চট্টগ্রামের যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের আঞ্চলিক কার্যালয়ের কম্পিউটার অপারেটর মো. জাহিদুল ইসলামকে ঘিরে একের পর এক অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।
নতুন কোম্পানি নিবন্ধন থেকে নাম ছাড়পত্র, শেয়ার ট্রান্সফার, নবায়ন কিংবা কোম্পানি বন্ধ করা, অধিকাংশ ফাইলের গতি নির্ধারণ নাকি তার ‘অনুমতি ও নির্দেশের ওপর নির্ভরশীল’।
কার্যালয়ে সেবা নিতে যাওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, জাহিদুল ইসলামকে ‘বিশেষ সুবিধা’ দিতে না পারলে ফাইল দীর্ঘদিন আটকে থাকে। দ্রুত কাজ চাইলে অতিরিক্ত অর্থ দাবি করা হয় বলেও জানান তারা।
একজন সেবাপ্রার্থী বলেন, ‘ফাইলের গতির ওপর তার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ। টাকা দিলে কাজ হয়, না দিলে মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয়।’
২০২১ সালের শেষ দিকে এক নারী উদ্যোক্তার মালিকানাধীন কোম্পানির শেয়ার তার অজান্তে অন্য ব্যক্তির নামে ট্রান্সফার হওয়ার অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে বিভাগীয় পর্যায়ে তদন্ত শুরু হয়। তবে সূত্র মারফত জানা গেছে, তদন্ত শুরুর পর জাহিদুল ইসলামের আচরণে ‘অস্বাভাবিক পরিবর্তন’ দেখা যায় এবং তিনি দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন।
জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে আরও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে খালেক কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডকে কেন্দ্র করে। আট অংশীদারের মধ্যে মাত্র তিনজনের মতামত নিয়ে কোম্পানি বন্ধের নথি প্রস্তুত করা হয় বলে দাবি করেছেন একজন অংশীদার।
তিনি আদালতে নালিশি মামলা করে জানান, ২০১৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর একটি ভুয়া সাধারণ সভার নথি তৈরি করা হয় এবং সেখানে তার পরিবারের স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। মামলার নথিতে এসব অনিয়মে জাহিদুল ইসলামের সম্পৃক্ততার অভিযোগও অন্তর্ভুক্ত।
অভিযোগকারীরা আরও দাবি করেছেন, কয়েক বছরের ব্যবধানে জাহিদুল ইসলাম বহদ্দারহাটে ফ্ল্যাট, ঢাকায় জমি এবং বাড়ি নির্মাণসহ বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। এছাড়া পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ পদেও বসানো হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের।
এ বিষয়ে জানতে চেয়ে মো. জাহিদুল ইসলামকে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ কল দিলেও তার কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
একই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপনিবন্ধক মো. রকিবুল ইসলাম বলেন, ‘খালেক কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেড সংক্রান্ত মামলা আদালতে প্রক্রিয়াধীন। পিবিআইকে মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিভাগীয় পর্যায়েও প্রয়োজনীয় যাচাই–বাছাই চলছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে ‘
ব্যবসায়ীদের দাবি, সরকারি সেবা যেখানে সহজ ও স্বচ্ছ হওয়ার কথা, সেখানে একজন নিম্নপদস্থ কর্মচারীর ক্ষমতার অপব্যবহারে সেবাগ্রহীতারা ভোগান্তিতে পড়ছেন। তাদের ভাষ্য, ‘সরকারি কার্যালয়ে যদি এমন অঘোষিত নিয়ন্ত্রণ থাকে, তবে উদ্যোক্তা বান্ধব পরিবেশ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।’
আরডি