এইমাত্র
  • কিছুটা ‍কমেছে সবজির দাম, চড়া তেল-পেঁয়াজ
  • মুক্ত হয় উত্তর-পূর্ব ও উত্তরাঞ্চলের বেশ কিছু এলাকা
  • ঝিনাইদহে নসিমন চালককে কুপিয়ে হত্যা
  • দেশে তীব্র শৈত্যপ্রবাহের আভাস
  • যশোরে পোষা কুকুর-বিড়ালে আক্রান্ত বাড়ছে, টিকা সংকট
  • সব ঠিক থাকলে খালেদা জিয়াকে লন্ডন নেওয়া হবে রোববার
  • নওগাঁয় মাদকসহ ১ জন গ্রেপ্তার
  • বিএনপির মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে অগ্নিসংযোগ-বিক্ষোভ-সড়ক অবরোধ
  • নোয়াখালী প্রেসক্লাবে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া
  • ঢাকার পথে ডা. জুবাইদা রহমান
  • আজ শুক্রবার, ২১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ | ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    বরিশালে ফের হস্তান্তরের আগেই কালভার্ট ফাটল

    আরিফ হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (বরিশাল) প্রকাশ: ২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:২৮ পিএম
    আরিফ হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (বরিশাল) প্রকাশ: ২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:২৮ পিএম

    বরিশালে ফের হস্তান্তরের আগেই কালভার্ট ফাটল

    আরিফ হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (বরিশাল) প্রকাশ: ২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:২৮ পিএম

    বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অর্থায়নে নির্মিত বক্স কালভার্টগুলো উদ্বোধনের আগেই ফাটল ধরেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার এবং তড়িঘড়ি করে কাজ শেষ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে নির্মাধীন কালভার্ট ব্রিজ হস্তান্তরের আগেই ফাটল শিরোনামে বেশ কিছু গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের ছয় মাস যেতে না যেতেই ফের আরও একটি ব্রিজ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনাটি এখন আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিনিত হচ্ছে।

    সর্বশেষ উপজেলার দক্ষিণ রফিয়াদি কালু মাঝির বাড়ির সামনে খালে মধ্যে নির্মাণ করা কালভার্ট (বক্স কালভার্ট) নির্মাধীন কাজ শেষ না হতেই এবং ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কালভাট ব্রিজটি হস্তান্তর করার আগেই কালভার্টটির বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরায় ধ্বংসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

    তবে ঐএলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের অভিযোগ নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় উজেলার দক্ষিণ রফিয়াদি কালু মাঝির বাড়ির সামনে খালে মধ্যে নির্মাণ করা হয় কালভার্টটির বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। শুধু তাই নয় উদ্বোধনের আগেই কালভার্টের গাইড ওয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। বিষয়টি স্থানীয়রা জানাজানির পর হুড়োহুড়ি করে মাটি দিয়ে দিয়ে ফাটল ঢেকে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে এলাকাবাসী।

    অন্যদিকে, নির্মাধীন ব্রিজ হস্তান্তরের আগেই ফাটল দেওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা শাহীনসহ একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, নিম্নমানের সমগ্রী দিয়ে কালভার্ট ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছে। কালভার্ট ব্রিজটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর ও ব্রিজের কাজ এখনও সস্পূর্ন শেষ হওয়ার আগেই ব্রিজটি দু’পাশের সাইড ওয়ালে ফাটল ধরেছে।

    স্থানীয়রা অভিযোগ করে আরও বলেন, ব্রিজ নির্মাণ করার সময় কাজের অনিয়ম ও নিম্ন মানের সমগ্রী দিয়ে কাজ করছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মের্সাস পি.এম.এর এন্টারপ্রাইজ।

    র্দীঘ দিন ধরে উপজেলার দক্ষিন রফিয়াদি গ্রামের বাসিন্দাসহ আশপাশের ৩/৪ টি গ্রামের বাসিন্দারা জীবনের ঝূঁকি নিয়ে একটি ভাঙ্গা লোহার পোল পারাপার করেই চালাচল করতে হতো তাদের।

    তবে স্থানীয়দের দূর্ভোগের কথা চিন্তা করে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু/কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্প’র মাধ্যমে উপজেলার দক্ষিণ রফিয়াদি কালু মাঝির বাড়ির সামনে খালে উপর ৯ দশমিক ১৫ মি.সেতু/ কালভার্ট নির্মাণের জন্য ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে ৩৩ লক্ষ ১৭ হাজার ৯ শ’ ৫০ টাকা ব্যয়ে কালভার্ট নির্মাণ কাজ পান মের্সাস পি.এম.এর এন্টারপ্রাইজ।

    স্থানীয় কবির বলেন, ‘বক্স কালভার্ট নির্মাণ করার সময়ই নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় আমরা এলাকাবাসী এক হয়ে এর প্রতিবাদ করলে ঠিকাদার বিষয়টি আমরা দেখে বাবুগঞ্জ উপজেলার নিবার্হী অফিসার ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে জানালে তারা ঘটনাস্থলে এসে পরিদর্শন করে যায়। কিন্তু তার পরে কাজের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মের্সাস পি.এম.এর এন্টারপ্রাইজ এর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করেই তাদের অধিকাংশ বিল পেমেন্ট করে দিয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা।’

    স্থানীয় বিএনপি কর্মী লাভু বলেন, ‘কালভার্টটি নির্মাণ করার সময় তারা প্রতিবাদ করলে ঠিকাদার ও তার লোকজন তাদের লাঞ্চিত করেন। অভিযোগ করে তারা আরও বলেন, কাজে অনিয়ম হচ্ছে বিষয়টি প্রকল্প কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানালেও কোন লাভ হয়নি। উল্টো তারা ঠিকাদার কর্তৃক লাঞ্চিত হয়েছেন। প্রকল্প অফিসার অর্থের বিনিময় ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা বা কাজ বন্ধ রাখেনি। কারন হচ্ছে অর্থের কাছে প্রকল্প অফির্সার বিক্রি হয়েছেন। তাই তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করেই কাজের অধিকাংশ বিল পেমেন্ট করেছেন। তবে আমাদের স্থানীয়দের প্রশ্ন একটাই যে, কাজে অনিয়ম ও নিম্নমানের সমগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানানোর পরে তারা ঘটনাস্থান পরিদর্শন করার পরেও কেন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন না করেনি। কাজের বিল এবং কোন ব্যবস্থা নেওয়া হলো না কেন! এটাই আমরা জানতে চাই।’ তারা আরও বলেন, তাহলে কি সংশ্লিস্ট কর্মকতারা কি মোটা অংকের বিনিময় তাদের অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে অর্থের লোভে নিশ্চুপ!

    উল্লেখ্য, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে চাঁদপাশা ইউনিয়নের ডিক্রিরচর গ্রামে নির্মাণাধীন ৪০ লাখ টাকা মূল্যের কালভার্ট (বক্স কালভার্ট) নির্মাণেও একই ঘটনা ঘটেছিলো। পরে বিষয়টি গনমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরও সেখানেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা আজ পর্যন্ত গ্রহন করেনি উপজেলা প্রশাসন ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তারা।

    এ ছাড়া ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সোহেল হোসেন’র বিরুদ্ধে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সোহেল হোসেন’র কমিশন না দিলে কোন কাজ করা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান গুলো নম্ভব নয় বলে অভিযোগ করেন একাধিক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠার মালিকরা।

    এ ছাড়াও গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা), কাবিখা/কাবিটা/ টিআর (সাধারণ ও বিশেষ), অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি, ভিজিএফ কর্মসূচি, এাণ সামগ্রী বিতরণ (জিআর, ক্যাশ, শুকনা খাবার, খাদ্যশস্য, ঢেউটিন, তাবু বিতরণ), সেতু কালভার্ট নির্মাণ কাজে যে বরাদ্দ বাবুগঞ্জ উপজেলায় দেওয়া হয় সেগুলোতে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির চলছে। যেমন প্রকল্প কর্মকর্তাকে ঘুষ দিলেই অনিয়ম হয়ে যা নিয়ম ।

    একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বাবুগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সোহেল হোসেন এর অনিয়মের কারনেই একের পর একের প্রকল্পের নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের ঘটনা ঘটছে। শুধু তাই নয় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে অর্থ দিয়েই প্রকল্পের কাজ গুলো নিতে হয় বলে অভিযোগ করেন একাধিক ব্যাক্তি।

    প্রকল্প কাজের অনিয়ম- দূর্নীতির বিষয়ে জানতে বাবুগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সোহেল হোসেন মুঠো ফোন তিন দিন ধরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেনি। পরে প্রতিবেদক তার কার্যলয়ে গিয়ে বক্তব্য এবং নিউজের তথ্য চাইলে তিনি না দিয়ে বলেন অনিয়ম-দূর্নীতি করছি ঠিক আছে। আপনি নিউজ করেন। আমি এবিষয়ে কোন তথ্য দিবো না। যা করার তা আপনি করেন।

    বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ সাথে কথা হলে তিনি বলেন, কালভার্ট নির্মাণ কাজে কোন অনিয়ম হলে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। এবং তদন্ত করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইন ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তিনি আরও বলেন, কাজ হস্তান্তরের আগে নির্মাণ কালভার্ট ফাটল দেখা দিলে তাদের জমানত বাজেয়াপ্রাপ্ত করা হবে। পাশিপাশি কাজ হস্তান্তরের আগে ফাটল দেখা গেলে প্রয়োজনে সেটা ভেঙ্গে নতুন করে নির্মাণ করা হবে।

    এ বিষয়ে বরিশাল জেলা প্রশাসক মো: খায়রুল আলম সুমন বলেন, কালভার্ট ব্রিজ নির্মাণে যদি কোন অনিয়ম-দূর্নীতি হয়ে থাকে তাহলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তিনি আরও বলেন, কোন অনিয়মকে ছাড় নয়। অভিযোগ পেলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

    উল্লেখ্য, এর আগেও একই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার প্রকল্পের অধীনে বক্স কালভার্ট নামে মাত্র করা হয়েছে। সেগুলোতেও অসংখ্য ফাটল রয়েছে। তবে স্থানীয়রা এবার তাকিয়ে রয়েছে নবাগত জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার কি ব্যবস্থা নেন, সেদিকে।

    ইখা

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    চলতি সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

    Loading…