শীতের আগমনে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলায় জমে উঠেছে খেজুরের রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরির মৌসুম। ভোরবেলা গাছে ওঠা গাছিদের পদচারণা, চুলায় জ্বাল দেওয়া রসের মিষ্টি সুবাস গ্রামবাংলার শীতকালীন দৃশ্য যেন প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
উপজেলার অভিজ্ঞ গাছি মোঃ শরিফুল ইসলাম। তার বাড়ি রাজশাহীর বাগা থানায় হলেও বাপ-দাদার আমল থেকেই তারা নাগরপুরে খেজুর রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরির সঙ্গে যুক্ত। প্রায় ১৫ বছর ধরে তিনি পেশাগতভাবে এই কাজে নিয়োজিত।
শরিফুল ইসলাম জানান, ভোরের আগে গাছে ওঠা, হাঁড়ি বসানো, রস সংগ্রহ করা এবং প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করা এ পুরো প্রক্রিয়া অত্যন্ত পরিশ্রমের। তিনি বলেন,“উপযুক্ত আবহাওয়া ও ভালো রস থাকলে প্রতি মৌসুমে আমি প্রায় ২০ মণ গুড় উৎপাদন করতে পারি।”তিনি আরও বলেন, রসের বিশুদ্ধতা এবং চুলার আঁচ নিয়ন্ত্রণ ছাড়া ভালো গুড় তৈরি করা সম্ভব নয়। সামান্য ভুল হলেও গুড়ের স্বাদ ও রঙ নষ্ট হয়ে যায়।
নাগরপুর উপজেলা কৃষি অফিসার এসএম রাশেদুল হাসান সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন,“খেজুরের রস থেকে গুড় উৎপাদন স্থানীয় অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সরকারি সহায়তা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষকরা উৎপাদন বাড়াতে পারছেন। আমরা নিয়মিত পরামর্শ, প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের উৎসাহিত করছি।”তিনি আরও জানান, সরকারি সহায়তা শুধু উৎপাদন বৃদ্ধি করছে না, বরং গাছিদের মানসম্মত খেজুর গুড় উৎপাদনে সহায়ক হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, শীত জুড়ে শরিফুল ইসলামসহ অন্যান্য গাছিরা গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত খাঁটি খেজুর গুড় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি করেছে। গাছিরা মনে করেন, সরকারি সহায়তা ও সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনা থাকলে এই ঐতিহ্য আগামী প্রজন্মের জন্য আরও সমৃদ্ধভাবে টিকে থাকবে।
শরিফুল ইসলাম বলেন, খেজুরের রস সংগ্রহ থেকে গুড় তৈরির প্রতিটি ধাপ যেন তার কাছে শুধু পেশা নয়, উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া দায়িত্ব যা তিনি গর্বের সঙ্গে তিন প্রজন্ম ধরে বয়ে আছেন।
এসআর