সম্প্রতি পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদ চত্বরে মা কুকুরের ৮টি ছানাকে বস্তা বন্দি করে পুকুরে ডুবিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে একজন সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শহর জুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ফেসবুক জুড়ে বইছে সমালোচনা। সেইসাথে জড়িতকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি করা হয়েছে।
গত রবিবার (১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পর পরিষদ চত্বরের আবাসিক এলাকায় গেজেটেড ভবনে বসবাসরত ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা খন্দকার হাসানুর রহমানের স্ত্রী নিশি বেগম কর্তৃক অমানবিকভাবে ৮টি কুকুর ছানা ডুবিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
দেশের প্রচলিত আইনে তো বটেই, ইসলামের দৃষ্টিতেও এমন ঘটনা একটি গুরুত্বর অপরাধ। পশু-পাখির অধিকার ও অন্যায় ভাবে তাদের হত্যা নিয়ে কি বলা আছে ইসলামে।
রাসুল (স) বলেন, “কোন পশুর প্রতি যদি কেউ দয়া দেখায়, তাহলে সে যেন কোন মানুষের প্রতি দয়া দেখাল, আর কোন পশুর উপর যদি কেউ নির্যাতন করে তাহলে যেন সে কোন মানুষের প্রতি নির্যাতন করলো।” [মিশকাত আল মাসাবিহ]
মহানবী (স) এর এই হাদিসটি থে স্পষ্টভাবেই বুঝা যাচ্ছে যে তিনি পুশুদের অধিকার কোনভাবেই মানুষের অধিকার থেকে খাটো করে দেখেননি। এমনকি মহান আল্লাহ কোরয়ানেও গুরুত্বের সাথে পশু অধিকার নিয়ে কথা বলেছেন।
পবিত্র কোরআনের ৬ নম্বর সুরার নাম করণ করা হয়েছে ‘সুরা আন’আম’ যার অর্থ ‘গৃহপালিত পশু’। এই সুরায় আল্লাহ বিষদভাবে বর্ণনা করেছেন পশুপাখির প্রতি মানুষের করণীয় নিয়ে। সুরার ৩৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, “পৃথিবীতে বিচরণকারী সমস্ত জীব এবং আকাশে ডানা ঝাপটে উড়া পাখিরাও তোমাদের মতই সম্প্রদায়। কিতাবে কোনকিছুই আমি বাদ দেইনি। অতঃপর স্বীয় প্রতিপালকের দিকে তাদেরও একত্র করা হবে।” [সুরা আন’আম, আয়াত-৩৮]
এই আয়াত ও হাদিসের বিভিন্ন বর্ণা থেকে পাওয়া যায় যে, যদিও মানুষ ও জ্বিন ছাড়া অন্য প্রাণিদের পরকাল নেই, তবুও কেয়ামতের দিন সব পশুপাখিদেরও পুনঃজীবিত করা হবে। সেদিন শোনা হবে তাদের অভিযোগ ও ফরিয়াদ। অর্থাৎ, যদি কেউ দুনিয়ায় তাদের সাথে খারাপ আচরণ করে, তাদের কষ্ট দেয়, হত্যা করে তার ন্যায় বিচার তারা পাবে আবার যদি কেউ তাদের প্রতি মায়া দেখায়, খাবার দেয় বা যত্ন করে, তার প্রতিদানও পাবে।
এছাড়াও মহানবী (স) এর দুইটি বিখ্যাত হাদিস রয়েছে পশু অধিকার নিয়ে। আবু হোরায়রা (র) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স) বলেন, “একবার এক পতিতা একটা কুয়ার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি দেখলেন পাশেই একটা কুকুর পিপাসায় মৃতপ্রায় অবস্থায় পরে আছে। তার মায়া হয়। তিনি নিজের জুতা খুলে তা তার মাথার কাপড়ের সাথে বেধে কুয়া থেকে পানি উঠিয়ে কুকুরটাকে খাওয়ান। আর তার এই কাজের জন্য আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করেন।” [সহীহ বুখারি ৩৩২১] অর্থাৎ আল্লাহ’র সৃষ্টি এক প্রাণীর প্রতি দয়া দেখানোর কারণে ওই নারীর সারা জীবনের গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন ও তাঁকে জান্নাত দান করেছেন।
আবার বিপরীত একটা হাদিসও আছে। আবু হোরায়রা (র) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স) বলেন, “একজন মহিলা জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করেছে একটি বিড়ালের জন্য। সে বিড়ালটিকে বন্দি করে রেখেছিল। তাঁকে খেতেও দেয়নি, খাবার খোঁজার জন্য ছেড়েও দেয়নি, যতক্ষণ না বিড়ালটি মারা যায়।” [সহীহ মুসলিম ২৬১৯]
উল্লেখিত আয়াত ও হাদিস থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার যে, ইসলামে প্রাণিদের অধিকার কোনভাবেই মানুষের অধিকার থেকে খাট করে দেখা হয়নি। যদি কেউ কোন পশু-পাখির প্রতি দয়া দেখান, শেষ বিচারের দিন আল্লাহও তার প্রতি দয়া দেখাবেন। কিন্তু যদি কেউ পশু-প্রাণির সাথে নির্মম আচরণ করেন, আল্লাহও তার সঠিক বিচার করবেন। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে বুঝার তৌফিক দিক।
এইচএ