চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় দুই মাস ধরে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার পদ শূন্য থাকায় থমকে আছে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রশাসনের নিয়মিত কার্যক্রম। তদারকি, পরিদর্শন, নথি যাচাই ও ফাইল অনুমোদন সব ক্ষেত্রেই দেখা দিয়েছে অচলাবস্থা। শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রশাসনিক স্থবিরতার প্রভাব পড়ছে পুরো উপজেলার স্কুল-কলেজের ওপর।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, সর্বশেষ কর্মকর্তা মো. ফেরদৌস হোসেন ২০১৯ সালের ২১জুলাই আনোয়ারায় যোগদান করেন। তবে চলতি বছরের ৯ অক্টোবর বদলি হয়ে তিনি মিরসরাইয়ে চলে যান। এরপর থেকে পদটি শূন্য। সাময়িকভাবে চট্টগ্রাম জেলার সহকারী পরিদর্শক মো. আলমগীর হোসেনকে দায়িত্ব দেওয়া হলেও তিনি নিয়মিত অফিস করতে না পারায় প্রশাসনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ ঝুলে আছে। অফিসের অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি নন।
উপজেলা শিক্ষা অফিসের চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘কয়েক মাস ধরে আমাদের বেতন বন্ধ। এখন জেলার সহকারী পরিদর্শক দায়িত্বে আছেন, কিন্তু পরিস্থিতি খুবই জটিল।’
বিভিন্ন স্কুল–কলেজে যোগাযোগ করে জানা গেছে, কর্মকর্তা শূন্য থাকায় প্রশাসনিক ফাইল অনুমোদন, রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত নথি প্রেরণসহ একাধিক কার্যক্রমে বিলম্ব হচ্ছে।
চাতরী ইউনিয়ন বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবু তাহের বলেন, ‘পদটি শূন্য থাকলেও সহকারী পরিদর্শককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি আজ অফিস করেছেন। আপাতত বড় অসুবিধা হয়নি।’
বটতলী শাহ মোহছেন আউলিয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ প্রদীপ কুমার দে বলেন, ‘স্কুলগুলো সরাসরি যুক্ত, তবে কলেজেরও অনেক ক্ষেত্রে উপজেলা অফিসের সহায়তা লাগে। একজন শিক্ষা কর্মকর্তা থাকলে কাজ দ্রুত হয়, এটা নিশ্চিত।’
দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী পরিদর্শক মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘সমস্যা তো আছেই। এগুলো কাটিয়ে ওঠার দায়িত্ব আমাদের। সপ্তাহে দুই–তিন দিন এখানে অফিস করি, আবার জেলাতেও দায়িত্ব আছে। দুই জায়গার কাজই করতে হচ্ছে।’
বেতন বন্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি সত্য। জেলা ও উপজেলা অফিস বিষয়টি সমাধানে কাজ করছে। খুব শিগগিরই সমাধান হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল আজিজ বলেন, ‘অফিসার নাই তো। বেশিরভাগ অবসরে গেছেন। কর্মকর্তা দেওয়ার মতো লোকই নেই। আনোয়ারায় অতিরিক্ত কর্মকর্তা দেওয়াও কঠিন।’
বেতন-ভাতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সংক্ষেপে বলেন,‘আমি মিটিংয়ে আছি।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম জেলায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আছেন মাত্র তিনটি উপজেলায়—মিরসরাই, কর্ণফুলী ও ফটিকছড়িতে।
অন্য ১২টি উপজেলায় গুরুত্বপূর্ণ এই পদ শূন্য। সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সংখ্যাও মাত্র তিনজন। ফলে জেলায় একযোগে কয়েকটি উপজেলার দায়িত্ব সামলানো কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
এর ফলে পরিদর্শন, তদারকি, প্রতিষ্ঠান অনুমোদনসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো দীর্ঘসূত্রতায় ভুগছে।
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘কাজ ঠিকঠাক মতোই চলছে। সারাদেশেই মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সংখ্যা কম। এখানে সহকারী পরিদর্শক দায়িত্বে আছেন, তিনি নিয়মিত কাজ করছেন।’
ইখা