আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের সার্বিক প্রস্তুতি জানাতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে আজ সাক্ষাৎ করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
এদিনই জাতির উদ্দেশ্যে সিইসির একটি ভাষণ রেকর্ড করা হবে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে। এই ভাষণেই ভোটের তফসিল ঘোষণা হবে।
নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ জানান, বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সন্ধ্যায় অথবা বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) তফসিল ঘোষণা করা হবে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, ভাষণ রেকর্ড করা হলেও আজ তফসিল ঘোষণার সম্ভাবনা কম। বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণা করতে যাচ্ছে ইসি। আর ভোটগ্রহণের সম্ভাব্য দিন ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারির যে কোনো একদিন। এ বিষয়ে তিনজন নির্বাচন কমিশনারের কাছে জানতে চাইলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে একটি নির্বাচিত সরকার গঠন হতে যাচ্ছে। পাশাপাশি গণভোটের রায়ে নির্ধারিত হতে যাচ্ছে সংবিধানসহ রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবের ভবিষ্যৎ। ইতোমধ্যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার অন্যান্য সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ করে এনেছে ইসি। এরই অংশ হিসাবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং প্রধান বিচারপতির সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন সিইসি।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তফসিল ঘোষণার আগের প্রস্তুতিগুলো যাচাই করতে দফায় দফায় বৈঠক করেন সিইসি ও নির্বাচন কমিশনাররা। এদিন নির্বাচনের প্রধান আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনীর গেজেট জারি হয়। তবে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা এবং নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার সংশোধনীর গেজেট গতকাল রাত পর্যন্ত জারি হয়নি।
তফসিল ঘোষণা করতে ইসির সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে বলে জানান নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। তফসিল ঘোষণা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। তফসিল ঘোষণার জন্য যে প্রস্তুতি প্রয়োজন, সব প্রস্তুতি গ্রহণ করে রেখেছে ইসি।’
আসন বিন্যাস, আইন অনুযায়ী রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার যারা থাকবেন তাদের প্রজ্ঞাপন, বিভিন্ন বিষয়ে ২০টির মতো পরিপত্র জারি হবে। সেখানে মোবাইল কোর্ট, ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ, ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটি নিয়োগ, বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ, মনিটরিং সেল গঠন, আইনশৃঙ্খলার সেল গঠন এগুলোর ফরম্যাটগুলো রেডি রয়েছে। তফসিল ঘোষণার পরপর সেগুলো ধারাবাহিকভাবে জারি করা হবে বলে জানান এই কমিশনার।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা এবং নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার সংশোধনীর গেজেট দ্রুত জারি হয়ে যাবে।’
এদিকে, একটি উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য দেশের মানুষ অপেক্ষা করছেন বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ও ইসির সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী।
তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় নির্বাচন কমিশন ভোটের জন্য প্রস্তুত। রাজনৈতিক দলগুলোও প্রস্তুত। তারা অনেক দিন ধরে নির্বাচন চাইছে। এখন একটি ভালো ভোট হলে তা সবার জন্য সুখকর হবে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী পরিবেশ অনুকূল থাকলে অনেক চ্যালেঞ্জই সহজ হয়ে যাবে। দলগুলো ও প্রার্থীরা আচরণবিধি অনুসরণ না করলে ইসির চ্যালেঞ্জ বাড়বে। তফসিলের পর পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয় সেটি দেখার বিষয়।’
ইসি সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৮৩ জন। দেশে ভোটকেন্দ্র ৪২ হাজার ৭৬৬টি ও ভোটকক্ষ দুই লাখ ৪৫ হাজার ১৯৫টি। জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়ায় এবার একই ভোটকক্ষে দুটি করে ভোট দেওয়ার স্থান নির্মাণ করা হচ্ছে। যেসব ভোটকক্ষে দুটি গোপন স্থান নির্মাণের অবকাঠামো সুবিধা নেই সেসব কেন্দ্রে বাড়তি ভোটকেন্দ্র করা হবে। এই হিসাবে নির্বাচনে ভোটকক্ষের সংখ্যা আরও বাড়বে।
নির্বাচনে অন্যান্য প্রস্তুতির মধ্যে এ কমিশন নতুন রাজনৈতিক দল ও পর্যবেক্ষক নিবন্ধন, আইন সংস্কার, সীমানা পুনর্নির্ধারণ, রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ, ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও প্রবাসীদের সুবিধার্থে আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতি চালু করেছে ইসি। সীমানা নির্ধারণ নিয়ে আদালতে ৩০টির বেশি রিট থাকলেও নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা নিয়ে জটিলতা দেখছে না কমিশন।
ইখা