কিশোরগঞ্জে বাড়ির উঠান থেকে কামড় দিয়ে হুমাইরা আক্তার (১৯ মাস বয়সী) এক শিশুকে টেনে জঙ্গলে নিয়ে যায় শিয়াল। এ ঘটনায় ওই শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার (০২ ডিসেম্বর) সকালে ওয়ালী নেওয়াজ খান কলেজ ছাত্রদলের সদস্যসচিব রাসেল আহমেদ জীবন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গতকাল রাতে সদর উপজেলার বৌলাই ইউনিয়নের পুঁথিপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত শিশুর হুমাইরা আক্তার সদর উপজেলার বৌলাই ইউনিয়নের উত্তর রাজকুন্তী পুঁথিপাড়া গ্রামের স্থানীয় অটোরিকশাচালক হুমায়ুন কবিরের মেয়ে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, রাতে মায়ের কোলে বসে খেলতে খেলতে হুমায়রা বায়না ধরল বড় চাচা গোলাম মোস্তফার ঘরে যাওয়ার। মা চায়না আক্তার চাচা গোলাম মোস্তফার ঘরে দিয়ে ফিরে আসেন। কিছুক্ষণ পর আবার মাকে ডাকতে ডাকতে বের হয় ছোট্ট হুমায়রা। চাচার ঘর থেকে একা মায়ের কোলে ফেরার পথে ঘরের উঠোন অতিক্রম করতেই অন্ধকারে ওঁত পেতে থাকা এক শিয়াল ঝাঁপিয়ে পড়ে হুমায়রার ওপর। মুহূর্তেই শিশুটিকে গলায় কামড়ে টেনে নিয়ে যায় ঝোপের আড়ালে।
প্রথমদিকে কেউ কিছু বুঝতে না পারলেও বেশকিছু সময় পর হুমায়রা না ফেরায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন মা। চাচার ঘরে গিয়ে জানতে পারেন-হুমায়রা অনেক আগেই বের হয়ে এসেছে! আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো পরিবারে। শুরু হয় ব্যাকুল খোঁজাখুঁজি। অবশেষে ঘরের পেছনের ঝোপে মিলল ছোট্ট হুমায়রার ক্ষতবিক্ষত নিথর দেহ। শরীরে নখের আঁচড়, ক্ষত-বিক্ষত অঙ্গ।
হুমায়রার ভাবি মর্তুজা বেগম জানান, সন্ধ্যার নামাজের পর ঘরের সামনে দিয়ে দুটি শিয়াল যেতে দেখেছিলেন। পরে হুমাইরার মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনি ধারণা করেন ওই শিয়াল দুটিই শিশুটিকে টেনে নিয়ে গেছে।
হুমায়রার চাচী সমলা আক্তার বলেন, ‘এশার আজানের পর হুমায়রাকে তার চাচার ঘরে দিয়ে আসেন। কিছুক্ষণ পর আবার মায়ের কাছে আসতে চেয়ে চোখের আড়ালে ঘর থেকে একা একা বের হয়ে আসে। আমরা কেউ বলতে পারি না। অনেকক্ষণ পর হুমায়রার মা এসে মেয়েকে খোঁজতে লাগলে সবাই ঘর থেকে বের হয়। পরে ঘরের পেছনে গিয়ে হুমায়রার মরদেহ পড়ে থাকতে দেখি। পুরো শরীরে নখের আঁচড়, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে মাংস নাই, কামড়ের দাগ।’
হুমায়রার বাবা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালাই। এশার আযানের পর ফোন করে মেয়ের মৃত্যুর খবর জানানো হয়। আমার তিনটা ছেলে আর একটা মেয়ে ছিল। মেয়ের আবদারে মা আমার ভাই মোস্তফার ঘরে দিয়ে আসে। সেখান থেকে একা একা বের হয়ে আসার পর এই ঘটনা ঘটে।’
তিনি আরও জানান, সন্ধ্যায় হুমাইরা তার চাচা গোলাম মোস্তফার ঘর থেকে খেলাধুলা করে ফিরছিল। এ সময় পরিবারের কেউ বুঝে ওঠার আগেই বাড়ির উঠান থেকে শিশুটিকে টেনে নিয়ে যায় শিয়াল। পরে খোঁজাখুঁজির মধ্যে শিশুটির মরদেহ পাওয়া যায়। তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সবার ছোট হুমাইরাকে সবচেয়ে বেশি আদর করতেন বলে জানান তিনি।
ওয়ালী নেওয়াজ খান কলেজ ছাত্রদলের সদস্যসচিব রাসেল আহমেদ জীবন বলেন, ‘আগে এলাকায় বনজঙ্গল ও আঁখক্ষেত বেশি থাকায় শিয়ালের খাদ্যের অভাব ছিল না। এখন জঙ্গল কমে যাওয়ায় লোকালয়ে শিয়ালের উপদ্রব বেড়ে গেছে। এমন মৃত্যু অত্যন্ত বেদনাদায়ক। ঘটনাটি এলাকায় চরম আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।’ স্থানীয়রা দ্রুত শিয়ালের উপদ্রব রোধে প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন।
কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘শিশু হুমায়রার এমন মৃত্যুর সংবাদ আমার জানা নেই। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’
উল্লেখ্য, এর আগে চলতি বছরের ১৯ মার্চ পাশ্ববর্তী তেরহাসিয়া গ্রামের মো. লিংকনের ২ বছর বয়সী ছেলে মো. আরাফ নামে আরেকটি শিশুকে বাড়ির উঠান থেকে টেনে নিয়ে যায় শিয়াল।
ইখা