এইমাত্র
  • কিছুটা ‍কমেছে সবজির দাম, চড়া তেল-পেঁয়াজ
  • মুক্ত হয় উত্তর-পূর্ব ও উত্তরাঞ্চলের বেশ কিছু এলাকা
  • ঝিনাইদহে নসিমন চালককে কুপিয়ে হত্যা
  • দেশে তীব্র শৈত্যপ্রবাহের আভাস
  • যশোরে পোষা কুকুর-বিড়ালে আক্রান্ত বাড়ছে, টিকা সংকট
  • সব ঠিক থাকলে খালেদা জিয়াকে লন্ডন নেওয়া হবে রোববার
  • নওগাঁয় মাদকসহ ১ জন গ্রেপ্তার
  • বিএনপির মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে অগ্নিসংযোগ-বিক্ষোভ-সড়ক অবরোধ
  • নোয়াখালী প্রেসক্লাবে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া
  • ঢাকার পথে ডা. জুবাইদা রহমান
  • আজ শুক্রবার, ২১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ | ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    দুবেলা খাবারের টাকাও ছিল না, সেই দেলোয়ার আজ সহকারী জজ

    আতিকুল হা-মীম, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:৩০ পিএম
    আতিকুল হা-মীম, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:৩০ পিএম

    দুবেলা খাবারের টাকাও ছিল না, সেই দেলোয়ার আজ সহকারী জজ

    আতিকুল হা-মীম, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:৩০ পিএম

    আনোয়ারা উপজেলার বরুমচড়া ইউনিয়নের চাঁদুয়াপাড়ার ছেলে মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের জীবনে অভাব ছিল প্রতিদিনের সঙ্গী। সাত ভাইবোনের সংসারে বাবা আবদুর রহমান ছিলেন স্থানীয় ভূমি অফিসের কর্মচারী। আয়ের তুলনায় সংসার ছিল বড়, প্রয়োজন আরও বড়। দুবেলা ভাতের চিন্তা, শরীরে ছেঁড়া শার্ট, পরনে জীর্ণ প্যান্ট। এভাবেই বড় হয়ে উঠেছেন দেলোয়ার। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার দিনগুলোতে কোনো কোনো দিন হাতে থাকত মাত্র ২০ টাকা। সেই টাকাতেই হোটেলে ভাত নিতেন, যার সঙ্গে ফ্রি পাওয়া ডাল আর এক-দুইটি পেঁয়াজুই ছিল তাঁর প্রতিদিনের খাবার। তবুও পড়াশোনা ছাড়েননি। কারণ মাথায় ছিল বাবার বলা একটি কথা ‘দেখিস, তুই বিচারক হতে পারিস কি না।’

    ২০০৪ সালের এক বিকেলের ঘটনা আজও ভোলেন না দেলোয়ার। তখন তিনি বরুমচড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। টিপটিপ বৃষ্টিতে ভিজে গরুর জন্য ঘাস কেটে ফিরছিলেন। পথে দেখা হয় বিদ্যালয়ের শিক্ষক দীপক চৌধুরীর সঙ্গে। পরদিন তাঁর বাবাকে ডেকে শিক্ষক জানান, দেলোয়ারকে যেন আর কোনো কাজ করানো না হয়। সামনে বৃত্তি পরীক্ষা, প্রস্তুতিতে মন দিতে হবে। বাবাও কথাটি গুরুত্ব দিয়ে নেন। সেদিনের সেই পরামর্শ দেলোয়ারের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। সেই বছরই তিনি প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় পাস করেন। পরে বুঝেছেন, পড়াশোনার ভিত গড়ে দিয়েছিলেন সেই শিক্ষকই।

    দেলোয়ারের জীবনে বড় ধাক্কা আসে ২০১২ সালে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে সমাজতত্ত্ব বিভাগে ভর্তি হওয়ার কিছুদিন পরই তিনি বাবাকে হারান। বাবা মারা যাওয়ার পর পুরো পরিবার আর্থিক টানাপোড়েনে পড়ে যায়। কিন্তু বাবার স্বপ্ন তাঁকে থামতে দেয়নি। আবার চেষ্টা করে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তির সুযোগ পান দেলোয়ার। সেই মুহূর্তে মনে হয়েছিল, স্বপ্নের পথে তিনি আরো এক ধাপ এগিয়ে গেলেন।

    আইন বিভাগে পড়া মানেই খরচ। বই, নোট, ফরম সবই ব্যয়বহুল। বাড়িতে টাকা পাঠানোর মতো কেউ নেই। তাই প্রতিদিন টিউশনি করতে হতো দেলোয়ারকে। সকালবেলা ক্লাস, বিকেলে টিউশনি ও রাতে পড়াশোনা। এভাবেই কাটে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। অনটনের মধ্যে থেকেও মা ও ভাইবোনেরা ভরসা দিতেন। তাঁরা বলতেন, ‘টাকার চিন্তা করিস না, তুই জজ হবি।’ এই বিশ্বাসই তাঁকে মনোবল দিত।

    বিশ্ববিদ্যালয় শেষে শুরু হয় কঠিন পথ। ২০১৯ সালে ১৩তম বিজেএস পরীক্ষায় অংশ নেন, ব্যর্থ হন। এরপর ধারাবাহিকভাবে ১৪তম, ১৫তম, ১৬তম বিজেএসেও মৌখিক পরীক্ষায় বাদ পড়েন। প্রতিটি ব্যর্থতা তাঁকে ভেতরে ভেতরে ভেঙে দিচ্ছিল। কিন্তু বন্ধুরা পাশে ছিল। তারা পরামর্শ দিত, হাল না ছাড়তে। কেউ কেউ সাহায্যও করতেন। অবশেষে দেলোয়ার টিউশনি কমিয়ে পুরো মনোযোগ দেন ১৭তম বিজেএসের প্রস্তুতিতে।

    ২০২৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি সেই কাঙ্ক্ষিত দিন এসে যায়। ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পর নিজের নাম তালিকায় দেখে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি দেলোয়ার। কান্না ভেঙে পড়ে তাঁর চোখ। মনে হচ্ছিল, বাবা যদি আজ বেঁচে থাকতেন, সবচেয়ে খুশি তিনিই হতেন। ছেঁড়া শার্ট পরে শাটলে চড়ে ভর্তি পরীক্ষায় যাওয়া সেই ছেলেটি আজ দেশের বিচারব্যবস্থায় সহকারী জজ। তাঁর জীবনের সংগ্রাম, ব্যর্থতা আর দাঁতে দাঁত চেপে এগিয়ে যাওয়ার গল্প আজ অনেক তরুণের জন্য অনুপ্রেরণা।

    দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘এই পথচলায় পরিবার, বড় ভাই, বন্ধু, শিক্ষক সবাই আমাকে শক্তি দিয়েছে। আজ আমি যেখানে দাঁড়িয়ে, তাদের প্রতি আমি চিরঋণী।’

    তিনি আরও বলেন, ‘বারবার ব্যর্থ হওয়ার পর তাঁর বন্ধুরা তাঁকে শক্তি জুগিয়েছেন। তাঁরা টাকাপয়সার দুশ্চিন্তা না করে চেষ্টা চালিয়ে যেতে বলতেন। সেই অকৃত্রিম ভালোবাসা তাঁকে নতুন সাহস দেয়। টিউশনি কমিয়ে পূর্ণ মনোযোগ দেন ১৭তম বিজেএসের প্রস্তুতিতে।’

    অভাবের ভিতরেও যে স্বপ্ন টিকে থাকে, লড়াই করলে তার পরিণতি একদিন সুন্দর হয়, দেলোয়ারের জীবন যেন তারই সপ্রমাণ উদাহরণ।

    এসআর

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    চলতি সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

    Loading…