বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের আজ ৪ তারিখ। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্ত হয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল। মুক্তির সে খবর ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। বিজয়ের বার্তা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌছানোর পর তাদেরকে করে তোলে আরও দুর্বার, অপ্রতিরোধ্য।
৭১-এর এই দিনে মুক্ত হয় সিলেটের কানাইঘাট উপজেলা, লক্ষীপুর, চাঁদপুরের মতলব কুষ্টিয়ার খোকসা ও কুড়িগ্রামের উলিপুর। পাক-হানাদার বাহিনীকে হটিয়ে মুক্তির স্বাদ পান এসব অঞ্চলের মানুষ।
জানা যায় , ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর সিলেটের কানাইঘাট উপজেলাকে পাক-হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধারা ৩ ডিসেম্বর রাতে পাক-হানাদার বাহিনীকে বিভিন্ন দিকে থেকে ঘেরাও করেন। ৪ ডিসেম্বর ভোর রাতে পাক-হানাদার বাহিনীর সাথে মুক্তি বাহিনীর তুমুল যুদ্ধ সংঘটিত হয়। সেই যুদ্ধে মুক্তি বাহিনীর পক্ষে নেতৃত্ব মেজর জেনারেল চিত্তরঞ্জন দত্ত (সি আর দত্ত) আর পাক বাহিনীর পক্ষে নেতৃত্ব দেন ক্যাপ্টেন বসারত। মুখোমুখি লড়াইয়ের একপর্যায়ে পরাজয় বরণ করে পাক হানাদার বাহিনীর সদস্যরা। আর জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধারা কানাইঘাট উপজেলাকে হানাদার মুক্ত করে বিজয় উল্লাসে ফেটে পড়েন।
এদিকে, ১৯৭ সালের আজকের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বাত্মক আক্রমণে হানাদার মুক্ত হয় লক্ষ্মীপুর জেলা। মুক্তিকামী মানুষ লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়ে উদ্যাপন করে বিজয়ের আনন্দ। তবে ৫৪ বছর পরেও জেলার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বধ্যভূমি ও গণকবর অবহেলা-অযত্নে পড়ে আছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
তথ্য অনুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধের সময় লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক লুটপাট, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাযজ্ঞ চালায় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসররা। এই বর্বরতার বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা জেলায় ১৯টি সম্মুখযুদ্ধ এবং ২৯টি দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনা করেন।
যুদ্ধে শহীদ হন ৩৫ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং অসংখ্য মুক্তিকামী মানুষ। দালাল বাজার-রামগঞ্জ সড়কে ১৭টি বড় যুদ্ধের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধারা ৬০ থেকে ৭০ জন পাকসেনাকে হত্যা করতে সক্ষম হন। ডিসেম্বরের ২ ও ৩ তারিখে পাকসেনারা নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে পিছু হটলে মুক্তিযোদ্ধারা মাদাম ব্রিজ উড়িয়ে দেন, এতে দেড় শতাধিক রাজাকার আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। এরপরই ৪ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুর পুরোপুরি হানাদারমুক্ত হয়।
অপরদিকে, ৪ ডিসেম্বর পাক-হানাদার মুক্ত হয় কুষ্টিয়ার খোকসা। ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে পরাজয় ঘটে পাকিস্তানিদের। সেদিন, হাজার হাজার মানুষ মুক্ত খোকসার রাস্তায় বের হয়ে আসেন। খোকসা থানায় বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন খোকসা জানিপুর পাইলট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আলতাফ হোসেন।
এছাড়াও, একই দিনে মুক্ত হয় চাঁদপুরের মতলব। মুক্তিযোদ্ধা এবং সর্বস্তরের জনগণের প্রবল প্রতিরোধের মুখে ৪ ডিসেম্বর দখলদার বাহিনী নদীপথে মতলব ছাড়তে বাধ্য হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মতলবে ১৮ জন শহীদ হন।
এদিকে, উলিপুর হানাদার মুক্তদিবস আজ। ১৯৭১ সালের আজকের দিনে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর প্রবল প্রতিরোধের মুখে উলিপুুর ছেড়ে পালিয়ে যায় পাকিস্তানি শত্রুবাহিনী।
৭১-এর এই দিনে ৬ ও ১১ নম্বর সেক্টর যৌথ আক্রমণ চালায় উলিপুরে অবস্থানরত হানাদার ক্যাম্পে। উলিপুরের ডাক বাংলায় পাকবাহিনী শক্ত অবস্থান গেড়েছিল। তিনটি দিক থেকে আক্রমণ চালানো হয় পাকবাহিনীর শক্ত অবস্থানের উপর। মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়টাতে স্থানীয় সাধারণ মানুষের উপর অকথ্য নির্যাতন, বিভৎস টর্চার, ধর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল এই ডাক বাংলা ক্যাম্প। আকস্মিক ত্রিমুখী আক্রমণে হকচকিয়ে ওঠে ক্যাম্প, কিছুক্ষণ পাল্টা আক্রমণ চালালে গুলিবিদ্ধ হন চাঁদ কোম্পানীর চৌকস যোদ্ধা আব্দুর রহিম মন্ডল (পরবর্তীতে শহীদ হন)।
শেষ পর্যন্ত আক্রমনের প্রবলতায় টিকতে না পেরে ৪ ডিসেম্বর উলিপুর ছেড়ে পালিয়ে যায় হানাদার বাহিনী। মুক্ত হয় উলিপুর।
ইখা