসেছে।
সূত্র: রয়টার্স
এবি