দক্ষিণ আফ্রিকা, ইসওয়াতিনি ও জাম্বিয়ায় প্রথমবারের মতো এইচআইভি প্রতিরোধে নতুন এক ইনজেকশন প্রয়োগ শুরু করেছে। সোমবার থেকে এই নতুন উদ্যোগ শুরু হয়েছে। আফ্রিকায় এ ধরনের জনস্বাস্থ্য উদ্যোগ এই প্রথম। এই অঞ্চলে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি এইচআইভি সংক্রমিত মানুষের বসবাস। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
লেনাকাপাভির নামের এই ওষুধ ছয় মাসে একবার নিতে হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি সংক্রমণের ঝুঁকি ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশ কমাতে পারে। কার্যত এটি একটি শক্তিশালী টিকার মতোই কাজ করে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রতি পাঁচজন প্রাপ্তবয়স্কের একজন এইচআইভি আক্রান্ত। দেশটির উইটস বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা ইউনিট ইউনিটেইডের (জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থা) সহায়তায় সোমবার থেকে ইনজেকশনটি প্রয়োগ শুরু করে।
ইউনিটেইড জানিয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকায় লেনাকাপাভির ব্যবহারের মধ্য দিয়ে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে বাস্তব পরিবেশে এর প্রথম প্রয়োগ শুরু হলো। যুক্তরাষ্ট্রে ব্যক্তিপ্রতি বছরে ২৮ হাজার ডলার দামের এই ওষুধ কতজনকে দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে কোনও তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। আগামী বছর বড় পরিসরে জাতীয় পর্যায়ে এটি ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে।
এদিকে পার্শ্ববর্তী জাম্বিয়া ও ইসওয়াতিনি গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের একটি কর্মসূচির অংশ হিসেবে এক হাজার ডোজ পেয়েছে। সোমবার বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দুই দেশই ইনজেকশনটি চালু করে। ইসওয়াতিনির হুকউইনি এলাকায় গান-নাচের মাধ্যমে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বহু মানুষ ইনজেকশন নিতে লাইনে দাঁড়ান।
প্রধানমন্ত্রী রাসেল দিলামিনি বলেন, আজ আমাদের জাতীয় এইচআইভি প্রতিরোধে নতুন মোড় শুরু হলো। ইনজেকশনটি জনগণকে রক্ষার জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মসূচির আওতায় ওষুধ উৎপাদনকারী গিলিয়াড সায়েন্সেস তিন বছরে উচ্চ ঝুঁকির দেশগুলোতে দুই মিলিয়ন মানুষকে বিনা লাভে লেনাকাপাভির সরবরাহে সম্মত হয়েছে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অংশ নিলেও ওয়াশিংটন দেশটিকে কোনও ডোজ দেবে না বলে জানানো হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জেরেমি লুইন বলেন, আমরা প্রত্যাশা করি দক্ষিণ আফ্রিকার মতো সক্ষম দেশগুলো নিজেদের জনগণের জন্য নিজেরাই অর্থ জোগান দেবে।
জীবন রক্ষা বনাম মুনাফার প্রশ্ন
সমালোচকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র যে পরিমাণ ডোজ দিচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। বাজারমূল্য সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। পূর্ব ও দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০২৪ সালের ইউএনএইডস তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের ৪ কোটি ৮ লাখ এইচআইভি আক্রান্ত মানুষের প্রায় ৫২ শতাংশই বসবাস করেন। শুধু জাম্বিয়াতেই আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ, প্রতিবছর আরও ৩০ হাজার নতুন সংক্রমণ শনাক্ত হয়। ইসওয়াতিনিতে ১২ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার মানুষ এই ভাইরাস নিয়ে বেঁচে আছেন।
ইউনিটেইড ও বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের চুক্তিতে ভারতীয় ওষুধ কোম্পানিগুলো ২০২৭ সাল থেকে লেনাকাপাভির জেনেরিক সংস্করণ ১০০টির বেশি দেশে বছরে প্রায় ৪০ ডলারে সরবরাহ করবে।
এক দশকের বেশি সময় ধরে ব্যবহৃত প্রিপ (প্রি-এক্সপোজার প্রফিল্যাক্সিস) দৈনিক সেবনযোগ্য হওয়ায় বিশ্বব্যাপী সংক্রমণ প্রতিরোধে এর কার্যকারিতা সীমিত ছিল বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
এফএস