কুড়িগ্রামে বীর প্রতীক তারামন বিবির ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। সোমবার (১ ডিসেম্বর) বাদ যোহর কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের আরাজী পলাশবাড়ী এলাকার তার বাসভবনে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে দোয়া পরিচালনা করেন আরাজী পলাশবাড়ী দারুস সালাম জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। অপরদিকে রাজিবপুর তার কবরে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা ও দোয়া করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফজলে এলাহী জানান, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা ও দোয়া করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাব দেওয়া হলেও দীর্ঘ ২৫ বছর তিনি জানতেই পারেননি এই সম্মানের কথা। ১৯৯৫ সালের শেষের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ঢাকায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে তার হাতে বীর প্রতীক পদক তুলে দেন। দেশের ইতিহাসে বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মাত্র দুইজন নারীর মধ্যে তিনি একজন।
১৯৫৭ সালে কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার শংকর মাধবপুর গ্রামে আবদুস সোহবান কুলসুম বিবি দম্পতির ঘরে জন্ম নেন তারামন বিবি। তার শৈশব-কৈশোর ছিল দারিদ্র্য ও সংগ্রামে পরিপূর্ণ। সাত ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয় ছিলেন তিনি। লেখাপড়ার সুযোগ না পেয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। ঠিক সেই সময়েই ১৯৭১ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে।
প্রথমদিকে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে রান্না করতেন, তাদের জন্য খাবার যোগান দিতেন, অস্ত্র লুকিয়ে রাখতেন এবং পাকিস্তানি বাহিনীর খবর সংগ্রহ করতেন তিনি। ধীরে ধীরে রান্নার খুন্তির পাশাপাশি রাইফেল চালানোও শেখেন। পরবর্তীতে সম্মুখ সমরে অংশ নিয়ে সত্যিকারের এক সংগ্রামী যোদ্ধায় রূপ নেন তারামন বিবি।
১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকার তার অসীম সাহসিকতা ও অবদানের জন্য তাকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করেন। কিন্তু দারিদ্র্য আর প্রত্যন্ত এলাকার কারণে অনেক বছর তার প্রকৃত পরিচয় অজানাই থেকে যায়। অবশেষে ১৯৯৫ সালে ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজের অধ্যাপক ও গবেষক বিমল কান্তি কুড়িগ্রামের অধ্যাপক আবদুস সবুর ফারুকীর সহযোগিতায় তারামন বিবিকে খুঁজে বের করেন। এরপর ঢাকায় এনে তার পরিচয় নতুন করে দেশের মানুষের সামনে তুলে ধরা হয়।
বীর প্রতীক তারামন বিবির ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলা সদর উপজেলার কাচারীপাড়ায় নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
এফএস