বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হয়ে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বেগম জিয়াকে দেখতে তার ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে আসছেন বলে নানা মহলে আলোচনা চলছে। তাদের প্রশ্ন, তারেক রহমান কি সত্যিই দেশে ফিরছেন?
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল গণমাধ্যমকে বলেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা নেই। তিনি আসবেন।
সোমবার (০১ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, খুব শিগগির বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরবেন।
এদিকে, সালাহউদ্দিন আহমদের বক্তব্যের পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পুরোনো ভিডিও পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে তারেক রহমানকে দেখা গেছে, তিনি দেশে ফিরছেন।
তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভিডিওটি পুরোনো। চলতি বছরের জুন মাসে স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান বাংলাদেশ থেকে লন্ডনে পৌঁছালে তারেক রহমান তাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান। ভিডিওটি সে সময় ধারণ করা।
এর আগে, শনিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তারেক রহমান বলেন, ‘সংকটকালে মায়ের স্নেহ-স্পর্শ পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা যেকোনো সন্তানের মতো আমারও রয়েছে।’ তিনি এ-ও বলেন, এখনই দেশে ফেরার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ তার জন্য অবারিত ও একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। স্পর্শকাতর এই বিষয়টি বিস্তারিত বর্ণনার অবকাশও সীমিত। রাজনৈতিক বাস্তবতার এই পরিস্থিতি প্রত্যাশিত পর্যায়ে উপনীত হওয়া মাত্রই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে আমার সুদীর্ঘ উদ্বিগ্ন প্রতিক্ষার অবসান ঘটবে বলেই আমাদের পরিবার আশাবাদী।’
তারেক রহমানের এমন মন্তব্যের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ‘এ ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বাধা নেই।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরতে চাইলে একদিনেই ওয়ানটাইম পাস (ট্রাভেল পাস) দেওয়া সম্ভব বলেও জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, তার দেশে ফেরায় কোনো ধরনের বাধা নেই।
তারেক রহমান এখনো ট্রাভেল পাস চাননিও বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। মঙ্গলবার (০২ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারেক রহমান চাইলেই তার ট্রাভেল পাস ইস্যু করা হবে। তারেক রহমানের ঢাকায় ফেরার বিষয়ে এখন পর্যন্ত সরকারকে কোনো আনুষ্ঠানিক তথ্য দেওয়া হয়নি।
তৌহিদ হোসেন বলেন, দল বা পরিবার সিদ্ধান্ত নিলে সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
এছাড়া, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নিরাপত্তায় যা যা দরকার সরকার তা দিতে প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
মঙ্গলবার (০২ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এ বিষয়টি নিয়ে এখানে (কোর কমিটি) কোনো আলোচনা হয়নি। বাংলাদেশে কারও কোনো নিরাপত্তার শঙ্কা নেই।’
তারেক রহমানকে নিরাপত্তা দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কি প্রস্তুতি রয়েছে? জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা সবার জন্যই প্রস্তুত। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সবার জন্যই প্রস্তুত আছে, বিশেষভাবে যাদের জন্য দরকার..., যাদের জন্য স্পেশাল যেটা দেওয়া দরকার- এটার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।’
এদিকে, খালেদা জিয়ার সর্বশেষ অবস্থা প্রসঙ্গে মঙ্গলবার দুপুরে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সঙ্গে সারাক্ষণ যোগাযোগ রাখছেন।
অন্যদিকে, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে তারেক রহমান বলেন, দেশবাসীর সম্মিলিত সমর্থনই জিয়া পরিবারের শক্তি ও প্রেরণার উৎস।
তারেক রহমান লেখেন, ‘বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য যেভাবে সহযোগিতা ও শুভকামনা জানানো হচ্ছে, জিয়া পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা সবার প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান ওয়ান-ইলেভেনের পর ২০০৮ সালে কারাগার থেকে বেরিয়ে সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান। তারপর আর তিনি দেশে ফেরেননি। ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথমবারের মতো স্বীকার করেন ২০১২ সালে তারেক রহমান যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন এবং এক বছরের মধ্যেই সেটি গৃহীত হয়।
এতদিন বিএনপি নেতাদের অভিযোগ ছিল, আওয়ামী লীগ সরকারের মিথ্যা মামলা ও বাধার কারণেই দেশে ফিরতে পারছেন না তারেক রহমান। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ১৫ মাস পরও দেশে ফিরছেন না কেন, বিশেষ করে মায়ের অসুস্থতা জেনেও কেন আটকে আছেন বিদেশ বিভুঁইয়ে এমন প্রশ্ন ও কৌতূহল ক্রমশ জোরালো হয়ে উঠছে।
এমআর-২